রেস্তোরাঁয় ইফতারে অফার আনলিমিটেড

বিভিন্ন ইফতার প্যাকেজ নিয়ে ইফতারের অপেক্ষায় রোজাদাররা। ছবিটি ধানমন্ডির আল ফ্রেসকো রেস্তোরাঁ থেকে তোলা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
বিভিন্ন ইফতার প্যাকেজ নিয়ে ইফতারের অপেক্ষায় রোজাদাররা। ছবিটি ধানমন্ডির আল ফ্রেসকো রেস্তোরাঁ থেকে তোলা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

রমজানে বাড়ি বাড়ি ইফতারের দাওয়াত খাওয়ার চল বলতে গেলে এখন উঠেই গেছে। নাগরিক জীবনের চলতি ট্রেন্ড রেস্তোরাঁয় ইফতার পার্টি। রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুডের দোকানগুলোও রমজান উপলক্ষে নানা রকম অফার নিয়ে হাজির হয়েছে। নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে অফুরন্ত পিৎজা, বার্গার, চিকেন ফ্রাই আর কোমল পানীয়র অফার দিচ্ছে অনেক রেস্তোরাঁই। তরুণেরা সেসব ‘আনলিমিটেড’ অফারের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।

রমজান শেষ হতে বাকি আছে আর মাত্র কয় দিন। কিন্তু ইফতারের সময় রেস্তোরাঁগুলোর অবস্থা এখনো জমজমাট। গতকাল মঙ্গলবার ধানমন্ডির রেস্তোরাঁগুলোতে ইফতারের সময় দেখা গেল উপচে পড়া ভিড়। বিকেল পাঁচটার পরেই সেখানে আর বসার জায়গা ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। তরুণদের উপস্থিতি সেখানে সবচেয়ে বেশি। তবে পরিবার নিয়েও ইফতারে এসেছেন অনেকে।

গ্লোরিয়া জিনসের ইফতার অফার। ছবি: প্রথম আলো
গ্লোরিয়া জিনসের ইফতার অফার। ছবি: প্রথম আলো

বিভিন্ন এলাকার রেস্তোরাঁকর্মীরা জানালেন, রমজানের প্রথম দিন থেকেই ইফতার করতে আসছেন ক্রেতারা। কিন্তু ৭-৮ রমজানের পর থেকে দোকানগুলোতে ইফতারের সময় ক্রেতার ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।

রেস্তোরাঁয় ইফতার করা কি শুধুই যুগের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা, নাকি কখনো কখনো প্রয়োজনীয়তাও? কর্মজীবী নারী কাজী তাসনুভা বললেন, ‘আমার কাছে এটা প্রয়োজন। কারণ, আমার বন্ধুবান্ধবের দল অনেক বড়। সবারই ইচ্ছা হয়, এক দিন একসঙ্গে বসে ইফতার করি। কিন্তু জীবন এত ব্যস্ত হয়ে উঠেছে যে কোনো একজনের বাসায় এই আয়োজন করলে তাঁর ওপর খুব চাপ পড়ে যায়। এ জন্য পরিবেশ ভালো আর খেয়েও তৃপ্তি পাব—এমন রেস্তোরাঁয় বসে বন্ধুরা মিলে ইফতার করতে পারলে ভালো হয়।’

কেএফসির ইফতার অফারের বিজ্ঞাপন। ছবি: আবদুস সালাম
কেএফসির ইফতার অফারের বিজ্ঞাপন। ছবি: আবদুস সালাম

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানালেন, তাঁদের একেকজনের বাসা শহরের একেক প্রান্তে। তাই সবার সুবিধা হয়—এমন এক জায়গায় বসে এক দিন সবাই মিলে ইফতার করেছেন। প্রায়ই বন্ধুরা মিলে খাওয়া হয়, কিন্তু রমজানে এক দিন সবাই মিলে ইফতার না করলে কি আর চলে?

কেনাকাটা শেষে রাস্তার যানজট পেরিয়ে বাসায় যেতে যেতে হয়তো পথেই মাগরিবের আজান দিয়ে দেবে। অনেকে তাই কাজ শেষে ধারে-কাছে কোনো রেস্তোরাঁয় বসে ইফতার সারছেন। দেখা গেল, পুরোনো অনেক বন্ধু মিলে ইফতার পার্টির আয়োজন করছেন রেস্তোরাঁগুলোতে। সেই সুযোগে ছোটখাটো একটা পুনর্মিলনীও হয়ে যাচ্ছে তাঁদের। কেউ কেউ আবার বাড়িতে ইফতার করে একঘেয়েমিতে ভুগছেন বলে শখ করে বাইরে আসার কথা জানান।

কেএফসি খিলগাঁও শাখার কর্মী মোহাম্মদ আনোয়ার জানান, কেএফসির সব শাখায় ৬৯৯ টাকায় আনলিমিটেড জিনজার বার্গার ও ১৫০ টাকায় আনলিমিটেড পেপসির অফার চলছে। রমজানে প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলবে এই অফার।

পিৎজা হাটে চলছে আনলিমিটেড পিৎজা আর কোমল পানীয়ের অফার। এটিও ইফতারের সময় থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলবে।

আল ফ্রেসকো রেস্তোরাঁর ইফতার প্যাকেজ। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
আল ফ্রেসকো রেস্তোরাঁর ইফতার প্যাকেজ। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

নাভানা ফুডস লিমিটেডের জুনিয়র এক্সিকিউটিভ আদিল আল নাহিয়ান জানালেন, গ্লোরিয়া জিনস রমজান উপলক্ষে একটিই ইফতার প্ল্যাটার সাজিয়েছে খেজুর, ভেজিটেবল ফ্রাইড রাইস, চিকেন উইংগস, চিকপিস সালসা, গ্রিল চিকেন, পুডিং ও আরও কিছু পদ দিয়ে। একজন নিলে প্ল্যাটারটি কিনতে হবে ৫৫৫ টাকায় আর দুজনের খাবার একসঙ্গে ফরমাশ করলে পাওয়া যাবে ৯৯৯ টাকায়।

রেস্তোরাঁ আল ফ্রেসকো এবার ইফতারের চারটি আলাদা প্ল্যাটার এনেছে। দুটি মেনু সেট করা হয়েছে একজনের জন্য আর যুগলদের জন্য রয়েছে ভিন্ন পদ দিয়ে সাজানো আলাদা দুটি প্ল্যাটার।

এ অ্যান্ড ডব্লিউ দিচ্ছে ৬৫০ টাকায় একটি বার্গারের সঙ্গে আনলিমিটেড চিকেন ফ্রাই, রুট বিয়ার ও যেকোনো ফ্লেভারের এক স্কুপ আইসক্রিম। ইফতারের সময় থেকে শুরু করে এক ঘণ্টা পর্যন্ত চালু থাকবে এই অফার।

এ ছাড়া টিউন অ্যান্ড বাইট, ক্যাফে থিয়েটার, ফিল্মি ক্যাফে, পিমেন্টো, ফিস অ্যান্ড কো, পান্থশালাসহ নগরের বেশির ভাগ রেস্তোরাঁই রমজানে বিশেষ ইফতার অফার করছে। আর বেশ কিছু রেস্তোরাঁ ইফতারে যেকোনো খাবার ফরমাশ করলেই তার সঙ্গে বিনা মূল্যে খেজুর ও শরবত পরিবেশন করছে।