দ্য গ্রেটেস্ট ডুয়েল অব উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সিরিজ ‘হ্যারি পটার’–এর স্রষ্টা জে কে রাওলিং ১৯৬৫ সালের ৩১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। ঠিক একই তারিখে জন্ম তাঁর লেখা বিখ্যাত চরিত্র হ্যারি পটারেরও। প্রথম বই প্রকাশের পর পেরিয়ে গেছে ২৩ বছর। তবে আজও রাওলিংয়ের কল্পনার উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ডে বুঁদ হয়ে রয়েছেন পৃথিবীর কোটি কোটি ভক্ত। সিরিজের মাত্র সাতটি বই এবং সিনেমাতেই এ জাদুর জগতের বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ নয়। রাওলিংয়ের ওয়েবসাইট ‘উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড’–এ বেশ নিয়মিতই প্রকাশিত হয় এই জাদুর পৃথিবী নিয়ে তাঁর লেখা নতুন তথ্য ও বর্ণনা। ফলে উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগাযোগটা চমৎকারভাবেই ধরে রাখতে পেরেছেন পটার ভক্তরা।

জে কে রাওলিং ও হ্যারি পটারের জন্মদিন উপলক্ষে সে রকম কিছু অজানা তথ্য ও ঘটনা নিয়েই কিশোর আলোর এ আয়োজন।

লর্ড ভল্ডেমর্টের নাম তো তোমরা জানোই। তবে তার উত্থানের আগেও পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর ডার্ক উইজার্ড কে ছিল, তা জানো কি? দীর্ঘদিন সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী ডার্ক উইজার্ড হিসেবে পরিচিত ছিল গিলার্ট গ্রিন্ডেলওয়াল্ড। ভয়াবহতা আর নৃশংসতায় ভল্ডেমর্ট থেকে একেবারে কম ছিল না সে। গ্রিন্ডেলওয়াল্ড ছিল ডর্মস্ট্রাং ইনস্টিটিউটের ছাত্র। স্কুলে পড়ার সময়ই নিজের মেধা এবং ম্যাজিকের প্রমাণ দিয়েছিল সে। কিন্তু ডার্ক ম্যাজিক এবং নানা ক্ষতিকর ম্যাজিক চর্চার কারণে ডর্মস্ট্রাং কর্তৃপক্ষ তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়।

তারপর থেকে ডার্ক ম্যাজিক নিয়ে আরও বেশি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সে। তরুণ বয়সে ব্রিটেনে এসে পরিচয় হয় কিশোর আলবাস ডাম্বলডোরের সঙ্গে। বন্ধুত্ব হতে বেশি সময় লাগেনি দুজনের। কেননা, দুজনেরই ছিল অসাধারণ প্রতিভার জোর আর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দুর্বার নেশা। সেই বন্ধুত্বের সময়েই তারা দুজন মিলে এক পরিকল্পনা করল। ডেথলি হ্যালোজকে জাদুকর সমাজে বলা হয় সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। এর দখল নিতে পারলেই হওয়া যায় সবচেয়ে ক্ষমতাধর জাদুকর। এতে আছে মৃত্যুকে জয় করার মন্ত্র। সেই ডেথলি হ্যালোজ জয়ের নেশায়ই ছুটতে শুরু করল ডাম্বলডোর আর গ্রিন্ডেলওয়াল্ড।

কিন্তু বাদ সাধে আলবাস ডাম্বলডোরের ভাই আবারফোরথ ডাম্বলডোর। তার ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে গ্রিন্ডেলওয়াল্ড। এদিকে ডাম্বলডোর একদিকে ভাইকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে, অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে বন্ধুকেও। একপর্যায়ে তিনজনের এই বাগ্‌বিতণ্ডা গড়ায় ডুয়েলে। ডুয়েলে দুঃখজনকভাবে মারা যায় ডাম্বলডোর ভাইদের বোন আরিয়ানা। ফলাফল হিসেবে গ্রিন্ডেলওয়াল্ড এবং আলবাস ডাম্বলডোরের সম্পর্কে ছেদ পড়ে। আলাদা হয়ে যে যার মতো পথ চলতে শুরু করে তারা।

এ সময়ে গ্রিন্ডেলওয়াল্ড এগোতে থাকে আরও অন্ধকারতম ম্যাজিকের জগতে। নিজের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ নৃশংসভাবে চালাতে থাকে হত্যাযজ্ঞ। নিজের কর্তৃত্ব আরও ভয়ানকভাবে প্রকাশ করতে গড়ে তোলে দুর্ধর্ষ আর্মি। তারা গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের অনুসারী হয়ে ডার্ক ম্যাজিকের মাধ্যমে একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে লাগল।

ডাম্বলডর ভাইদের বোন আরিয়ানা ডাম্বলডর

এদিকে বোনকে হারিয়ে ডাম্বল্ডোর উপলব্ধি করল, শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের চেয়েও মূল্যবান বিষয় পৃথিবীতে রয়েছে। কিন্তু ডেথলি হ্যালোজের নেশা ভুলতে পারেনি গ্রিন্ডেলওয়াল্ড। এল্ডার ওয়ান্ড চুরি করল গ্রিন্ডেলওয়াল্ড। ফলে ক্ষমতার বিবেচনায় তার ধারেকাছে আসার উপায় রইল না কারোরই। প্রায় ৪৫ বছর ধরে নিজের নির্যাতনের ত্রাস ছড়িয়ে বেড়াতে লাগল এই ডার্ক উইজার্ড। তার আগে কেউ এভাবে এত কাল ধরে ডার্ক ম্যাজিকের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পারেনি।

ডাম্বলডর ডার্ক ম্যাজিক থেকে সরে এসে নিজের দক্ষতায় তখন হগওয়ার্টসের ডেপুটি হেডমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব নিল। জনসাধারণের মতামত অনুযায়ী গ্রিন্ডেলওয়াল্ডকে মোকাবিলা করার মতো কেউ থাকলে, সেই একমাত্র ব্যক্তি আলবাস ডাম্বলডর। জনমত তাকে গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের মুখোমুখি হতে চাপ দিতে লাগল। কিন্তু বহু বছর আগে কিশোর বয়সে গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের সঙ্গে শপথ করেছিল ডাম্বলডর, তারা কেউ একে অপরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হবে না। ওই শপথ হয়েছিল ব্লাড প্যাক্টের মাধ্যমে। ব্লাড প্যাক্টে ব্যবহৃত রক্ত আবার শিশিতে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, যেটির দখলে ছিল গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের। তার মানে, ওই শিশি ধ্বংসের আগে ডাম্বলডর মুখোমুখি হতে পারবে না তার পুরোনো বন্ধু। এ কথা তারা দুজন ছাড়া আর কেউই জানে না। অর্থাৎ, বেশ টানাপোড়েনে পড়ে গেল আলবাস ডাম্বলডোর।

হগওয়ার্টসে থাকা অবস্থায় নিউট স্ক্যামান্ডারের শিক্ষক ছিল আলবাস ডাম্বলডর

১৯২৭ সালে হগওয়ার্টসের প্রাক্তন ছাত্র এবং ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্ট অ্যান্ড হোয়্যার টু ফাইন্ড দেম’ বইয়ের লেখক নিউট স্ক্যামান্ডার প্যাক্টের শিশিটি গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের কাছ থেকে এনে দেন ডাম্বলডরকে। তখন ডাম্বলডর ভাবতে থাকে প্যাক্ট ধ্বংস করে গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের মুখোমুখি হওয়ার।

শেষ পর্যন্ত প্যাক্টটি কীভাবে ধ্বংস হয়েছিল, তা জানা যায় না। তবে গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের তাণ্ডব আর সহ্য করতে পারছিল না আলবাস। তাই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়, গ্রিন্ডেলওয়াল্ডকে মোকাবিলা করার। ১৯৪৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় ডাম্বলডোর ও গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের ঐতিহাসিক ডুয়েলটি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলে, এমন ডুয়েল পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি দেখা যাবে না। এর ভয়াবহতা, দুজনের অসাধারণ জাদুর ক্ষমতার প্রদর্শনী এবং দুর্দান্ত দুই উইজার্ডের লড়াই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। জাদুর ঝলকানিতে যেন চোখ ঝলসে যাচ্ছিল সবার।

গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের কাছে সর্বশক্তিশালী এল্ডার ওয়ান্ড থাকার পরও রুদ্ধশ্বাস এই লড়াইয়ে জয় হয় আলবাস ডাম্বলডরের এবং এটাই বোধ হয় আলবাস ডাম্বলডরের জীবনের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্ত। কেননা, এর মাধ্যমেই উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ডকে মুক্ত হয় এক রাহুগ্রাসের হাত থেকে।

ডুয়েলের পর এল্ডার ওয়ান্ডের মালিক হয়ে যায় আলবাস। বন্দী করা হয় গিলার্ট গ্রিন্ডেলওয়াল্ডকে। তাকে পাঠানো হয় নুমেনগ্রাদের জেলে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই নুমেনগ্রাদের জেল গ্রিন্ডেলওয়াল্ডই তৈরি করেছিল। সেখানে শত্রুদের বন্দী করে এনে দিনের পর দিন নির্যাতন চালানো হতো।

গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের পর ধীরে ধীরে উত্থান ঘটে লর্ড ভল্ডেমর্টের। নৃশংসতার ভয়াবহতম রূপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ভল্ডেমর্ট। তবে শেষ পর্যন্ত ডেথলি হ্যালোজ জয়ের নেশায় ভল্ডেমর্টই হত্যা করে গ্রিন্ডেলওয়াল্ডকে। মৃত্যুর আগপর্যন্ত নুমেনগ্রাদের জেলে বন্দী অবস্থায় ছিল ইতিহাসের দ্বিতীয় ভয়ানক ডার্ক উইজার্ড গিলার্ট গ্রিন্ডেলওয়াল্ড।

তথ্যসূত্র: হ্যারি পটার ফ্যানডম উইকি