বাহারি কুশন

চেয়ারের এক কোণে পড়ে থাকার যুগ শেষ। শুধু কুশন দিয়েই এখন ঘরের চেহারায় আনা যায় নতুনত্ব। কুশন সাজিয়ে রাখার পরিবেশনাতেও যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন ঢং। বড় সোফা হোক বা নিচু, ঘরে ডিভান-শতরঞ্জি, যা-ই রাখা হোক, কুশন থাকবেই।

বসার ঘর ছাড়াও শোয়ার ঘর আর শিশুর ঘরে কুশন রাখতে পারেন। থাকতে পারে ঘর বা বারান্দার এক কোণে রাখা দোলনাটাতেও। নানান স্থানে ব্যবহারের উপযোগী কুশন পাবেন অনায়াসেই। শুধু অন্দরসজ্জার বাকি দিকগুলো খেয়াল রাখুন কুশন কভার কেনার সময়, তাহলে ঘর সাজানোর সময় আর আলাদা করে ভাবতে হবে না। কোন ঘরে কোন স্থানে ব্যবহার করতে চাইছেন, এর ভিত্তিতে কুশনের আকার বেছে নিতে হবে। কুশন কভার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কতটা সময় বা সুযোগ পাচ্ছেন, এর ওপর নির্ভর করবে কোন উপকরণে তৈরি কভার আপনার জন্য ভালো।

একটি জায়গার জন্য ভিন্ন নকশায় তৈরি একই রঙের কুশন কভার বেছে নেওয়া যায়। ভিন্ন রঙের কাপড়ে একই নকশা থাকলে তা-ও সুন্দর দেখাবে। এমনকি রং বা নকশায় মিল না থাকলেও অন্তত একই কাপড়ে তৈরি কুশন ব্যবহার করা উচিত। একেবারেই মিল না রেখে নানান ধরনের কুশন বেছে নিলে তা ভালো দেখায় না।

ঘরভেদে কুশন কাভার ব্যবহারের নির্দেশনাবলি জানালেন অন্দরসজ্জাবিদ গুলসান নাসরীন চৌধুরী

হাতে আঁকা কুশন কভার জনপ্রিয় এখন। কৃতজ্ঞতা: মায়াসির, ছবি: নকশা
হাতে আঁকা কুশন কভার জনপ্রিয় এখন। কৃতজ্ঞতা: মায়াসির, ছবি: নকশা

বসার ঘর

মাঝারি আকারের বসার ঘরে শুধু সোফা আর চেয়ার রাখার সুযোগ থাকে। এমন ঘরে শুধু সোফাতেই কুশন রাখতে পারবেন। সোফার আকার-নকশা অনুযায়ী কুশন ও এর কাভার বেছে নিন। বেত, কাঠ বা বাঁশের তৈরি সোফা থাকলে দেশজ নকশার কুশন কভার বেশ লাগে। গ্রামীণ চেক, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, কাঁথা স্টিচ বা অ্যাপ্লিক বেছে নিতে পারেন। কুরশি কাঁটার কাজ করা থাকলেও ভালো দেখাবে। পর্দা ও অন্যান্য আসবাবের দিকেও খেয়াল রাখুন কুশন কাভার বেছে নেওয়ার সময়।

ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের সোফা (গদিওয়ালা, বড় সোফা) থাকলে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি কাপড়ের কুশন কভার মানানসই। এ ছাড়া কাতান, সার্টিন, লেস, নেটের কুশন কভার বেছে নিতে পারেন। সোফার জন্য সাধারণত ১৪ বাই ১৪ থেকে ১৮ বাই ১৮ আকারের কুশন ব্যবহার করা হয়।

বসার ঘরটা বড় হলে সোফা ছাড়াও থাকতে পারে ডিভান বা শতরঞ্জি। ডিভান থাকলে নকশিকাঁথা বা নকশিকাঁথার চাদর বিছিয়ে কাঁথা স্টিচ বা নকশিকাঁথার কুশন কভার দিয়ে সাজানো যায়। রঙিন শতরঞ্জিতে বড় কুশন মানায়। ২০ বাই ২০ থেকে শুরু করে ২৮ বাই ২৮ আকারের কুশন ব্যবহার করতে পারেন।

শোয়ার ঘরে

শোয়ার ঘরে বালিশের সামনে কুশন রাখতে পারেন কিংবা বালিশ ছাড়াই শুধু কুশন ব্যবহার করতে পারেন। অনেক দেশেই শোয়ার ঘরে বালিশের পরিবর্তে শুধু কুশন রাখার প্রচলন রয়েছে। বালিশ না রাখলে অবশ্যই ভালো মানের কুশন ও কাভার ব্যবহার করা উচিত। ভালো মানের দেশীয় সুতি কাপড় কিংবা চায়নিজ বা জাপানিজ কাপড়ের কুশন কিনতে পারেন। বালিশ থাকলে এর কভারের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কুশনের আবরণ বেছে নিন। একটু হালকা রঙের কাপড়ই এই ঘরটার জন্য ভালো।

শিশুর ঘরে

শিশুর ঘরে কুশন কভার রাখলে ওর মানসিকতার দিকে লক্ষ রেখে সেটি বেছে নিন। প্রজাপতি, টেডি বিয়ার, সিনড্রেলা বা ফুটবলের নকশায় তৈরি কুশন কভার হতে পারে ওদের পছন্দসই। বিছানায় তো রাখতেই পারেন, শিশুর ঘরে ডিভান থাকলে সেখানেও এমন কুশন রাখা যায়। এই ঘরের জন্য একটু গাঢ় রঙের কাপড় বেছে নেওয়া ভালো, নইলে সহজেই নোংরা হয়ে যেতে পারে।

 অন্য যেথায় একটু আরাম

বাড়িতে আলাদা লিভিং রুম থাকলে সেখানে নানান আকৃতির কুশন রাখতে পারেন। চারকোনা বা কোলবালিশের আকৃতির কুশন জড়িয়ে একটু শান্তিতে বসতে পারেন। আড্ডা চলতে পারে বড় কুশনের ওপর বসেও।

কেমন করে মেলাই

গুলসান নাসরীন চৌধুরী জানালেন, রং-বেরঙের কুশন কভার দেখতে ভালো লাগে। তবে কোনো এক দিক থেকে একটু মিল রেখেই রং বেছে নেওয়া উচিত। হয়তো একই কাপড়ের তৈরি কুশন বেছে নেওয়া হলো; কোনোটাতে লালের ওপর লাল গোলাপ, কোনোটাতে হলুদের ওপর হলুদ গোলাপ আবার কোনোটায় বেগুনির ওপর বেগুনির গোলাপের নকশা থাকল। আবার হয়তো ঘরের একটা দেয়াল সি গ্রিন; এই ঘরের চারটি সোফার কুশনের কভারগুলোর প্রতিটিই সি গ্রিন রঙের, তবে একটিতে হ্যান্ড পেইন্ট করা রয়েছে সাদা গোলাপ, একটিতে সাদা বেলি, একটিতে সাদা রজনীগন্ধা আর অন্যটিতে ফুটিয়ে তোলা সাদা দোলনচাঁপা; অসাধারণ দেখাবে।

যত্নের কথাও ভাবুন

ব্যস্ত জীবনে যত্ন নিয়ে সুতি কাপড় পরিষ্কার করা, ধোয়ার পর শুকানো ও ইস্ত্রি করার সময় মেলা ভার। তাই কৃত্রিম তন্তুর কাপড় বেছে নিতে পারেন। চট করেই পরিষ্কার করা হয়ে যাবে, বাড়তি ঝামেলা নেই। তাই নিজে কেমন সময় পাবেন কুশন কভারের যত্ন নেওয়ার, সেটিও খেয়াল রাখুন কুশন কভার কেনার সময়।

কোথায় পাবেন, কেমন দাম?

বাজার ঘুরে পাওয়া গেল বৈচিত্র্যময় সব কুশন কভারের খোঁজ। ফ্যাশন হাউস আড়ং, মায়াসির, নিপুণ, বিবিয়ানা, যাত্রায় পাবেন নানান নকশার কুশন আবরণ। ফুল বা পাতা; বাহারি নকশা—সবই পেয়ে যাবেন একটু খুঁজলে। পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণে তৈরি কুশন-আবরণ পাবেন ফ্যাশন হাউস যাত্রায়। প্রিন্টের, এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক করা কুশন কভার রয়েছে আড়ংয়ে, মিলবে সুতি বা সিল্ক যেকোনো কাপড়ই। এর বাইরে অন্য ধাঁচের কুশন কভার পাবেন ক্ল্যাসিক্যাল হোম টেক্সে। মখমলের নকশা করা বা চুমকি বসানো কুশন কভার পাবেন এখানে। আধুনিকতার ছোঁয়া পাবেন এখানকার কুশন কভারে, জ্যামিতিক আকারের ব্যবহারে একটু অন্য নকশায়। এ ছাড়া নিউমার্কেট, চাঁদনি চক আর গাউছিয়া মার্কেটেও পাবেন বিভিন্ন ধরনের কুশন কভার। আকার, কাপড়ের ধরন ও নকশাভেদে প্রতিটির দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে।