পদোন্নতি নিয়ে ভাবনা

যথা সময়ে পদোন্নতি হলে কাজের স্পৃহা বাড়ে। মডেল: সিদ্দীকি, ছবি: অধুনা
যথা সময়ে পদোন্নতি হলে কাজের স্পৃহা বাড়ে। মডেল: সিদ্দীকি, ছবি: অধুনা

পেশাজীবনে আমরা যতই এগিয়ে যাই, ততই পদোন্নতির সুযোগ ও প্রত্যাশার বিকাশ ঘটে। একটি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। ছয় বছরের বেশি সময় একই পদে আসীন ছিলেন, নেটওয়ার্ক অ্যানালিস্ট পদে অনেক দিন কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর কাজ করার পরেও যখন পদোন্নতি হচ্ছিল না, তখন বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। হতাশার কথা মানবসম্পদ বিভাগ ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলাম। পদোন্নতি হচ্ছিল না বলে বুঝতে পারছিলাম না ক্যারিয়ার কোন দিকে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে এখন একটি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি। এখনে নির্ধারিত সময় পরপর পদোন্নতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পেশাজীবনে অগ্রগতি বা স্থবিরতা বোঝার অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে পদোন্নতি।’

হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউর মে-২০১৬ সংখ্যার এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, মধ্যবয়সের পেশাজীবন যাঁদের, তাঁদের ৪১ শতাংশ পদোন্নতি না হওয়ার কারণে কর্মস্থল পরিবর্তন করেন। পদোন্নতি না হওয়ার কারণে ৭৩ ভাগ কর্মীর মধ্যে হতাশা ভর করে। যে হতাশার বহিঃপ্রকাশ না থাকলেও কাজের মান ও গতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পদোন্নতির সঙ্গে দক্ষতার বিষয়টি জড়িত, যা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজের মান ও গতির ওপর প্রভাব ফেলে। বিষয়টি শুধু বেতন বা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, কর্মীদের অনুপ্রেরণা ও কাজে আগ্রহী করে তোলার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহকারী অধ্যাপক সাইফ নোমান খান বলেন, ‘কর্মস্থলে গতিশীলতা আনতে পদোন্নতি বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি বিষয়টিকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয় না। পদোন্নতি না হলে কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা যায়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সামগ্রিক কাজের ওপর। আবার হুটহাট ‘গণ পদোন্নতি’ কাজের মান কমিয়ে দেয়। কর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক রেষারেষি তৈরি করে। কখনো কখনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অনিয়মিত পদোন্নতি তরুণ মেধাবী নতুন কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে নিরুৎসাহিত করে। বিজনেস স্ট্র্যাটেজি স্পেশালিস্ট শিক্ষক সাইফ নোমান খান পদোন্নতিকে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের স্বার্থেই ইতিবাচকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা উচিত বলে মনে করেন। পেশাজীবনে পদোন্নতি নিয়ে সাইফ নোমান খান প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তা ও পেশাজীবীদের বেশ কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন।

পেশাজীবীরা পদোন্নতি নিয়ে যা ভাববেন
* আপনার ‘ক্যারিয়ার গ্রোথ’কে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভাববেন। একই পদে অনেক দিন থেকে বিরক্তি তৈরি হওয়ার আগেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
* পদোন্নতি নিয়ে হতাশা তৈরি হলে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের অবহিত করুন। যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে তাঁদের কাছে পদোন্নতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরুন।
* দীর্ঘ সময় পদোন্নতি না হলে কর্মস্থল পরিবর্তনের বিকল্প ভাবনা মাথায় রাখুন।
* আপনাকে যেন পদোন্নতির যোগ্য ভাবা হয়, তার জন্য পেশাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ট্রেনিং ও সার্টিফিকেট কোর্সে অংশ নিতে পারেন।
* প্রতিষ্ঠান আপনাকে যেন নিছকই একজন
কর্মী হিসেবে বিবেচনা করতে না পারে,
সেদিকে খেয়াল রাখুন। নেতৃত্বের গুণাবলি ও দক্ষ নির্বাহীর যোগ্যতা অর্জনের দিকে
মনোযোগ দিন।

প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও মানবসম্পদ কর্মীরা
পদোন্নতি নিয়ে যা ভাববেন
* নিয়মিত পদোন্নতি বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের পেশাগত সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলুন।
* পদোন্নতির সুযোগ-সুবিধা নতুন ও তরুণ পেশাজীবীদের প্রতিষ্ঠানে যোগদানের ক্ষেত্রে আগ্রহী করে তোলে।
* সব কর্মীর গড়পড়তা পদোন্নতি না দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পদোন্নতির সুযোগ কর্মীদের কাজে প্রতিযোগিতা তৈরি করে।
* তরুণ পেশাজীবীদের পদোন্নতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ও শীর্ষ পদগুলোতে ভবিষ্যতে নেতৃত্বের সুযোগ রাখার দিকে খেয়াল রাখুন।
* প্রতিষ্ঠানের কোনো পেশাজীবী পদোন্নতি নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হলে তাঁর সঙ্গে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে যোগাযোগের সুযোগ রেখে আলাপ-আলোচনা করা যেতে পারে।
* পদোন্নতি অনুগ্রহের কোনো বিষয় নয়, যোগ্যতা অর্জনের বিষয় সেই ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করুন।