স্কুলে পরিপাটি পোশাকে প্রতিদিন

স্কুলের পোশাকটি থাকতে হবে পরিপাটি। মডেল: ঝিনুক ও জারা, ছবি: নকশা
স্কুলের পোশাকটি থাকতে হবে পরিপাটি। মডেল: ঝিনুক ও জারা, ছবি: নকশা

শিশু হইচই করে ঘুরে বেড়াবে, দুষ্টুমি করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। ছুটোছুটি, দৌড়ঝাঁপ তো থাকবেই। প্রাণোচ্ছল আর হাসি-আনন্দের মধ্যে পোশাকও ময়লা হয় রোজ। মা-বাবার বকুনিও হয়তো জোটে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! তবে যে শিশুরা স্কুল যায়, তাদের স্কুলপোশাক পরিপাটি ঝকঝকে রাখতে তো হবেই।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইসমাত রুমিনা বলেন, ‘নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য পরিচ্ছন্ন পোশাক জরুরি। সবার সঙ্গে মেলামেশা ও খেলাধুলা করতে ভালোবাসে স্কুলের শিশুরা। পরিবেশ ও বন্ধুদের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য পরিচ্ছন্ন পোশাক অবশ্যই প্রয়োজন। সবার সঙ্গে চলতে পারলে শিশু আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।’

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব শিশুর শারীরিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে—এমনটাই মনে করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. রশিদুল হক। নোংরা পোশাকের কারণে বারবার শিশুর শরীরে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে শিশুর মন খারাপও হয়।

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষিকা কামরুন নাহার বলেন, প্লে ­গ্রুপ থেকেই শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়। শারীরিক শিক্ষা ক্লাসে হাতে-কলমে পরিচ্ছন্নতার বিভিন্ন দিক শেখানো হয়। এমনকি নিজের কাপড় পরিষ্কার করতে মাকে সাহায্য করতেও শেখানো হয় এ বয়স থেকেই। পরিচ্ছন্নতার জন্য আলাদা নম্বরও বরাদ্দ থাকে।©একটি পোশাক দুই দিনের বেশি পরা উচিত নয় শিক্ষার্থীদের। হাত, নখ, চুল, পোশাক, জুতা, মোজা আর নিজের চারপাশটাকে পরিচ্ছন্ন রাখার দেখভালের দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও।

তবে এসবের বাইরেও রয়ে যায় অনেক বিষয়। পোশাকে ধুলা-ময়লা বা কাদা লেগে থাকলে সহপাঠীরা তার সঙ্গে মিশতে বা খেলতে না-ও চাইতে পারে, শিক্ষকেরা বকাঝকা করতে পারেন। এমনটা হলে শিশু হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করে। পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, এমনকি স্কুলে যেতে ভয়ও পেতে পারে। শিশুটি ভাবে, সবাই যা পারে, সে তা পারে না। সে সহজেই রেগে উঠতে পারে। একসময় সে সাধারণ বিষয়গুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু করতে পারে।

এখন বৃষ্টির দিন, তাই স্কুলের পোশাকের জন্য একটু বাড়তি যত্ন নিতে হবে। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহজাদা আক্তার জানালেন কিছু সমাধান।

* স্কুলের পোশাকের একাধিক সেট তৈরি করিয়ে রাখুন। একটি ধুয়ে ফেললে যেন পরদিন অন্য একটি পরিষ্কার পোশাক পরে শিশু স্কুলে যেতে পারে। কোনো কোনো স্কুলে শরীরচর্চা ক্লাসের দিন আলাদা পোশাক পরার নিয়ম থাকে। সেটির একাধিক সেট রাখুন।

* পোশাকে কাদা-ময়লা লেগে গেলে বাড়ি ফিরেই সেই পোশাক ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিষ্কার করতে দেরি করলে দাগ ওঠাতে আরও ঝক্কিতে পড়তে হয়।

* বাড়ি ফিরেই পোশাক বদলে দিন এবং রোদে বা বাতাসে রাখুন। জুতা-মোজা খুলে রাখুন।

* বৃষ্টির মৌসুমে শিশুকে রেইনকোট দিতে পারেন; খেয়াল রাখুন রেইনকোটের ভেতরে যেন তার স্কুলব্যাগটিরও জায়গা হয়।

* প্রতিদিনের ব্যবহৃত মোজা অবশ্যই প্রতিদিন ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। বাড়ি ফিরে জুতা খুলে শু-র‌্যাকে না উঠিয়ে প্রথমে রোদে বা বাতাসে রেখে দিন। ভালোভাবে শুকিয়ে যাওয়ার পর গুছিয়ে রাখুন। জুতা ময়লা হলে বাড়ি ফেরার পর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করুন এবং না শুকানো পর্যন্ত রোদে বা বাতাসে রাখুন।

* স্কুলের পোশাকের নিচে গেঞ্জি বা এজাতীয় কিছু পরানো হলে সেটিও প্রতিদিন ধুয়ে ফেলতে হবে।

* খেলাধুলার পোশাক হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে থাকলে তা শিশুর জন্য ভালো। এতে শিশু পড়ে গেলেও কম আঘাত পাবে। এ পোশাকগুলো সহজেই ময়লা হয়ে যায়, তাই নিয়মিত ধুতে হবে।

অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা নূর নাহার শারমিন সুলতানা জানালেন, শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য বিষয়। তাই এ বিষয়ে স্কুল থেকেই নির্দেশনা দেওয়া হয়। পোশাক, জুতা-মোজাসহ সামগ্রিক পরিচ্ছন্নতার জন্য শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে আলাদা নম্বর বণ্টনেরও নিয়ম রয়েছে।