শেষ সময়ের প্রস্তুতি

অনেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদানের স্বপ্ন দেখেন। ভালো বেতন, সামাজিক মর্যাদা ও নানা আর্থিক সুযোগ-সুবিধার কারণে তরুণদের টানে এই চাকরি।

তারা নিশ্চয় ইতিমধ্যে আবেদন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য দিন গুনছেন। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর আশায়, অর্থাৎ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার প্রত্যাশায় শুধু স্বপ্ন দেখলেই চলবে না; শেষ সময়ের প্রস্তুতি হিসেবে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে এবং থাকতে হবে সঠিক দিকনির্দেশনা। এ জন্য নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে এখন থেকেই যথাযথ প্রস্তুতির বিকল্প নেই। স্বপ্ন পূরণের এ পর্যায়ে ঘণ্টাব্যাপী এমসিকিউ পরীক্ষা হলো লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জনের ধাপমাত্র। স্বাভাবিকভাবেই মনস্তাত্ত্বিক চাপ অনুভূত হবেই। অনেক সময় এই চাপের জন্যই আমরা আমাদের জানা উত্তরগুলো ভুল করে আসি অথবা ওএমআরশিটে উত্তর দাগাতে গিয়ে ভুল করে থাকি। মনে রাখতে হবে এমসিকিউ পরীক্ষা হলো শুধু টিকে থাকার লড়াই।
১০০টি এমসিকিউ প্রশ্নের জন্য সময় পাওয়া যাবে মাত্র ৬০ মিনিট (প্রতিটির জন্য গড়ে ৩৬ সেকেন্ড), যা মনে হবে প্রয়োজনীয় সময়ের তুলনায় খুবই কম। আবার প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা হবে ০.২৫ নম্বর। সুতরাং সময়ের যথোপযুক্ত ব্যবহার এবং প্রশ্ন বাছাই করে উত্তর দিতে না পারলে ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে কাঙ্ক্ষিত এ সুযোগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি, গণিত বা অ্যাপটিটিউড টেস্ট, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার প্রযুক্তি—এ পাঁচটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। সবার প্রতি পরামর্শ, এ পাঁচটি বিষয়ের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করুন। সিলেবাসের যে বিষয়গুলো আপনার কাছে মনে হচ্ছে পরীক্ষার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া দরকার, সেই বিষয়গুলোর ওপর জোর দিন। আমরা প্রত্যেকে কোনো না কোনো বিষয়ে দুর্বল; সেই দুর্বল বিষয়টিতে বেশি বেশি সময় দিয়ে নিজের দুর্বলতাকে কমিয়ে ফেলুন। বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতাগুলো কমে গেলে মনোবল বৃদ্ধি পাবে। আর এই মনোবলই আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

পড়াশোনার পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সমাধানের মাধ্যমে নিজেকে এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করুন। বিগত বছরের এসব প্রশ্ন সমাধান করলে দেখা যাবে বাংলা হতে প্রায় ২০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে, যা বাংলা সাহিত্য এবং ব্যাকরণবিষয়ক। বাংলা বানান শুদ্ধিকরণ, প্রবাদ প্রবচন, বাগধারা, সদ্ধি, সমাস, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, এক কথায় প্রকাশ, বাক্য শুদ্ধিকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাকরণের এই অংশগুলো পড়াশোনার জন্য নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ খুবই সহায়ক। ইংরেজিতে প্রায় ২০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে এর মধ্যে ১০টি ভোকাবলারির ওপর ভিত্তি করে সিনোনিম, অ্যান্টনিম অথবা অ্যানালজি এবং বাকি ১০টি এমসিকিউ প্রশ্ন ইংরেজি ব্যাকরণ থেকে করা হয়।

এ ক্ষেত্রে দৈনিক ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস এবং বাজারে প্রাপ্ত ভালো মানের যে ভোকাবলারির বই আছে তা নিয়মিতভাবে চর্চার মাধ্যমে ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়িয়ে তুলুন। এই দক্ষতা ইংরেজি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য এমসিকিউ প্রশ্নের অপশনগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে সঠিক উত্তরটি খুঁজে বের করার জন্য নিজেকে বিশেষভাবে সাহায্য করবে। আনুপাতিকভাবে গণিতে বেশি সময় লাগে। এখানে ৩০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে। সাধারণ গণিতের পাশাপাশি গাণিতিক বিশ্লেষণী যাচাইয়ের জন্য অ্যাপটিটিউড টেস্ট অংশে গ্রাফ, ছক, টেবিল বা বর্ণনা দেওয়া থাকে, যা থেকে উত্তর দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ম্যাথগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে এবং আগে থেকেই ক্যালকুলেটর ছাড়া অঙ্ক সমাধানের অনুশীলন করতে হবে। সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রায় ২০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে। এ জন্য সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো জানতে হবে এবং মনে রাখার জন্য ছোট করে নোট করা যেতে পারে, যা হবে খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে।

সবশেষে বেসিক কম্পিউটার, এখান থেকে প্রায় ১০টি এমসিকিউ প্রশ্ন আসে। নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারলে যে কেউ এ অংশে পূর্ণ নম্বর পেতে পারেন। তাই বিগত বছরের কম্পিউটারের প্রশ্নগুলোর উত্তর ভালোভাবে আয়ত্ত করুন এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সম্ভাব্য কী কী প্রশ্ন হতে পারে, সেই বিষয়গুলোর ওপর সঠিক ধারণা রাখুন।

লেখক: সহকারী পরিচালক, ২০১৫ ব্যাচে সম্মিলিত মেধায় প্রথম