সন্তানহীন দম্পতি বাড়ছে, উন্নত হচ্ছে চিকিৎসাও

চিকিৎসক সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার
চিকিৎসক সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার

ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্তানহীন দম্পতির সংখ্যা বাড়ছে। এই দম্পতিরাও সন্তান লাভের জন্য দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কলকাতায় এই চিকিৎসায় প্রথম উদ্যোগ নেন ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তারপর বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী, সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারসহ আরও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসায়ও পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে সন্তানহীন দম্পতিদের সন্তান হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে।

এ বিষয়ে কলকাতার প্রখ্যাত চিকিৎসক সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, সন্তানহীন দম্পতিরা শুধু ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে নয়, আসছেন পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান থেকেও। তিনি আরও বলেন, সন্তান না হওয়ার জন্য আগে একতরফাভাবে নারীকে দায়ী করা হতো। কিন্তু এখন এটা প্রমাণিত যে পুরুষের সমস্যার কারণে সন্তান হয় না। তথ্য-উপাত্তের উল্লেখ করে ডা. ঘোষ দস্তিদার বলেন, এখন দেখা গেছে সন্তান না হওয়ার পেছনে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারী এবং ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ দায়ী। আর ২০ শতাংশের জন্য উভয়েই দায়ী বা অন্য কোনো কিছু দায়ী।

সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার জানান, ১৯৭৮ সালে প্রথম টেস্টটিউব শিশুর জন্মের পেছনে ছিলেন ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তবে তাঁর এই কাজকে মূল্যায়ন করা হয়নি সেদিন। এরপর ১৯৮১-৮৬ সালের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে চিকিৎসক বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী ও তিনি ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় টেস্টটিউব শিশু ভূমিষ্ঠ করান। সেটি ছিল আইভিএফ পদ্ধতিতে। এরপর ডা. ঘোষ দস্তিদার ইকসি বা ইন্ট্রা-সাইটোপ্লাসমিক স্পার্ম ইনজেকশন পদ্ধতিতে শিশু ভূমিষ্ঠ করান ১৯৯৫ সালের মার্চে। তিনি বলেন, ইকসি থেকে এখন সন্তানহীন দম্পতিদের সন্তান লাভের জন্য আরও উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি টেসা-ইকসি শুরু করা হয়েছে। এর আগে করা হয়েছে জিফট (জাইগোট ইন্ট্রা-ফলোপিয়ান ট্রান্সফার) পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে। এই পদ্ধতির চিকিৎসা খরচ ১ লাখ ১০ হাজার রুপির মতো। এই পদ্ধতিতে মুম্বাইয়েও শিশু জন্ম নিয়েছে।

ডা. ঘোষ দস্তিদার এ কথাও বলেছেন, এমনও দেখা গেছে নারীর গর্ভধারণ হচ্ছে কিন্তু থাকছে না। এ ক্ষেত্রে তিনি জরায়ুর মুখে ছোট্ট একটি অপারেশন করে সন্তানহীন দম্পতির মুখে হাসি ফোটাতে সফল হয়েছেন। এই পদ্ধতিতে অবশ্য খরচ সামান্য। ১৫ হাজার রুপির মতো। তিনি বলেন, তাঁর কাছে আসা রোগীদের ২৫ শতাংশই বাংলাদেশি। তাঁর রয়েছে নিজস্ব চিকিৎসালয় ও গবেষণাগার জিডি ইনস্টিটিউট অব ফার্টিলিটি রিসার্চ। এই রিসার্চ সেন্টার দক্ষিণ কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে অবস্থিত। ডা. ঘোষ দস্তিদার বলেন, আগে যেমন সন্তানহীন দম্পতিদের সন্তান লাভের সম্ভাবনা কম ছিল। এখন তা বহু গুণে বেড়ে গেছে।

ডা. ঘোষ দস্তিদার বলেন, সন্তানহীন দম্পতিদের অল্প বয়সে চিকিৎসকের কাছে আসা উচিত। নারীদের বয়স যত কম হবে তত বেশি সাফল্য আসবে। চিকিৎসার খরচও কমবে। বিশেষ করে ৩২-৩৩ বছর পর মেয়েদের শারীরিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। তাই তাঁর আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে সফলতা আসে বেশি। আবার যেসব নারীর জরায়ুর মুখের সিস্ট অপারেশন করার প্রয়োজন হয়, সেই সিস্ট অপারেশন করা হলে ওই দম্পতি শিশুর নতুন মুখ দেখতে পারেন। এ জন্য খুব একটা বেশি খরচ হয় না। তবে থাইরয়েড এবং ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, এখন আর এই রোগীদের বিছানায় শুয়ে থাকার প্রয়োজন নেই।