কারারক্ষী পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়া চলছে

এ পদে নারী ও পুরুষ উভয় প্রার্থীই আবেদন করতে পারবেন। ছবি: সংগৃহীত
এ পদে নারী ও পুরুষ উভয় প্রার্থীই আবেদন করতে পারবেন। ছবি: সংগৃহীত

‘রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ’ এই মূলমন্ত্র নিয়ে কারা প্রশাসন দেশের কারাগারসমূহে আগত বিপথগামী লোকদের সঠিক প্রেষণা প্রদানের মাধ্যমে তাদের ভুল বুঝতে সহায়তা করা ও সংশোধন করা এবং বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে সমাজে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সম্প্রতি কারা অধিদপ্তর কারারক্ষী পদে লোক নেবে বলে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে। এ পদে পুরুষ ও মহিলা উভয় প্রার্থীই আবেদন করতে পারবেন। আগ্রহী প্রার্থীরা টেলিটক প্রি-প্রেইড মোবাইল ফোন থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত নিয়মানুযায়ী নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধন ফি জমাদানের শেষ সময় ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রাত ১২টা পর্যন্ত। ভর্তির তারিখ ও স্থান পরবর্তী সময়ে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

জেলা কোটাসমূহ: পুরুষ কারারক্ষীর ক্ষেত্রে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, বাগেরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ব্যতীত অন্য সব জেলার প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। অন্যদিকে, মহিলা কারারক্ষীর ক্ষেত্রে শুধু ঢাকা, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, খুলনা, যশোর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, ভোলা, বরগুনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের যোগ্যতা: বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এ পদে আবেদন করতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বয়স মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ব্যতীত অন্য সব কোটার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ০১-০২-১৮ তারিখে সর্বনিম্ন ১৮ এবং সর্বোচ্চ ২১ বছরের মধ্যে হতে হবে। শুধু মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে বয়স একই তারিখে ১৮ থেকে ৩২ বছর থাকতে হবে। প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক ও অবিবাহিত হতে হবে। প্রার্থী যে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা, কেবল সেই জেলার প্রার্থী হিসেবে এ পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আর শারীরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে পুরুষ প্রার্থীদের উচ্চতা কমপক্ষে ১.৬৭ মিটার, বুক কমপক্ষে ৮১.২৮ সে.মি. এবং ওজন কমপক্ষে ৫২ কেজি হতে হবে। অন্যদিকে, মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা কমপক্ষে ১.৫৭ মিটার, বুক ৭৬.৮১ সে. মি. এবং ওজন কমপক্ষে ৪৫ কেজি হতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: শারীরিক মাপ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় প্রার্থীকে প্রতিটি সার্টিফিকেটের মূল কপির সঙ্গে অতিরিক্ত ১ কপি সত্যায়িত ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে। এ ছাড়া নমুনা ফরমের অনুকরণে পূরণকৃত আবেদনপত্রের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বা সাময়িক সনদের মূল কপি, সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত চারিত্রিক সনদের মূল কপি, জেলার স্থায়ী বাসিন্দা প্রমাণস্বরূপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মেয়র বা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে স্থায়ী নাগরিকত্বের সনদের মূল কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি, ৪ কপি সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবিসহ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হবে।

বাছাই পদ্ধতি: প্রার্থীদের প্রথমে শারীরিক মাপ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের একই দিনে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের ৭০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। লিখিত পরীক্ষা প্রসঙ্গে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যেহেতু এ পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস চাওয়া হয়েছে, তাই এসএসসি উত্তীর্ণের প্রশ্নের মান যে ধরনের হয়ে থাকে, লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন তেমনই হবে।’ তিনি আরও জানান, লিখিত পরীক্ষার বিষয় থাকবে চারটি—বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আবার ৩০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। উভয় পরীক্ষায় আলাদাভাবে ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। তবে জেলার নিয়োগযোগ্য প্রকৃত শূন্য পদের বিপরীতে কোটাভিত্তিক মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হবে।

এ পেশার দায়দায়িত্ব: ২০০৮ সালে কারারক্ষীপদে নিয়োগ পান তানভীর বিশ্বাস। তিনি এখনকারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, একজন কারারক্ষীকে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। জেলে আসা বন্দীদের নিয়েই তাঁদের কাজ করতে হয়। জেলের ভেতরে থাকা বন্দীরা যেন কোনো ধরনের অপকর্মে লিপ্ত না হয়, এ বিষয়ে কারারক্ষীদের খেয়াল রাখতে হয়। এ ছাড়া বন্দীদের মধ্যে খাবার বিতরণ, বন্দীদের চিকিৎসায় নানাভাবে সহযোগিতা করেন কারারক্ষীরা। বন্দীদের করা ভুল সংশোধনের জন্য ভালো ব্যবহার ও শিক্ষামূলক তথ্য দিয়ে তাঁদের ভালো মানুষে পরিণত করাই কারারক্ষীদের কাজ।

বেতন–ভাতা ও সুবিধাদি: চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত একজন কারারক্ষী জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৯ হাজার টাকা স্কেলে বেতন পাবেন। এ ছাড়া বিধি মোতাবেক প্রাপ্য ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে। আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, একজন কারারক্ষী তাঁর দক্ষতা ও যোগ্যতা এবং বিভিন্ন বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী প্রধান কারারক্ষী, প্রধান কারারক্ষী, সর্বপ্রধান কারারক্ষী, সার্জন ইন্সপেক্টর পর্যন্ত হতে পারবেন।

এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যাবে এই লিংকটিতে।