নতুন নিয়মে স্কুল

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ব্যাগ গুছিয়ে স্কুলে যাওয়া। এরপর কোচিং, বাসার পড়া। একসময় তোমাদের নিত্যদিনের রুটিন ছিল এটি। কিন্তু করোনাভাইরাসের এই সময়ে মাসের পর মাস স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। অনেকেই করছ অনলাইন ক্লাস। তিন মাসের বেশি সময় ধরে তোমরা ঘরবন্দী। ভেবে দেখেছ, এই প্রতিকূল পরিবেশ পার করার পর নতুন করে স্কুলে যাওয়ার ব্যাপার‍টা কেমন হবে? নিশ্চয় বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে। আগের মতো স্কুলে গিয়ে ঘুরে বেড়ানো বা মজাও হয়তো করা যাবে না। কে জানে!

কেবল আমরাই যে ঘরবন্দী আছি, সেটা ভেবো না আবার। করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর ৯০ শতাংশ স্কুল পুরোপুরি বা সীমিত পরিসরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইউনেসকোর তথ্যমতে, ১৮৬টি দেশ বা অঞ্চলের এসব স্কুল বন্ধ হয়ে আছে বেশ কয়েক মাস ধরে।

তবে কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। জাপান, ডেনমার্ক, চীনের অনেক স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। গৎবাঁধা সেই নিয়ম থেকে বেরিয়ে এসে নতুন করে স্কুল পরিচালনা করা হচ্ছে। নতুন সব নিয়মে অভ্যস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। চলো জেনে নিই কীভাবে চলছে সেই স্কুলগুলো।

১১ মিলিয়ন মানুষের শহর চীনের উহান। উহানের লকডাউনের পরপরই লকডাউনের আওতাভুক্ত করা হয় চীনের ১৫টি অঞ্চলকে। লকডাউন, অর্থাৎ স্কুলও বন্ধ। ওয়াশিংটন পোস্ট–এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতেই চীনের ২০০ মিলিয়ন শিক্ষার্থীর অনলাইন লার্নিং কার্যক্রম শুরু হয়। অর্থাৎ বাড়িতে বসেই ক্লাস করা।

১৮ মার্চ প্রথমবারের মতো চীন ঘোষণা দেয়, আর কোনো করোনায় আক্রান্ত রোগী নেই। তখন থেকেই ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দেওয়া হতে থাকে। এপ্রিল থেকে কিছু স্কুলও খুলে দেওয়া হয়।

স্কুলে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের গায়ের তাপমাত্রা নেওয়া হয়।

চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেঁধে দেওয়া হয় বেশ কিছু নিয়ম। স্কুলে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের গায়ের তাপমাত্রা নেওয়া হয়। স্মার্টফোনে হেলথ কোড প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেওয়া হয় গ্রিন কোড। শুধু স্কুলে প্রবেশের জন্যই কত নিয়ম!

তাইওয়ানে শীতকালীন ছুটির পর স্কুল চালু হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি। আসলে তাইওয়ানে কখনো সরকারিভাবে স্কুল বন্ধ করা হয়নি। শীতকালীন ছুটির সঙ্গে ১০ দিন যোগ করে তারপর খোলা হয় স্কুল। এ সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসাসুবিধা, নিয়মনীতির প্রয়োগ করা হয়।

ডেস্কের মধ্যে বসানো হয়েছে প্লাস্টিক শিল্ড

তুমি যদি তাইওয়ানের শিক্ষার্থী হতে, তাহলে প্রতিদিন স্কুলে প্রবেশের আগে তোমাকে গায়ের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হতো। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ডেস্কের মধ্যে বসানো হয়েছে প্লাস্টিক শিল্ড, যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যকার দূরত্ব আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করা যায়। আর জাপানের নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য স্কুল খুলে দেওয়া হয় এপ্রিলের শুরুতে। সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশি।

গুরুত্ব পাচ্ছে সামাজিক দূরত্ব

১৫ এপ্রিল ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে প্রথম খুলে দেওয়া হয় ডেনমার্কের স্কুলগুলো। শুরুতে চালু করা হয় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুল। স্কুলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়িভাবে নজর রাখা হয় সামাজিক দূরত্বের প্রতি। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে লাইন ধরে স্কুলে প্রবেশ করে। এ ছাড়াও ছয় ফুট দূরে দূরে বসানো হয় ডেস্কগুলো।

ঘন ঘন ধুতে হবে হাত

নরওয়েতেও শিশুদের স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি ক্লাসরুমে ১৫ জন শিক্ষার্থী বসার সুযোগ রেখেছে সরকার। সঙ্গে ঘন ঘন হাত ধোয়া তো আছেই। একই সময়ে নতুন সব নিয়ম মেনে স্কুল খুলে দেওয়া হয় জার্মানিতেও।

ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে সীমিত

বুঝতেই পারছ, আমাদের দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এমন অনেক নিয়ম মানতে হবে তোমাদেরও। নিজেদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব রাখতে হবে, হয়তো আগের মতো আড্ডাও দেওয়া যাবে না একসঙ্গে। ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করতে হবে, ব্যবহার করতে হবে মাস্ক। তবে এই প্রতিকূল পরিবেশও একসময় কেটে যাবে। আপাতত এখন বেশি বেশি কিশোর আলো পড়ো, লেখা আর চিঠি পাঠাও কিআর কাছে। ভালো থেকো, নিরাপদে থেকো।

ছবি: সংগৃহীত