ফেসবুকে ব্লক, বহিষ্কার, অতঃপর?

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নওশীন সালসাবিল। ফেসবুক আর স্ন্যাপচ্যাট থেকে শুরু করে ইনস্টাগ্রাম-সব সামাজিক মাধ্যমেই যুক্ত তিনি। নওশীনের বন্ধু আদ্রিতা (ছদ্মনাম)। ফেসবুকে একটি ছবি দেওয়ার জের ধরে দুজনের মান-অভিমান চলছে। অভিমানে আদ্রিতা ‘আনফ্রেন্ড’ করে দেয় নওশীনকে। ফেসবুক আর মেসেঞ্জারে দুজনের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। ক্লাসে যখন দুজনের দেখা হয় তখনই ঠিক সবার সামনে কথাবার্তা চলে দুজনের। দিন কয়েক পরে বাস্তবেও দুজনের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে, একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান (ছদ্মনাম) ঊর্ধ্বতন এক বসকে বন্ধুতালিকা থেকে সরিয়ে দিয়ে পড়েছেন বিপদে। সেই বস এসে জিল্লুরের পেশাদারত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বস যেন তাঁর ফেসবুক কর্মকাণ্ড না দেখতে পারেন, তা বন্ধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। ব্লক করা কিংবা আনফ্রেন্ড করার মতো ঘটনা হরহামেশাই ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সময় অন্যদের ব্লক করতে হয় কিংবা আনফ্রেন্ড। আবার নিজেরাও এই ব্লক বা আনফ্রেন্ডের মধ্যে পড়ে যান। যে কেউই যে কাউকে ব্লক বা আনফ্রেন্ড করতে পারে। এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক আচরণ দেখানো উচিত নয়। অন্যের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সম্মান দিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।

ব্লক করবেন কখন?
অন্যের মতামত আপনার পছন্দ না-ও হতে পারে, অন্যের ছবি আপনার বিরক্তি তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে সেই মানুষের ছবি বা পোস্ট আপনার নিউজফিড বা হোমে না আসে, সে জন্য ফিল্টার ব্যবহার করা যায়। সমাজবিদ্বেষী, আক্রমণাত্মক, ব্যক্তিগত বিদ্বেষী পোস্ট ও ছবি শেয়ার করে এমন বন্ধু বা সহকর্মীদের ব্যক্তিগতভাবে বার্তা পাঠিয়ে আপনার সংবেদনশীলতার কথা তাকে জানানো যেতে পারে। আপনার অনুভূতি ও মতামতের প্রতি সম্মান জানিয়ে সেই মানুষের কাছ থেকে ইতিবাচক জবাব প্রত্যাশা করুন।

ব্লক হলে কী করবেন?
হুট করে দেখলেন, আপনি কারও বন্ধুতালিকায় নেই। সে ক্ষেত্রে তাঁকে ফোন করে কিংবা সামনাসামনি দেখা করে গালমন্দ করতে দেখা যায় অনেককে। এমনটা কখনোই করা ঠিক নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসনে বললেন, আপনি যাঁর বন্ধুতালিকা থেকে বাদ পড়লেন, তাঁকে কোনোভাবে কোনো দিন কষ্ট দিয়েছেন কি না, তা ভেবে দেখুন। কিংবা আপনার কোনো বাক্য তাঁর সম্মানে লেগেছে কি না, তা ভেবে দেখুন। আপনার ভুলত্রুটি থাকলে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রত্যাশা করুন। সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে নিজের ভুলত্রুটি স্বীকার করে নিন। যিনি ব্লক করেছেন কিংবা আনফ্রেন্ড করেছেন, তাঁর মতামতকে সম্মান জানিয়ে তাঁর প্রতি উষ্মা বা কোন ধরনের ক্ষিপ্ত আচরণ প্রদর্শন করবেন না। পরমতসহিষ্ণুতা চর্চা করুন।

যোগাযোগের আগে ভাবুন
আপনার ফেসবুক কিংবা ইনস্টাগ্রামে কোন বন্ধুকে যুক্ত করবেন, কিংবা কার সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন, তা ভেবে তারপরে সংযুক্ত হোন। আপনার মতামতকে যিনি সম্মান দিতে পারে, আপনার সৃজনশীলতা ও ইতিবাচক জীবনের জন্য যাঁরা যুক্ত হলে আপনি উপকৃত হবেন, তাঁদেরই যুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিন। বন্ধুসংখ্যা বাড়ানোর হেঁয়ালিপনার দিকে কখনোই ছুটবেন না। ইন্টারনেট দুনিয়াতে সংযুক্ত ও সম্পর্ক স্থাপনের আগে অন্য মানুষটির মনস্তত্ত্ব বুঝে আপনি সিদ্ধান্ত নিন। সাইবার বুলিং করেন, নেতিবাচক মতাদর্শে বিশ্বাসী এমন মানুষদের এড়িয়ে চলতে শিখুন।

সংবেদনশীলতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিন
আপনার সহকর্মী কিংবা কোনো কারণে পরিচিত বলেই যে আপনার সঙ্গে কাউকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত থাকতেই হবে, এমনটা ভাববেন না। অনেকেই ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামকে অত্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেন, তাঁদের ভাবনাকে সম্মান দিন। ফেসবুকের কোনো ছবি বা পোস্টের জোরে কাউকে বাস্তব দুনিয়াতে বিপাকে ফেলবেন না। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সহনশীলতা ও সংবেদনশীলতা বুঝে নিজের ও অন্যদের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিন।