নতুন মায়ের আরামের পোশাক

নতুন মায়ের পোশাক হতে হবে আরামদায়ক। মডেল: শ্রাবণ্য ও তাঁর ছেলে শুদ্ধ, সাজ: রেড, পোশাক: আড়ং, ছবি: সুমন ইউসুফ
নতুন মায়ের পোশাক হতে হবে আরামদায়ক। মডেল: শ্রাবণ্য ও তাঁর ছেলে শুদ্ধ, সাজ: রেড, পোশাক: আড়ং, ছবি: সুমন ইউসুফ

হবু কিংবা নতুন মায়ের যত্নে সব সময়ই থাকে সচেতনতা। তাঁর খাবার, দৈনন্দিন চলাফেরায় দেওয়া হয় বাড়তি নজর। হবু ও নতুন মা দুজনের জন্যই পোশাক গুরুত্বপূর্ণ। কর্মজীবী মায়েদের বেলায় মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হয়ে যায় ছয় মাস পরই। কিন্তু তখন নতুন মায়ের ভূমিকা তাঁর চলতেই থাকে। কর্মক্ষেত্র ছাড়া সব জায়গাতেই সন্তান থাকে মায়ের সঙ্গে। শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে তখনো কিছুটা অস্বস্তিও কাজ করে। পোশাকের কাটছাঁট, কাপড় হতে হবে আরামদায়ক। অন্তত বিশেষজ্ঞদের মত সেটাই।

হবু ও নতুন মায়ের পোশাক কেমন হওয়া উচিত কর্মক্ষেত্র, বাড়ি ও দাওয়াতে—চিঠি ও ই-মেইলে নকশার অনেক পাঠক জানতে চেয়েছেন। সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতেই নকশার এই আয়োজন।

হবু ও নতুন মায়ের পোশাকের কাটছাঁটে খুব বেশি পরিবর্তন হবে না বলে জানান ফ্যাশন ডিজাইনাররা। তবে এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সন্তানকে বুকের দুধ পান করানো। সেটা যেকোনো জায়গা বা যেকোনো সময়ই হতে পারে। এ জন্য পোশাকে সেই সুবিধা থাকাটা আবশ্যক।

দাওয়াতে বেছে নিতে পারেন শাড়ি। শাড়ি: সাদাকালো
দাওয়াতে বেছে নিতে পারেন শাড়ি। শাড়ি: সাদাকালো

দাওয়াতের পোশাক

এ সময় খুব বেশি দিনের নয়। আঙরাখা, বাস্টলাইন পর্যন্ত চাপা হয়ে ঘের দেওয়া, আনারকলি, লেয়ার, ড্রেপ দেওয়া পোশাক মানাবে ভালো। এ ছাড়া এমব্রয়ডারি করা অথবা হাতের কাজের টিউনিক মানিয়ে যাবে। যাঁরা এই সময়ে শাড়ি পরতে চান, তাঁরা ব্লাউজের পরিবর্তে ওপরে লেয়ার হিসেবে কোটি পরতে পারেন। লম্বা, মাঝারি, খাটো সব রকমেরই কোটি শাড়ির সঙ্গে ভিন্ন লুক আনবে। লম্বা হাতার ব্লাউজে এ সময় অনেকে স্বস্তি পান না। এ ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন হাতাকাটা, হাতির কানের মতো, ঘটি হাতা ইত্যাদি। ইলাস্টিসিটি আছে এমন কাপড় ব্যবহার করেও টপ ও ব্লাউজ বানাতে পারেন।

মাতৃত্বকালীন কিংবা মা হওয়ার পর পর পোশাকের ব্যাপারে আরামের কথাই ভাবতে হবে সবার আগে। তাই কাপড়ের উপাদান এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

ফ্রক কাটের টিউনিক আরাম দেবে বাড়ি অথবা কর্মস্থানে
ফ্রক কাটের টিউনিক আরাম দেবে বাড়ি অথবা কর্মস্থানে

কর্মক্ষেত্রে আরাম

সন্তান হয়ে গেলেও শারীরিক গঠনে কিছুটা থলথলে ভাব থাকে। পাঞ্জাবি কাটের কামিজ মানাবে। সুতি কাপড়ের ওপর কোনো কথা নেই। আমাদের দেশে এখন অনেক ধরনের সুতির কাপড় তৈরি হচ্ছে ও পাওয়াও যাচ্ছে বলে জানান তাহসীনা শাহীন। স্মক (কোমরে মোটা ইলাস্টিক দেওয়া) করা ধুতি সালোয়ার, চুড়িদার, ঢোলা প্যান্ট মানিয়ে যাবে। পাঞ্জাবি কাট ও স্মক দেওয়া প্যান্ট দুটোই আরাম দেবে নতুন মাকে।

আড়ংয়ের ব্র্যান্ড তাগার ডিজাইনার দলের সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেল, কর্মক্ষেত্রের পোশাকের জন্য আমাদের ‘নিট ওয়েস্ট ব্যান্ড’ দেওয়া প্যান্ট আছে যা সহজেই পরা যায়। সাধারণত প্যান্টের কোমরে ইলাস্টিক দেওয়া থাকে বা বেল্ট পরতে হয় যা অস্বস্তিকর। নিট ওয়েস্ট ব্যান্ড অনেক আরামদায়ক। সেই সঙ্গে লম্বা শার্ট অথবা টিউনিক সহজেই মানিয়ে যাবে অফিসের পোশাক হিসেবে। বাস্টলাইনের পর রুমাল ছাঁট, ফ্রিল দেওয়া, সামনে টিকিং দেওয়া লম্বা কুর্তা অথবা কামিজও পরা যেতে পারে। বাস্টলাইনের পর ঘের দেওয়া কুর্তা ভালো লাগবে। এতে করে পেটের ফোলা ভাব কম বোঝা যাবে।

কাজের জায়গায় মানাবে লম্বা কুর্তা
কাজের জায়গায় মানাবে লম্বা কুর্তা

বাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্য

বাড়ির পোশাক হতে হবে আরামের। ম্যাক্সি, স্মক দেওয়া প্যান্ট, ধুতির সঙ্গে সুতি বা লিনেনের কুর্তা, ঢিলেঢালা লম্বা গেঞ্জি পরতে পারেন। ঢিলা গলার জামাও পরা যায়। বাড়িতে পরার পোশাকগুলোর সামনে দুই দিকে প্লিট দেওয়া লুকানো চেইন লাগাতে পারেন। এতে করে সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোয় সুবিধা হয়। বাইরে পরার পোশাকেও এই সুবিধা যোগ করতে পারেন।

ডিজাইনার তাহসীনা শাহীন জানান, বাড়ির পোশাক অনেক আরামের হতে হবে। অনেকেই ম্যাক্সি পরতে পছন্দ করেন। প্যান্টের সঙ্গে মিডি ম্যাক্সিও পরা যায়। হাতাকাটা ম্যাক্সিও হতে পারে। কারও সামনে হঠাৎ যেতে হলে ওপরে সামনে খোলা কোটি বা জ্যাকেট পরে নেওয়া যায়। কুর্তা, ড্রেস, ম্যাক্সির সামনে প্লিট দেওয়া লুকানো চেইন না থাকলেও সামনে দিয়ে বোতাম খোলার ব্যবস্থা থাকলে ভালো।

দাওয়াতের পোশাকে থাকতে পারে এমব্রয়ডারি বা হাতের কাজ
দাওয়াতের পোশাকে থাকতে পারে এমব্রয়ডারি বা হাতের কাজ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শারমিন মাহমুদ বলেন, ‘সন্তান হওয়ার আগে ও পরে মা অবশ্যই হালকা ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন। বিশেষ করে সন্তান প্রসবের পর ম্যাক্সি বা সন্তানকে সহজে দুধ পান করানো যাবে এমন পোশাক পরাই ভালো’। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যাঁদের সন্তান হয় তাঁদের তিন মাস পর্যন্ত কোমরে বেল্ট পরার পরামর্শ দেওয়া হয়। বেল্ট পরার উদ্দেশ্য হলো ক্ষতস্থানকে সাপোর্ট দেওয়া। চলাফেরা, হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় কাটা স্থানে যেন চাপ না পড়ে। তাই হাঁটাচলা করার সময় বেল্ট পরতে হবে। খাবার সময়, শোয়ার সময় বেল্ট খুলে রাখাই ভালো।