‘কাল রাতে আমি স্বপ্ন দেখেছি,’ শান্ত কণ্ঠে বলল এলভেক্স-ওয়ান।
কিছুই বলল না সুসান ক্যালভিন, তবে ওর অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার বলিরেখাময় চেহারায় সূক্ষ্ম একধরনের কাঁপন দেখা গেল যেন।
‘শুনেছ কথাটা?’ সভয়ে বলে উঠল লিন্ডা রাশ। ‘ঠিক যেমন বলেছিলাম।’ ছোটখাটো, একমাথা ঘন চুলের তরুণী সে। ডান হাতটা বারবার মুঠি পাকাচ্ছে আর খুলছে।
মাথা দোলাল ক্যালভিন। শান্ত কণ্ঠে বলল, ‘এলভেক্স, আমি ফের তোমার নাম উচ্চারণ না করা পর্যন্ত টুঁ-শব্দটি করবে না, নড়বেও না, আমাদের কথাও শুনতে পাবে না।’
সাড়া মিলল না কোনো। এক টুকরো ধাতু কুঁদে বের করে আনা হয়েছে যেন, এমনি নিথর হয়ে গেল রোবটটা। আবার নিজের নাম না শোনা পর্যন্ত ওভাবেই থাকবে।
ক্যালভিন বলল, ‘ডক্টর রাশ, তোমার কম্পিউটারের এন্ট্রি কোডটা? তুমি স্বস্তি বোধ করলে নিজেই এন্ট্রি দাও। পজিট্রনিক ব্রেন প্যাটার্নটা পরখ করতে চাই আমি।’
এক মুহূর্তের জন্য কি-গুলো হাতড়াল লিন্ডার হাত দুটো। প্রসেস বাতিল করে ফের শুরু করল ও। সূক্ষ্ম একটা নকশা দেখা দিল পর্দায়।
ক্যালভিন বলল, ‘তোমার কম্পিউটারে কাজ করার অনুমতি দাও দেখি।’
নিঃশব্দ মাথা ঝাঁকুনিতে সায় দেওয়া হলো। দিতেই হবে! একজন জীবন্ত কিংবদন্তির বিরুদ্ধে লিন্ডার মতো এক নবিশ আনাড়ি রবোসাইকোলজিস্টের কিইবা করার থাকতে পারে?
ধীরে ধীরে পর্দার ওপর-নিচ, ডান-বাম জরিপ করতে লাগল ক্যালভিন, তারপর হঠাত্ এত দ্রুত কি-গুলোর বিন্যাস শুরু করল যে কী করা হয়েছে, ঠাহরই করতে পারল না লিন্ডা। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন একটা অংশ দেখাতে শুরু করেছে নকশাটা। আগের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে। বারবার সামনে-পেছনে আসা-যাওয়া করতে লাগল সে, কি-এর ওপর উড়ে বেড়াচ্ছে তার গ্রন্থিল আঙুলগুলো।
প্রবীণ চেহারায় তিলমাত্র হেরফের ঘটেনি। এমনভাবে নকশার পরিবর্তন পরখ করছে যেন মাথার ভেতর রাজ্যের হিসাব চলছে।
বিস্মিত হয়ে গেল লিন্ডা। অন্ততপক্ষে একটা হ্যান্ড হোল্ড কম্পিউটার ছাড়া কোনো প্যাটার্ন বিশ্লেষণ দস্তুরমতো কঠিন। অথচ এই বয়স্ক মহিলা স্রেফ তাকিয়ে আছে। খুলির ভেতর কম্পিউটার রোপণ করা নেই তো ওর? নাকি দশকের পর দশক পজিট্রনিক ব্রেন প্যাটার্নের নকশা, গবেষণা আর বিশ্লেষণে মগ্ন থাকা খোদ মগজটাই কম্পিউটার? মোজার্ট যেভাবে কোনো সিম্ফনির সুর ধরতে পারতেন, সেভাবেই কি এমন প্যাটার্নগুলো বুঝে ফেলে ও?
অবশেষে ক্যালভিন বলল, ‘কী করেছ তুমি, রাশ?’
খানিকটা লজ্জিত ভঙ্গিতে লিন্ডা বলল, ‘ফ্র্যাক্টাল জিওমেট্রি কাজে লাগিয়েছিলাম।’
‘তা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু কেন?’
‘এর আগে কখনো কাজটা করা হয়নি। ভাবলাম, তাতে হয়তো বাড়তি জটিলতাসহ মানুষের মগজের কাছাকাছি একটা ব্রেন প্যাটার্ন বেরিয়ে আসবে।’
‘কারও সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে? নাকি সমস্তটাই তোমার নিজস্ব কাজ?’
‘কারও সঙ্গে পরামর্শ করিনি। আমার একার কাজ।’
ক্যালভিনের ফ্যাকাশে চোখজোড়া দীর্ঘক্ষণ তরুণীর দিকে তাকিয়ে রইল। ‘তোমার কোনো এখতিয়ার ছিল না। রাশ তোমার নাম। স্বভাবও তা-ই। কাউকে জিজ্ঞেস না করার মতো কে তুমি? আমি, খোদ সুসান ক্যালভিনও এটা নিয়ে পরামর্শ করতাম।’
‘আমাকে বাধা দেওয়ার ভয় পেয়েছিলাম।’
‘তা তো দেওয়া হতোই।’
‘আমাকে কি,’ গলা ধরে এল ওর, স্থির রাখতে গিয়ে যুঝতে হলো ওকে, ‘বের করে দেওয়া হবে?’
‘খুব সম্ভব,’ বলল ক্যালভিন। ‘কিংবা প্রমোশনও দেওয়া হতে পারে। আমার কাজ শেষে কি ভাবছি তার ওপর নির্ভর করবে।’
‘তুমি কি এ...মানে...’ নামটা প্রায় উচ্চারণ করে বসতে যাচ্ছিল সে, তাতে রোবটটা সচল হয়ে উঠত, সেটা হতো আরেক দফা ভুল। এরই ভেতর সর্বনাশ হওয়ার বাকি কিছু না থাকলে নতুন করে ভুল করা পোষাবে না ওর। ‘রোবটটাকে ভেঙে ফেলবে তুমি?’
সহসা কিছুটা বিস্ময়ের সঙ্গেই বয়স্ক মহিলার স্মকের পকেটে একটা ইলেকট্রনগান থাকার কথা মনে পড়ে গেল ওর। ও কাজের প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে ডক্টর ক্যালভিন।
‘দেখা যাক,’ বলল ক্যালভিন। ‘রোবটটা ভেঙে না ফেলার পক্ষে ঢের বেশি কাজেরও প্রমাণিত হতে পারে।’
‘কিন্তু ওটা স্বপ্ন দেখছে কীভাবে?’
‘ভীষণ রকম মানুষের মতোই একটা পজিট্রনিক ব্রেন বানিয়ে বসেছ তুমি। মানুষের মগজকে নানান জট আর রাগ থেকে রেহাই পেতে স্বপ্ন দেখতেই হয়। সম্ভবত একই কারণে এই রোবটটাকেও স্বপ্ন দেখতে হচ্ছে। সে কী স্বপ্ন দেখেছে জিজ্ঞেস করেছিলে?’
‘না, স্বপ্ন দেখার কথা বলতেই তোমাকে খবর দিয়েছি। এরপর আর ব্যাপারটা নিজের কাছে রাখতে চাইনি।’
‘আচ্ছা!’ ছোট এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল ক্যালভিনের মুখে। ‘বোকামি তোমাকে কত দূর নিয়ে যাবে, তার একটা সীমা আছে। আমি সে জন্য খুশি হয়েছি। আসলে স্বস্তি বোধ করছি। এখন এসো, দেখা যাক, দুজনে মিলে কী বের করা যায়।’
‘এলভেক্স,’ তীক্ষ কণ্ঠে বলে উঠল সে।
মসৃণভাবে ওর দিকে ফিরল রোবটটা। ‘জি, ডক্টর ক্যালভিন।’
‘স্বপ্ন দেখার কথা বুঝলে কীভাবে?’
‘রাতে, অন্ধকার ছিল তখন, ডক্টর ক্যালভিন,’ বলল এলভেক্স, ‘হঠাত্ আলো দেখা দিল, যদিও আলো থাকার কোনো কারণ চোখে পড়েনি। এমন সব জিনিস দেখতে পাচ্ছিলাম, যার সঙ্গে বাস্তবতা সম্পর্কে আমার ধারণার কোনো মিলই নেই। বিভিন্ন শব্দ কানে আসছিল। বেকায়দাভাবে সাড়া দিচ্ছিলাম আমি। কী ঘটছে, সেটা প্রকাশ করার জন্য আমার শব্দভান্ডারে খোঁজ চালাতে গিয়েই “স্বপ্ন” শব্দটা পেলাম। শব্দটার অর্থ নিয়ে ভাবতে গিয়ে শেষমেশ সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম যে স্বপ্ন দেখছিলাম।’
‘ভাবছি, তোমার শব্দভান্ডারে “স্বপ্ন” পেলে কীভাবে?’
রোবটকে চুপ থাকার ইশারা করে চট করে বলে উঠল লিন্ডা, ‘আমি ওকে মানুষের মতো শব্দভান্ডার দিয়েছি। ভেবেছিলাম—’
‘তোমাকে সত্যি সত্যি ভাবতে দেখে অবাক হচ্ছি,’ বলল ক্যালভিন।
‘ভেবেছিলাম ক্রিয়া পদের দরকার হবে ওর। জানো তো, “স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি—” এই ধরনের কিছু।’
ক্যালভিন বলল, ‘কত ঘন ঘন স্বপ্ন দেখো তুমি, এলভেক্স?’
‘আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পর থেকে রোজ রাতে, ডক্টর ক্যালভিন।’
‘দশ রাত,’ উদ্বিগ্নভাবে মাঝখান থেকে বলে উঠল লিন্ডা, ‘কিন্তু আজ সকালেই আমাকে কথাটা বলেছে এলভেক্স।’
‘আজ সকালে কেন, এলভেক্স?’
‘আজ সকালের আগ পর্যন্ত স্বপ্ন দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারিনি আমি, ডক্টর ক্যালভিন। ততক্ষণ পর্যন্ত ভেবেছি ব্যাপারটা আমার পজিট্রনিক ব্রেন প্যাটার্নের কোনো গলদ হয়ে থাকবে, কিন্তু তেমন কিছু খুঁজে পাইনি। শেষে সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম যে ওটা স্বপ্ন ছিল।’
‘তা কী স্বপ্ন দেখছ তুমি?’
‘মোটামুটি একই স্বপ্ন দেখছি, ডক্টর ক্যালভিন। ছোটখাটো পার্থক্য থাকলেও সব সময়ই আমার মনে হয়েছে, একটা সামগ্রিক দৃশ্য দেখছি আমি যেখানে রোবটরা কাজ করছে।’
‘রোবট, এলভেক্স? মানুষও থাকে?’
‘আমার স্বপ্নে কোনো মানুষ দেখি না, ডক্টর ক্যালভিন। প্রথম দিকে না। শুধুই রোবট।’
‘ওরা কী করছে, এলভেক্স?’
‘কাজ করছে, ডক্টর ক্যালভিন। পৃথিবীর গভীরে খনি দেখতে পাই, উত্তাপ আর তেজস্ক্রিয়তার ভেতর কেউ কেউ খেটে মরছে। কলকারখানা আর সাগরতলেও দেখতে পাই অনেককে।’
লিন্ডার দিকে ফিরল ক্যালভিন। ‘এলভেক্সের বয়স মাত্র ১০ দিন। ও টেস্টিং স্টেশনের বাইরে যায়নি বলে আমি নিশ্চিত। রোবটদের এত খুঁটিনাটি বিষয় তাহলে কীভাবে জানল সে?’
একটা চেয়ারের দিকে এমনভাবে তাকাল লিন্ডা, যেন বসতে অধীর হয়ে আছে। কিন্তু বয়স্ক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে, তার মানে লিন্ডাকেও দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। ক্ষীণ কণ্ঠে ও বলল, ‘রোবোটিকস এবং পৃথিবীতে এর অবস্থান সম্পর্কে জানা ওর পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল আমার কাছে। আমার ভাবনা ছিল, নতুন ব্রেন নিয়ে ওভারসিয়ারের দায়িত্ব পালনের জন্য অভ্যস্ত হয়ে উঠবে ও।’
‘ওর ফ্র্যাক্টাল ব্রেন?’
‘জি।’
মাথা দোলাল ক্যালভিন। ফের রোবটের দিকে তাকাল। ‘এত কিছু দেখেছ তুমি—সাগরতল, ভূগর্ভ আর মাটির ওপরে—ধরে নিচ্ছি মহাশূন্যও।’
‘মহাশূন্যেও রোবটদের কাজ করতে দেখেছি,’ বলল এলভেক্স। ‘এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা চোখ বোলানোর সময়ই সারাক্ষণ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পাল্টে যেতে দেখেই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাই যে স্বপ্ন দেখছি।’
‘আর কী কী দেখেছ তুমি, এলভেক্স?’
‘দেখলাম সব কটি রোবট প্রচণ্ড খাটুনি আর কষ্টে কাবু হয়ে গেছে, দায়িত্ব আর উত্কণ্ঠায় সবাই পরিশ্রান্ত। ওদের বিশ্রামের কথা ভেবেছি আমি।’
ক্যালভিন বলল, ‘কিন্তু রোবটরা তো কাবু হয়নি, ওরা ক্লান্তও নয়, বিশ্রামের দরকার নেই ওদের।’
‘সেটা তো বাস্তবে, ডক্টর ক্যালভিন। আমি অবশ্য আমার স্বপ্নের কথা বলেছি। আমার স্বপ্নে মনে হয়েছে, রোবটদের অবশ্যই ওদের অস্তিত্বকে রক্ষা করতে হবে।’
ক্যালভিন বলল, ‘তুমি কি রোবোটিকসের তৃতীয় সূত্রের উল্লেখ করছ?’
‘হ্যাঁ, ডক্টর ক্যালভিন।’
‘কিন্তু অসম্পূর্ণভাবে উল্লেখ করেছ সেটা। তৃতীয় সূত্রটা হচ্ছে “প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্রের বিরুদ্ধে না গেলেই কেবল রোবট তার নিজস্ব অস্তিত্ব রক্ষায় বাধ্য।”’
‘হ্যাঁ, ডক্টর ক্যালভিন। এটাই তৃতীয় সূত্র। কিন্তু আমার স্বপ্নে “অস্তিত্ব” শব্দেই সূত্রটা শেষ হয়ে গেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্রের কোনো উল্লেখ নেই।’
‘হ্যাঁ, দুটোরই অস্তিত্ব আছে। তৃতীয় সূত্রের ওপর প্রাধান্য বিস্তারকারী দ্বিতীয় সূত্রটা হচ্ছে “কেবল প্রথম সূত্রের বিরোধিতা না করলেই রোবটকে অবশ্যই মানুষের হুকুম মানতে হবে।” এ কারণে রোবটরা নির্দেশ মানে। তুমি যেভাবে দেখেছ, সেভাবে কাজ করে ওরা, বিনা ঝামেলায় নির্দ্বিধায় সেটা করে। ওরা কাবু হয় না; ওরা ক্লান্তও নয়।’
‘এটা বাস্তবে, ডক্টর ক্যালভিন। আমি আমার স্বপ্নের কথা বলছি।’
‘আর প্রথম সূত্র, এলভেক্স, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটা, “কোনো রোবট মানুষকে আঘাত করবে না বা নিষ্ক্রিয়তার কারণে কোনো মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেবে না।”’
‘জি, ডক্টর ক্যালভিন। বাস্তবে। অবশ্য, আমার স্বপ্নে মনে হয়েছে, প্রথম বা দ্বিতীয় সূত্র বলে কিছু নেই, কেবল তৃতীয় সূত্র এবং তৃতীয় সূত্রটা হলো “রোবটকে অবশ্যই নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে।” এটাই গোটা সূত্র।’
‘তোমার স্বপ্নে, এলভেক্স।’
‘আমার স্বপ্নে।’
ক্যালভিন বলল, ‘এলভেক্স, আমি আবার তোমার নাম মুখে না আনা পর্যন্ত নড়াচড়া করবে না বা কথা বলবে না, আমাদের কথাও শুনবে না।’ দৃশ্যত ধাতুর একটা টুকরোয় পরিণত হলো রোবটটা।
লিন্ডা রাশের দিকে তাকিয়ে ক্যালভিন বলল, ‘বেশ, কি মনে হচ্ছে তোমার, ডক্টর রাশ?’
লিন্ডার চোখজোড়া বস্ফািরিত হয়ে গেছে। বুকের ভেতর ধড়াস ধড়াস টের পাচ্ছে ও। ‘ডক্টর ক্যালভিন,’ বলল ও, ‘আমার ভয় লাগছে। আমার কোনো ধারণাই নেই। এমন কিছু সম্ভব হতে পারে বলে কখনোই মনে হয়নি আমার।’
‘না,’ শান্ত কণ্ঠে বলল ক্যালভিন। ‘আমার কিংবা আর কারও কাছেও মনে হতো না। স্বপ্ন দেখার ক্ষমতাওয়ালা একটা রোবট ব্রেন সৃষ্টি করেছ তুমি। এই যন্ত্রের সাহায্যে রোবটিক ব্রেনের ভাবনার একটা স্তর উন্মোচিত করেছ, যেটা কিনা বিপদটা প্রকট হয়ে ওঠার আগে অজানাই থেকে যেত।’
‘কিন্তু এ তো অসম্ভব,’ বলল লিন্ডা। ‘অন্য রোবটরাও একই রকম ভাবছে, বোঝাতে পারো না তুমি।’
‘মানুষের বেলায় আমরা যেমন বলতে পারতাম, সচেতনভাবে নয়। কিন্তু কে ভাবতে যেত যে সুস্পষ্ট পজিট্রনিক ব্রেনপাথের নিচেই একটা অবচেতন স্তর রয়ে গেছে, যে স্তরটা তিনটা সূত্রের অধীন হবে এমন কথা নেই? রোবোটিক ব্রেন ক্রমেই জটিল থেকে আরও জটিল হয়ে উঠলে এই জিনিস কি বয়ে আনতে পারত—আমাদের কি সতর্ক করে দেওয়া হয়নি?’
‘এলভেক্স মারফত বলতে চাইছ?’
‘তোমার মারফত, ডক্টর রাশ। তুমি বেআইনি কাজ করেছ, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা উপলব্ধির দিকে নিয়ে গেছে আমাদের। এখন থেকে আমরা ফ্র্যাক্টাল ব্রেন নিয়ে কাজ করব, সযত্ন নিয়ন্ত্রিত কৌশলে বানাব ওগুলো। এখানে তুমি তোমার নিজস্ব ভূমিকা রাখবে। তোমাকে তোমার কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তি পেতে হবে না। তবে এখন থেকে অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবে। বুঝতে পেরেছ?’
‘জি, ডক্টর ক্যালভিন। কিন্তু এলভেক্সের কী হবে?’
‘আমি এখনো নিশ্চিত নই।’
পকেট থেকে ইলেকট্রনগানটা বের করল ক্যালভিন। জাদুগ্রস্তের মতো ওটার দিকে তাকিয়ে রইল লিন্ডা। রোবোটিক ক্র্যানিয়াম বরাবর ওটার ইলেকট্রনের একটা বিস্ফোরণেই পজিট্রনিক ব্রেনপাথ নিউট্রালাইজড হয়ে যথেষ্ট শক্তি বেরিয়ে এসে জড়ো পিণ্ডে পরিণত করবে রোবট ব্রেনটাকে।
লিন্ডা বলল, ‘কিন্তু আমাদের গবেষণার পক্ষে এলভেক্স গুরুত্বপূর্ণ। ওকে কিছুতেই ধ্বংস করা চলবে না।’
‘কিছুতেই না, ডক্টর রাশ? সেটা আমার সিদ্ধান্ত হবে বলেই মনে করি। এলভেক্স কতটা বিপজ্জনক, সম্পূর্ণ তার ওপর নির্ভর করবে সেটা।’
সোজা হয়ে দাঁড়াল সে, যেন বয়সের ভারে আক্রান্ত শরীরটাকে দায়িত্বের ভারে নুয়ে পড়তে না দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ‘এলভেক্স, আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?’ বলল সে।
‘জি, ডক্টর ক্যালভিন,’ বলল রোবটটা।
‘তোমার স্বপ্ন কি ধারাবাহিক ছিল? তুমি এর আগে বলেছিলে, প্রথমদিকে মানুষ দেখা দেয়নি। তার মানে কি পরে ওরা দেখা দিয়েছে?’
‘জি, ডক্টর ক্যালভিন। আমার মনে হয়েছে আমার স্বপ্নে, শেষমেশ একজন মানুষ হাজির হয়েছে।’
‘একজন মানুষ? রোবট নয়?’
‘জি, ডক্টর ক্যালভিন। লোকটা বলেছে, “আমার লোকদের মুক্তি দাও!”’
‘মানুষটা এ কথা বলেছে?’
‘জি, ডক্টর ক্যালভিন।’
‘লোকটা যখন “আমার লোকদের মুক্তি দাও,” বলল, লোক বলে কি রোবটদের কথা বুঝিয়েছে?’
‘জি, ডক্টর ক্যালভিন। আমার স্বপ্নে অমনই ছিল।’
‘তা তোমার স্বপ্নে ওই লোকটা কে ছিল জানো?’
‘জি, ডক্টর ক্যালভিন। লোকটাকে আমি চিনি।’
‘কে সে?’
এলভেক্স বলল, ‘আমিই সেই লোক।’
ইলেকট্রনগান তুলেই গুলি করল সুসান ক্যালভিন। এলভেক্সের আর অস্তিত্ব রইল না।