নিষ্পত্র শিমুল, পলাশ, পারিজাতের ডালে যখন দু-একটি ফুল উঁকি দিতে শুরু করে, ধারেকাছে কোথাও কোকিল ডাকে, অবচেতন মন বুঝতে পারে বসন্ত দরজায় কড়া নাড়ছে। ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে বাতাসের গতিপ্রকৃতি। বনে বনে, গাছে গাছে পৌঁছে যাচ্ছে ফাগুনের বার্তা। কচি পত্রপল্লবে সুশোভিত হচ্ছে বৃক্ষরাজি। বনে বনে পুষ্পসাজে সজ্জিত হবে বসন্ত বৃক্ষগুলো। পলাশ, পারিজাত, মহুয়া বা শিমুল টবে গুঁজে বারান্দায় বামন আকারে সাজিয়ে হয়তো রাখা যাবে, তাতে ফুলের নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। আপনি যদি বারান্দায় এক টুকরো বাগানে বসন্তের স্বাদ পেতে চান, তাহলে টবেও কয়েকটি গাছ রাখতে পারেন। এসব গাছের জন্য বাড়তি কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন নেই। তবে প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে বারান্দায় পর্যাপ্ত রোদ রয়েছে কি না। টব প্রস্তুতের পদ্ধতি একই রকম। এবার দেখা যাক কোন কোন গাছ আমরা টবের জন্য নির্বাচন করব।
প্রথমেই মাধবীলতার কথা বলা যেতে পারে। তবে মাধবীর কলম সংগ্রহ করতে একটু ঝামেলা হতে পারে। কারণ, প্রকৃত মাধবী নার্সারির চারা বিক্রেতারা চেনেন না। তা ছাড়া চারাও দুর্লভ। সবাই মধু মঞ্জরি লতাকেই মাধবী বলে চালিয়ে দিচ্ছে। মাধবীর সুগন্ধি ফুলগুলো ফোটার জন্য দু-এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রথম দু-তিন বছর এ গাছের ডালপালা ছাঁটা যাবে না। তাহলে ফুল ফুটবে না। পরিচর্যা করতে হবে সঠিকভাবে।
নীলমণির কলম প্রায় সব নার্সারিতেই পাওয়া যাবে। ফুল ফোটার জন্য পর্যাপ্ত রোদ ও জলসেচ করতে হবে। এ দুটি ফুল ফাল্গুনের প্রথম ভাগেই ফুটতে শুরু করবে। প্রথমটির রং পাঁশুটে সাদা, দ্বিতীয়টি গাঢ় নীল। এরা বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠল লতার গাছ। বসন্তের বাগানে গুল্ম শ্রেণির কুন্দ ফুলও রাখা যেতে পারে। এটা ফুলবাগানকে আলোকিত করবে। বিখ্যাত কনকচাঁপা মাঝারি উচ্চতার গাছ হলেও এ গাছের সুবিধা হলো তিন-চার বছর বয়স থেকেই হলুদ-সোনালি রঙের ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে।
নার্সারিতে এ গাছের পরিচয় পেস্তা বাদামের গাছ। চারা পাওয়া খুব অসম্ভব কিছু নয়। বসন্তে প্রথমে পত্রহীন ডালপালাজুড়ে অসংখ্য ফুলে ভরে ওঠে গাছ। তারপর উজ্জ্বল তামাটে রঙের কচি পাতাগুলো সেই সৌন্দর্যকে আরও মোহনীয় করে তোলে। একইভাবে বারান্দায় সহস্রবেলি থাকতে পারে। এ গাছের গুচ্ছবদ্ধ পাঁশুটে রঙের ফুলগুলো নজরকাড়া। সর্বশেষ আরেকটি ফুলের কথা বলা যেতে পারে। ফুলটির নাম হাপরমালী। বহুবর্ষজীবী সুদর্শন লতানো গাছ। সুগন্ধি ফুলগুলো দেখতে বাটির মতো। ফোটে অজস্র। কলম সহজলভ্য নয়। বড় নার্সারিগুলো থেকে পাওয়া যেতে পারে। এই সব কটি ফুলই আমাদের বন-পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দা। তাই পরিচর্যার জন্য সাধারণ পদ্ধতিই যথেষ্ট। তবে পোকামাকড় যেন গাছের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।