চুল পড়ছে? উপায় কী

কয়েক দিন ধরে অনেক চুল পড়ছে নুসরাতের (ছদ্মনাম)। চুল পড়াই এখন তাঁর মাথাব্যথার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে চুলে লম্বা সুন্দর বেণি করতে পারতেন তিনি। সম্প্রতি একদম ছোট করে ফেলেছেন চুল। তাতেও বন্ধ হচ্ছে না পড়া।

চুল কমবেশি সবারই পড়ে। হয়তো কারও কম, কারও বেশি। দিনে ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। তবে এর বেশি হলেই তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার চুল পড়া নিয়ে বেশি চিন্তা করলেও চুল পড়ে বেশি। এই চুল পড়া সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য প্রথমেই জানতে হবে কী কারণে চুল পড়ছে। কারণটা খুঁজে বের করে, তারপর সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তখন আপনা-আপনিই চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তবে শুধু তা-ই নয়, চুল পড়া বন্ধ করতে ও চুলের গোড়া মজবুত রাখতে নিয়মিত বেশ কিছু যত্ন নেওয়াও প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হারমনি স্পার স্বত্বাধিকারী রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, ‘রূপের সঙ্গে চর্চার সম্পর্ক সব সময়ের। আমরা বেশির ভাগ সময় চর্চা করি না। নিয়মিত যেকোনো ভালো অভ্যাস শরীরে ভালো কিছুই নিয়ে আসে। চুল পড়া রোধ করতে বা যত্ন নেওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে শরীরের ভেতরে ও বাইরে দুই দিক থেকেই যত্ন নিতে হবে। সকালের নাশতায় অবশ্যই দুধ, ডিম ও কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এই তিনটি খাবার চুলের জন্য খুব উপযোগী। বিশেষ করে এই তিন ধরনের খাবার সকালে খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।’

রাহিমা সুলতানা আরও বলেন, এই বর্ষা মৌসুমে চুল পড়ার সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। এ সময় আর্দ্রতা বেশি থাকে। মাথার তালু ভেজা ভেজা থাকে। তাই এ সময় বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। গোসলের আগে মাথায় তেল ঘষে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া সুষম খাবার না গ্রহণ ও হরমোনের ইমব্যালান্স তৈরি হলেও চুল পড়ে। হরমোনের ইমব্যালান্সের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

রূপবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে চুল পড়া রোধে বেশ কিছু উপায় নিচে তুলে ধরা হলো:

অবশ্যই চুলে তেল দিতে হবে: চুল পড়া বন্ধ বা চুলের যত্ন নিতে অবশ্যই তেল দিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো নারকেল তেল। নারকেল তেল চুলকে মসৃণ ও স্বাস্থ্যবান করে। এতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে, যা যেকোনো ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের আক্রমণ থেকে চুলকে রক্ষা করে। তাই সপ্তাহে যে করেই হোক একদিন চুলে তেল দিতে হবে বা শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল ম্যাসাজ করতে হবে।

রোজমেরি ল্যাভেন্ডার তেলের ব্যবহার: এটি চুলের যত্নে অন্যতম কার্যকর একটি উপাদান। এতে তেলে চুল পড়া রোধের উপাদান আছে; যা চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। এতে থাকা আমলকী, নারকেল, জলপাই, জোজোবা, ক্যাস্টর উপাদান চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।

কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু প্রত্যাহার: চুলের যত্নে কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পুকে ‘না’ বলুন। শ্যাম্পুতে বিটরুট নির্যাস, তেঁতুলের বীজ আছে কি না, লক্ষ রাখুন। এই উপাদানগুলো চুলের কোনো ক্ষতি না করে কার্যকরভাবে মাথার তালু পরিষ্কার করে। সরাসরি শুকনো চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। তেল দিয়ে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।

অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে: কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল কেবল উজ্জ্বলই হয় না; এটি চুলের গোড়াকে মজবুত করে ও চুলকে মসৃণ করে। তবে অবশ্যই চুলের ধরন বুঝে কন্ডিশনার বেছে নিতে হবে। বিটরুট নির্যাস, অ্যাকুয়া, প্রো ভিটামিন বি-৫ সমৃদ্ধ কন্ডিশনার ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।

হালকা কুসুম পানির ব্যবহার: অনেকে মনে করেন, গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করলে চুল ভালো থাকে। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। গরম পানি মাথার তালুর গুরুতর ক্ষতি করে, এতে চুল পড়ে ও চুল দুর্বল হয়ে যায়। তাই চুল ধুতে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা সবচেয়ে উপযোগী।

আপনি কী খাচ্ছেন? খারাপ খাদ্যাভ্যাস চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এ জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার চুল পড়া রোধে সাহায্য করে। ভিটামিন ই যুক্ত খাবার, সামুদ্রিক মাছ ডিম, দুধ চুলের জন্য খুবই উপকারী।

চুলের যত্নে হেয়ারপ্যাক: যদি খুব বেশি চুল পড়তে থাকে তাহলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘৃতকুমারী, আমলকী, শিকাকাই, নিমের গুঁড়ো একই পরিমাণে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে দিতে হবে। সপ্তাহে একবার এটির ব্যবহার চুল পড়া কমাবে। এ ছাড়া ডিম, মেথির গুঁড়ো ও টক দই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে দেওয়া যেতে পারে। সপ্তাহে দুদিন এই প্যাক ব্যবহারে চুলের গোড়া মজবুত হয়। প্যাক ধুতে সহনীয় হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।

গরম বাতাস চুলের জন্য ক্ষতিকরণ: কোনো ধরনের গরম বাতাস বা হিট চুলে নেওয়া যাবে না। এটি চুলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
(প্রতিবেদন তৈরিতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনের সহায়তা নেওয়া হয়েছে)