সিডনিতে বাংলার কাঁথা

বাংলার কাঁথার কদর বাড়ছে ভিনদেশি মানুষের কাছেও। ছবি: লেখক
বাংলার কাঁথার কদর বাড়ছে ভিনদেশি মানুষের কাছেও। ছবি: লেখক

সিডনির ঝলমলে বিপণিবিতানে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই চমকে উঠতে হলো। নকশি নয়, নতুন কাপড়েরও নয়—নেহাতই গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাঁথা ঝুলছে দোকানে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির রয়েল রেন্ডউইক বিপণিবিতানে মিলি অ্যান্ড ইউজিন দোকানে দেখা মেলে এমন বাঙালি কাঁথার। বাহারি সুতায় সেলাই করা রঙিন কাঁথা শোভা পায় ঘর সাজানোর পণ্য বিক্রির বিদেশি দোকানের প্রবেশদ্বারেই। বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাংলার সাধারণ মানুষের চিরাচরিত কাঁথাই সিডনিতে এসে ‘মেজর ট্রেন্ড’ পণ্য হয়ে উঠছে। ব্যবহারকারীরা নাকি ভাবছেন কাঁথা আরামদায়ক এবং হাল ফ্যাশনের পণ্য।

সিডনির দোকানে গ্রামের সাধারণ কাঁথা
সিডনির দোকানে গ্রামের সাধারণ কাঁথা

মিলি অ্যান্ড ইউজিনে যেভাবে বাঙালি কাঁথা
মিলি আর ইউজিন ঘরসজ্জায় পারদর্শী দুই বোন। নিজেদের সৃজনশীলতার প্রকাশই এই মিলি অ্যান্ড ইউজিন নামের ঘরসজ্জাসামগ্রীর দোকান। অল্পদিনে বেশ খ্যাতিও কুড়িয়েছে দোকানটি। শখের বশেই নানা দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য সংগ্রহ করেন দুই বোন। বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখেন দোকানে। সেই শখের কথা জেনেই তাঁদের এক বাঙালি বন্ধু উপহার দেন কাঁথা। সাদাসিধে হাত সেলাইয়ের সুতি শাড়ির কাঁথা দুই বোনের মনে ধরে। এরপর বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাঁথা আমদানি করেন তাঁরা।
অস্ট্রেলিয়ায় এনে শাড়ির তৈরি কাঁথাগুলোকে বিক্রির জন্য দোকানে তোলেন। মূল্য নির্ধারণের পর তাঁদের দোকানে শুরু হয় গ্রামবাংলার আটপৌঢ়ে কাঁথার বিক্রিবাট্টা। রয়েল রেন্ডউইক শপিং মল ছাড়াও দোকানটির আরও শাখা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে। প্রায় সব শাখায় সসম্মানে স্থান পেয়েছে বাঙালির কাঁথা। ৭০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার থেকে শুরু করে কাঁথাগুলো বিক্রি হয় ২২৫ ডলার দামে।
অস্ট্রেলীয়দের জন্য এ দাম অনেকটাই স্বাভাবিক। দোকানের সহকারী মার্ক বলেন, অস্ট্রেলীয়রা দিন দিন প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা অরগানিক শাকসবজি, মাছ-মাংসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে, সে রকম বাংলাদেশের গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি ব্যবহৃত সুতি শাড়ির বাহারি রঙের কাঁথাও বেশ পছন্দ করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
বিদেশিদের মুখে এ কাঁথার গুণগান শোনা যায় প্রায়ই। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায়। কম শীতের দেশ এই অস্ট্রেলিয়ায় কাঁথার মূল্যায়ন অন্য রকম। কেননা, শীত ও গরমকালের আগে-পরে কয়েক মাস ধরে এ দেশে শীত থাকে কম। অনেকটা আমাদের দেশের বসন্তকালের মতো। তখন এই কাঁথা ব্যবহার হয়ে ওঠে অনবদ্য।