দাঁত ও মুখের যত্ন

মাদের দেশে সাধারণত দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির প্রদাহ, দাঁত ও চোয়ালের আঘাতজনিত সমস্যা, আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু দাঁত, চোয়াল ও মুখের অসামঞ্জস্যতা, চোয়ালের হাড় ও মুখমণ্ডলের সংক্রমণ, চোয়ালের সিস্ট টিউমার, ওরাল ক্যানসার ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।

দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির প্রদাহের কারণ হলো ডেন্টাল প্ল্যাক নামের একটি জীবাণুর পাতলা আবরণ, যা শক্তভাবে দাঁতে লেগে থাকে। সঠিক সময় ও নিয়মে দাঁত পরিষ্কার না রাখলে এসব জীবাণু বংশ বৃদ্ধি করে এবং অ্যাসিড ও টক্সিন (বিষ) তৈরি করে। এরপর দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির প্রদাহ সৃষ্টি করে। শিশুদের ছোটবেলায় দাঁতের (দুধদাঁত) যত্ন না নিলে সমস্যা হয় বেশি। দ্রুত ক্ষয় হলে অথবা সময়ের আগে দাঁত পড়ে গেলে পরবর্তী সময়ে দাঁত বাঁকা বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। ক্ষতিকর বদঅভ্যাস যেমন: সুপারি, জর্দা-তামাক পাতা, খয়ের সেবন, ধূমপান ও মদ্যপানে মুখের ক্যানসার হয়। আবার সড়ক দুর্ঘটনা, খেলাধুলা ও মারামারি দাঁত ও চোয়ালের আঘাতজনিত সমস্যার প্রধান কারণ।

প্রতিরোধের উপায়: দিনে দুবার, সকালে নাশতার পরে এবং রাতে খাবারের পরে নিয়মিত সঠিক পন্থায় দাঁত ব্রাশ, ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান পরিষ্কার এবং প্রতিদিন কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করা হলে দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির প্রদাহ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বছরে অন্তত দুবার ডেন্টাল সার্জন দ্বারা দাঁত ও মুখ পরীক্ষা করা উচিত। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে সহজেই চিকিৎসা করা এবং ভবিষ্যতে জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে। ওরাল ক্যানসার অনেকাংশ প্রতিরোধযোগ্য এবং দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা করা গেলে নিরাময়যোগ্য। মুখে দীর্ঘস্থায়ী ঘা বা অস্বাভাবিক ফোলা দেখা গেলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে সব ধরনের মুখের ঘা ক্যানসার নয়।

প্রতিকার: দাঁতের ক্ষয় প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ফিলিং করে চিকিৎসা করা যায়। দাঁতের মজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রুট ক্যানাল করে দাঁত সংরক্ষণ করা যায়। তবে অতিরিক্ত ভাঙা দাঁত অনেক সময় উৎপাটন করতে হয়। মাড়ির প্রদাহ হলে স্কেলিং ও পলিশিং চিকিৎসা দিয়ে নিরাময় করা যায়।

অর্থোডন্টিক চিকিৎসার মাধ্যমে আঁকাবাঁকা দাঁত সোজা করা যায়। সার্জারি ও প্রয়োজনে রেডিওথেরাপির মাধ্যমে ওরাল ক্যানসারের চিকিৎসা করা সম্ভব। ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও আটটি সরকারি মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে বিশেষায়িত দন্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

লেখক: ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন

ডেন্টাল ইউনিট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ