রোদন-হাসিতে রুদ্র

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

দ্রোহ, প্রেম, তারুণ্য—এই তিন চেতনাকে কাব্যস্পর্শীকারকের এক নাম রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে প্রতিভাবান এই কবি মৃত্যুবরণ করেন।

কবির জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশালে। শৈশব কেটেছে বাগেরহাটের মিঠেখালি গ্রামে। ১৯৭৩ সালে ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হন। আর ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং ১৯৮৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

খুব ছোট বয়সেই তাঁর লেখালেখির জগতে প্রবেশ ঘটে। লেখালেখির নেশা গড়াতে নানির ট্রাংক থেকে টাকা চুরি করে ভাইদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘বনফুল’ নামক লাইব্রেরি। সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি প্রবল আগ্রহই তাঁকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নেন কিশোর রুদ্র। একাত্তরে তাঁর মা তাঁকে যুদ্ধে যেতে বাধা দিলে চারপাশের হাহাকার, দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ তাঁকে দারুণভাবে নাড়িয়ে তোলে। ২৬ নভেম্বর দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘আমি ঈশ্বর আমি ভগবান’ শীর্ষক কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর সাহিত্যজগতে প্রবেশের শুরু। এরপর একের পর এক কবিতার মাধ্যমে তিনি পাঠকের দ্বারে নানা ঢঙে তুলে ধরেছেন তারুণ্যের নির্যাস, প্রেমের মোহময়তা ও বিদ্রোহের প্রতিধ্বনি। তাঁর নিজস্ব বানানরীতি ও অনন্য কাব্যশৈলী ক্রমে এ দেশের পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে এসেছে। তিনি ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা।

পরবর্তী সময়ে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ গান রচনা ও সুরদানে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর রচিত বিখ্যাত গান ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯৭ সালে গানটি তাঁকে এনে দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির শ্রেষ্ঠ গীতিকারের সম্মাননা (মরণোত্তর)। গীতিকার হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়ার পর ১৯৮৯ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘অন্তর বাজাও’ নামে সংগীত দল।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর অসাধারণ কাব্যসৃষ্টির মধ্যে ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ (কাব্যনাট্য), ‘এক গ্লাস অন্ধকার’ (কাব্যনাট্য), ‘ছোবল’, ‘বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে’, ‘পাঁজরে পুষ্পের ঘ্রাণ’, ‘মানুষের মানচিত্র’, ‘গল্প’, ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ উল্লেখযোগ্য।

এই কবির অসাধারণ সৃষ্টিবৈচিত্র্য তাঁর কবিতায় এনে দিয়েছে প্রথাগত কাব্যনীতির বিরোধিতা ও চেতনার সহজবোধ্যতা। জীবনের শেষ সময়ে তিনি পাকস্থলীর আলসারজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। ১৯৯১ সালের ২১ জুন নিজ বাসায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। খুবই সীমিত পরিসরের এই জীবনে তিনি তাঁর মনন, বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গি ও আত্মোপলব্ধির সবটাই অনন্য সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন।


লেখক: এইচএসসি পরীক্ষার্থী, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস কলেজ, ঢাকা