চুলের সুস্থতায়

একটু যত্নেই হবু ও নতুন মায়েদের চুল পড়া সমস্যা কমে যাবে। মডেল: হৃদি, ছবি: সুমন ইউসুফ
একটু যত্নেই হবু ও নতুন মায়েদের চুল পড়া সমস্যা কমে যাবে। মডেল: হৃদি, ছবি: সুমন ইউসুফ

সন্তান পেটে থাকার সময় তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি শারমিন আক্তারের। কিন্তু জন্মের পর থেকেই প্রবলভাবে শুরু হয়েছে চুল পড়া। তবে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্বও দিচ্ছেন না তিনি। শারমিনের ধারণা, সব মায়ের চুল পড়ে। এবং সেটা রোধ করার কোনো উপায় নেই। সত্যিই কি তাই? নাওয়া–খাওয়ারই যখন সময় নেই, সেই সময়ে নতুন মায়ের জন্য চুলের বাড়তি যত্ন নেওয়াটা কষ্টকর। ফলে শুরু হয় চুল পড়া। তবে একটু চেষ্টা করলেই রোধ করা সম্ভব এই সমস্যা।

হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন ও হেয়ার কেয়ার ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী আফরিন মৌসুমি বলেন, সন্তান জন্মের সময়ে যে ধকলটা যায়, তাতে মায়ের শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি পড়ে। ফলে শুরু হয় চুল পড়া। এ জন্য মায়েদের গর্ভকাল থেকে শুরু করে সন্তানের ১ বছর বয়স পর্যন্ত ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে ক্যালসিয়াম। এই দুইয়ের অভাবেই চুল পড়া শুরু হয়।

সন্তান হওয়ার পরে অনেকেই চুল পড়া সমস্যায় ভোগেন। ছেলে আদিয়ানের সঙ্গে মা হৃদি
সন্তান হওয়ার পরে অনেকেই চুল পড়া সমস্যায় ভোগেন। ছেলে আদিয়ানের সঙ্গে মা হৃদি

এ সময় ভিনেগার মিশিয়ে নিয়মিত চুল শ্যাম্পু করতে হবে। নতুন মা মাসে কয়েকবার একটু গরম তেলের মালিশ নিতে পারেন। সপ্তাহে এক দিন আমলকী ও মেথি মিশিয়ে হেয়ার প্যাক লাগাতে পারেন। আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে চুলটা শুকিয়ে নিন।

ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সাইকা শহীদ বলেন, গর্ভকালীন শরীরে যেসব হরমোন থাকে, সন্তান জন্মের পরে সেসব চলে যায়। সন্তান জন্মের পরে যাদের ঋতুস্রাব হয়ে যায়, তাদের হরমোন ব্যালান্স হয়ে যায়। ফলে চুল পড়া কমে। ক্যালসিয়াম আর বায়োটিনের অভাবে চুল পড়ে। এ সময় মাকে কিছু সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি আর ক্যালসিয়ামের সমন্বয় হলে চুলটা ঠিক হয়ে যায়। তবে সেটা অবশ্যই কোনো বিশেষজ্ঞর সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। তা ছাড়া সন্তানের জন্মের পরে অনেক মা খুব বিষণ্ন হয়ে পড়েন। দেখা দেয় ঘুমের অভাব। এসব কারণেও চুল পড়ে যায়।

সপ্তাহে এক দিন চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন
সপ্তাহে এক দিন চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন

অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী জানালেন এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণের উপায়, আমাদের দেশের অধিকাংশ মায়েরই ডি–এর উৎস খুবই অভাব। এর উৎস সূর্যের রশ্মি। খাবার থেকে মাত্র ১৫ শতাংশ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। গর্ভকালে মায়ের ভিটামিন ডি আর ক্যালসিয়ামের একটি চাহিদা থাকে। সে জন্য গর্ভকালের শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শে ডি আর ক্যালসিয়াম লেভেল পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। এরপর কোনো সাপ্লিমেন্ট দরকার হলে খেতে হবে। ভিটামিন ডি–এর জন্য সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে একবার রোদে যেতে পারেন। মা যেন এই সময়ে প্রোটিনযুক্ত খাবারটা বেশি খান, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিন দুই গ্লাস দুধ অথবা দই, ১টা ডিম, একটা কলা ও গাঢ় রঙের শাকসবজি (তেলসহ) যদি মা খান, তাহলে তাঁর শরীরের চাহিদা পূরণ হবে। তারপরও কোনো পুষ্টির ঘাটতি থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে চুল পড়া কমানো সম্ভব।

সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার সময় থেকেই মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন এই পুষ্টিবিদ। পুষ্টিবিদ বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নিজের অবস্থা জানালে পরিকল্পিতভাবে নিজের পুষ্টিচাহিদা পূরণ করতে পারবেন মা। ফলে কমবে চুল পড়াও।