ভালোবাসুন নিজেকে

নিজে আনন্দে থাকুন, নিজেকে ভালোবাসুন। মডেল: তাজনুভা। ছবি: অধুনা
নিজে আনন্দে থাকুন, নিজেকে ভালোবাসুন। মডেল: তাজনুভা। ছবি: অধুনা

‘যাকে ভালোবেসেছ, তাকে যদি ক্ষমা নাই করতে পারো তবে ভালোবাসা কিসের?’ এই বাক্যটি শুধু আমাদের প্রিয় মানুষটির জন্যই নয়। নিজের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। কেননা সবার আগে নিজেকে বোঝা এবং নিজের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করার মানসিকতা রাখা প্রয়োজন।

ক্ষমা করা চাই নিজেকেও
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক এবং কাউন্সেলর অ্যানি বাড়ৈ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের আবেগ কাজ করে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই আবেগগুলোকে বলা যেতে পারে “ইড”। বিভিন্ন ধরনের আবেগকে এক পাশে রেখে আমরা যুক্তি দিয়ে কাজ করি। আর এই যুক্তিকে বলা হয় “ইগো”। তারপরও বিভিন্ন সময় যুক্তির চেয়ে আবেগ প্রকট হয়ে ওঠে। যার ফলে অনেক ভুলত্রুটি আমরা করে ফেলি।’ আর এই ভুলগুলো কখনো হয়ে থাকে নিজের অজান্তে, আবার কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে আমরা বেশ কিছু ভুল করে ফেলি। যেভাবেই হোক না কেন এই ভুলগুলোকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে।

বিভিন্ন কারণে হতে পারে ভুল
চারপাশের পরিবেশ থেকে শুরু করে ব্যক্তির নিজ মানসিকতার ওপর নির্ভর করে এই কারণগুলো—

* কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারা
এটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই হয়ে থাকে। পারিবারিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন কিংবা ভালো চাকরি সবকিছুতে সাফল্য কামনা করি। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই কি একই রকম ফল পাওয়া যায়? আর এর জন্য ব্যক্তি সবার আগে নিজেকেই দায়ী করেন। অনেকের মনেই ক্ষোভ থাকে, ‘যদি আরেকটু চেষ্টা করতাম, তাহলে হয়তো এ পরিস্থিতি হতো না।’ এমনটি শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কাজ করে।
* প্রতিকূল পরিবেশ
পরিবার কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি অথবা অর্থনৈতিক বিভিন্ন কারণেই আমরা অনেক সময় নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি না। তার জন্য অনেকেই নিজ পরিবারকে দায়ী করেন। এর ফলে কিন্তু ব্যক্তির মধ্যে ‘ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স’ দেখা দিতে পারে। যা পরবর্তী সময়ে মোটেই ইতিবাচক হয় না।
* যুক্তির চেয়ে আবেগের প্রাধান্য
‘ইড’ এবং ‘ইগো’র ব্যাপারটি। এমন কিছু মুহূর্ত চলে আসে যখন আমরা আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তখন এমন কিছু আচরণ আমরা করে বসি, যার প্রভাবটা নেতিবাচক হয়ে পড়ে। যেমন ধরুন আপনার অফিসের কথাই। কোনো কারণে হয়তো সহকর্মীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বসলেন কিংবা বসের সামনেই হুট করে রেগে গেলেন।
* নিজের অজান্তেই ভুল
এমনও তো হতে পারে যে আপনি ভুলটা করেছেন একেবারেই নিজের অজান্তে। নতুন অফিসে কাজ করছেন। আপনি হয়তো জানেনই না এখানকার নিয়মকানুন। আর করে বসলেন ভুল। এভাবেও কিন্তু আমরা অনেক ভুলত্রুটি করে থাকি।
* হতাশার কারণে
এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি একেবারেই যুক্তির ঊর্ধ্বে চলে যান। কেননা দীর্ঘদিনের হতাশা তার এরূপ কর্মকাণ্ডে লক্ষ করা যায়। হয়তো একটা সময় পর ব্যক্তি নিজেও বুঝতে পারেন। কিন্তু তখনো তার মধ্যে হীনম্মন্যতা কাজ করতে পারে অতীতের এসব ভুলত্রুটির কারণে।
* তাই ক্ষমা করুন আগে নিজেকে
ভুলত্রুটি যে কারণেই হোক না কেন, তাই নিজেকে ক্ষমা করার মানসিকতা রাখুন। আর এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিজেকে বোঝা।
* যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা
নিজেকে বোঝার পাশাপাশি বুঝতে চেষ্টা করুন কেন ভুল করেছিলেন। সেটা কি আপনার অজান্তে ছিল? কোনো নির্দিষ্ট কারণে এমন আচরণ করেছিলেন। কারণটি বের করার চেষ্টা করুন। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিন।
* নিজ মূল্যবোধ মেনে চলা
সব সময় চেষ্টা করুন নিজের নৈতিকতা, মূল্যবোধের কাছে স্পষ্ট থাকার। হয়তো আপনি দীর্ঘদিনের কারণবশত রাগ করে বসলেন। আবার এর জন্য নিজেকেই দায়ী করছেন। তাই চেষ্টা করুন নিজের মূল্যবোধগুলো মেনে চলার।
* সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়েই আমাদের পথচলা
নিজেকে দায়ী করছেন কাজটি সঠিকভাবে করতে পারেননি বলে? এ ক্ষেত্রে নিজেকে দায়ী করার পরিবর্তে মেনে নিতে চেষ্টা করুন যে ব্যর্থতা ও সফলতা এই দুটি মিলিয়েই আমাদের দীর্ঘ পথচলা। অতীতের ব্যর্থতা থেকেই আপনি শিখতে পারেন। এটাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।
নতুন যেকোনো পরিবেশ, হতে পারে আপনার কর্মস্থল, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা নতুন কোনো পরিবার, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মকানুন জেনে নিন। এটা ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। এর ফলে আপনাকে বিব্রতকর কোনো পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।
* অতীতকে যেতে দিন
কিছু ক্ষেত্রে অতীতকে যেতে দিন। যা হয়েছে তাকে আগলে না রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন। প্রয়োজনে কারও সঙ্গে আলোচনা করুন।
আর সব সময়ই চেষ্টা করুন পরবর্তী সময়ে এই ভুলগুলো না করার। কেননা একই ভুল বারবার করার ফলে আপনি নিজেও কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন। তাই ভুল থেকেই শেখার চেষ্টা করুন। লজ্জা মনের ভেতর না রেখে সামনে যাতে এমন না হয় তেমন পদক্ষেপ নিন।

ভুল থেকেই শেখার মানসিকতা রাখুন।