বসন্ত নিয়ে যত ভুল

বসন্ত এসে গেছে—এই কথাটা শুনে এখন অনেকেই পুলকিত হন, আনন্দিত হন। একটা সময় ছিল যখন বসন্ত কিংবা ওলা ওঠা হয়েছে শুনলেই সবার পিলে চমকে যেত। শত শত মানুষ মারা যেত এই রোগে। সময় পাল্টেছে এখন। পৃথিবী থেকে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়ে গেছে বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেই সব ভয়ংকর সময় আমরা পেরিয়ে এলেও বসন্ত নিয়ে আমাদের মনে বিভ্রান্তি রয়েই গেছে। সেই সব বিভ্রান্তি সম্পর্কে জানার আগে বসন্ত রোগটি সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া যাক।

গুটিবসন্ত নির্মূল হওয়ায় এখন মূলত জলবসন্তই হয়। এটি ভ্যারসিলো জস্টার ভাইরাসের কারণে হয়। এই রোগে শরীর ম্যাজম্যাজ করে, মাথাব্যথা, গা-হাত-পা ব্যথা হয়। জ্বর এবং সর্দি-কাশিও হয়। এরপর শরীরে ঘামাচির মতো কিছু উঠতে দেখা যায়। তারপর সেটা একটু পর বড় হতে থাকে এবং ভেতরে পানি জমতে থাকে। এভাবে পুরো শরীরে বিশেষ করে বুকে–পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো পরে শুকিয়ে ঝরে পড়ে।
বসন্ত হলে খাবারদাবার নিয়ে বিভ্রান্তি সবচেয়ে বেশি হয়। অনেকেই এ সময় মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবার বন্ধ করে দেন। এ ধারণা অমূলক। তবে অকাট্য প্রমাণ না থাকলেও আরজিনিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন চকলেট, ওটস, গমের আটা, নারকেল খেতে নিষেধ করেন কেউ কেউ। অপর দিকে লাইসিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, গরু ও মুরগির মাংস, ফল ও সবজি বেশি খাওয়া উপকারী। পানিও প্রচুর পান করতে হবে। মুখের তালু ও অভ্যন্তরে পক্সের গুটি দেখা দেওয়ায় এ সময় ঝালযুক্ত খাবার কিংবা শক্ত খাবার না খাওয়ানোই ভালো।

অনেকের ধারণা, ত্বকের ওপর সৃষ্ট শুকনো খোসাগুলো রোগের উৎস। এদের পুড়িয়ে ফেলতে হবে। অথচ সত্যটি হলো, ত্বকের ক্ষত কাঁচা অবস্থাতেই রোগটি সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা সর্বাধিক। সম্প্রতি বসন্ত থেকে সেরে উঠেছে এমন শিশুদের কিছুদিন সূর্যালোকের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে হবে৷

জলবসন্ত হওয়ার পরও নিয়মিত গোসল করা যায়। এতে কোনো সমস্যা হয় না। গোসল শেষে শরীর ঘষে মোছা যাবে না, আলতো করে মুছে নিতে হবে। পক্সের দাগ বা ক্ষতের চিহ্ন কমানোর জন্য অনেকেই ডাবের পানি দিয়ে গোসল করে থাকেন। এ ধরনের

কোনো চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত নয়। স্বাভাবিক পানি দিয়েই গোসল করানো যাবে।
জলবসন্ত দেখা দিলে ত্বকের ক্ষতটি কোনোক্রমেই চুলকানো যাবে না। চুলকালে স্থায়ীভাবে দাগ পড়ে যেতে পারে৷ এ জন্য শিশু জলবসন্তে আক্রান্ত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তার আঙুলের নখ ছোট করে কেটে দিন৷ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। জলবসন্ত সাধারণত ছোঁয়াচে রোগ। রোগীকে প্রথমত আলাদা ঘরে রাখতে হবে। রোগীর ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রতিদিন বিছানার চাদর বদলাতে হবে। মূলত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে আর পুষ্টিকর খাবার খেলে কয়েক দিনের মধ্যেই এই রোগ ভালো হয়ে যায়।

লেখক: কনসালট্যান্ট ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ