বই যখন অন্যের

বই অন্যের হলে যত্ন বেশি নিতে হবে। ছবি: অধুনা
বই অন্যের হলে যত্ন বেশি নিতে হবে। ছবি: অধুনা

বেশ ক বছর ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত বিনয় দত্ত। গেল একুশে বইমেলাতে নিজের কবিতা নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। যেহেতু লেখেন, সেহেতু অনেক বই পড়েন তিনি। শুধু বই পড়েনই না, বই কেনেন অনেক। গেল বইমেলা থেকে লেখক আনিসুল হক আর শাহাদুজ্জামানের বই কিনেছিলেন বিনয় দত্ত। মাসখানেক যেতে না-যেতেই বইয়ের তাক থেকে প্রায় সব বই হাওয়া হয়ে গেছে তাঁর। বিনয় জানান, বইপত্র অনেক বন্ধু পড়তে নেন। আমিও আগ্রহ নিয়ে তাঁদের বই পড়তে দিই। বেলা শেষে দেখা যায়, যত বই দিই তত বই আর আমার বইয়ের তাকে ফেরত আসে না।
কয়েক দশক আগে সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছিলেন, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। কথাটি সত্য, কিন্তু বই কেনার পরে অন্য কেউ নিয়ে আর ফেরত দেয়নি এমনটা হরহামেশাই হয় আমাদের জীবনে। তখন তো নিজেকে দেউলিয়াই বলা যায়? শখ করে হয়তো বই কিনেছেন, বাড়িতে অতিথি কিংবা প্রিয় বন্ধু সেই বইটি পড়ার নামে ‘ধার’ নিয়ে গিয়ে আর আপনাকে ফেরতই দিচ্ছে না। আপনারও হয়তো খেয়াল নেই কে বই নিয়েছে, আবার কার কাছ থেকে বই নিয়ে বাড়িতে ফেলে রেখেছেন, তা-ও মনে নেই। অন্যের বই পড়ার জন্য এনে যেমনটা আমরা ফেরত দিতে ভুলে যাই, আবার আমাদেরই বই অন্যরা পড়ার জন্য নিয়ে বেখেয়ালে হয়তো আর ফেরত দিচ্ছে না।
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বুশরা হুমাইয়াও অনেক বই হারিয়েছেন, আবার অনেক বইও পেয়েছেন এভাবেই। বই হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে বেশ সতর্ক তিনি। তাঁর ভাষ্যে, আমার বই যখন অন্যদের পড়তে দিই, তখন আমি বইয়ের ভেতরে হাতে তৈরি বুকমার্ক দিয়ে দিই। এতে যিনি বই পড়তে নেন, তাঁর যেন খেয়াল থাকে বইটি আমার কাছ থেকে নেওয়া। আর এখন আমি যখন কারও কাছ থেকে বই আনি, তখন বইয়ের মধ্যে তাঁর নাম একটি টুকরো কাগজে লিখে রেখে দিই।

যা খেয়াল রাখবেন
* যাঁর কাছ থেকে বই পড়তে নিচ্ছেন, তাঁর নাম ছোট এক টুকরো কাগজে লিখে বইয়ের ভেতরে রেখে দিন। এতে বইয়ের মালিক কে, তা পরে বের করতে পারবেন।
* ধার করা বইয়ে কলম বা পেনসিল দিয়ে দাগাদাগি করবেন না।
* অনেকেই বইয়ের পাতা ভাঁজ করে রাখেন। এই অভ্যাস পরিহার করুন, এতে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে যায়।
* একসঙ্গে অনেকজনের কাছ থেকে বই ধার করবেন না। একটি বই পড়া হলে তখন অন্য বই ধার করুন।
* খাবার টেবিলে কিংবা চা খাওয়ার সময় বই পড়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। বইয়ের পাতায় চা ফেলার বদভ্যাস বইয়ের মালিককে কষ্ট দেয়।
* আপনি যখন বই ধার দিচ্ছেন তখন কাকে দিচ্ছেন, তা একটি কাগজে টুকে রাখতে পারেন।
* যিনি আপনার বই নিচ্ছেন, তাঁকে কয়েক সপ্তাহ পরপর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বইয়ের কথা মনে করিয়ে দিতে পারেন।
* আপনার বইগুলোর জন্য বিশেষ ধরনের বুকমার্ক তৈরি করতে পারেন, যেন বই দেখেই চেনা যায় বইটি আপনার।