ডাইনোসরের ডেরায়

ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা জায়গায় হঠাৎ করেই দেখা মিলবে ডাইনোসরের। ছবি: লেখক
ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা জায়গায় হঠাৎ করেই দেখা মিলবে ডাইনোসরের। ছবি: লেখক

চারপাশটা সবুজ। লাল মাটির উঁচুনিচু টিলা। এর মধ্য দিয়েই পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে জামমুড়া। কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের ১২ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নতুন ধরনের একটি পার্ক। ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা এই পার্কে ঢুকে পিলে চমকে যেতে পারে। হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর দেখা মিলবে এখানে! যাঁরা বেড়াতে ভালোবাসেন, তাঁরা নতুন কিছুই পাবেন।

কুমিল্লার এই বিনোদনকেন্দ্রের নাম ডাইনোসর পার্ক, যা ডাইনো পার্ক নামে পরিচিতি পেয়েছে। পার্কে চীন থেকে আনা পাঁচটি কৃত্রিম ডাইনোসর রাখা হয়েছে। সুইচ টিপলেই যারা গর্জন করে, লেজ নাড়ে আর চোখ ঘুরায়। ডাইনোসরগুলো পাহাড়ের উঁচুনিচু টিলার ওপর রাখা হয়েছে। এর পাশেই কৃত্রিম ঝরনা। প্রতিটি ডাইনোসরের নিচে ইতিহাস রয়েছে। নতুন প্রজন্মকে বিলুপ্ত ডাইনোসরের সম্পর্কে ধারণা দিতে এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

কুমিল্লা ও আশপাশের জেলার লোকজনকে নির্মল আনন্দ দেওয়ার জন্য মাশফিকা হোল্ডিংস লিমিটেড এই পার্ক তৈরি করেছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক পরিবারের চার ভাই ও তাঁদের বাবা এর উদ্যোক্তা। পার্কে প্রবেশপথে হেরিটেজের মতো তিনতলা ভবন রয়েছে। দিনের চেয়ে রাতের বেলায় এ পার্ককে আরও আকর্ষণীয় মনে হয়। কেবল ডাইনোসর দেখা নয়, এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইড। বড়দের জন্য রাইডের ফি ১০০ টাকা, ছোটদের জন্য ৫০ টাকা। আর পার্কে প্রবেশমূল্য ২০০ টাকা। এ ছাড়া যেকোনো প্রতিষ্ঠান চাইলেই এখানে পিকনিক কিংবা কর্মশালার আয়োজন করতে পারে। সমতল ভূমি থেকে এ পার্কের উচ্চতা ৪৫ ফুট ওপরে। তারও ওপরে রয়েছে প্যারিজ হুইল, যা আই অব লালমাই নামে পরিচিত। ওই রাইড থেকে ১০০ ফুট ওপরে লালমাই পাহাড়ের মনভোলানো রূপ দেখা যায়। ডাইনোসর দেখার পর দক্ষিণ দিকের টিলায় ওঠার জন্য ৪০টি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকবে।

বেড়ানোর ফাঁকে খাওয়ার জন্য এখানে রয়েছে দ্য হিল ক্যাফে রেস্টুরেন্ট। বাঁশের মাচার ওপর তৈরি ওই হোটেলে খেতে বসে প্রকৃতি দেখতে পারবেন। রোস্তোরাঁর এক পাশে আছে দ্য ডেক সাইড। যেখানে একসঙ্গে ১৩৫ জন বসতে পারে।

ছোট-বড়দের যত রাইড

আই অব লালমাইতে ১২টি বগি রয়েছে। যাতে ২৪ জন একসঙ্গে বসতে পারবে। অক্টোপাসে একসঙ্গে বসতে পারে ১৫ জন, মেরি গো রাউন্ডে ২৪ জন, সেলফ কন্ট্রোল প্লেনে ৮ জন, বাম্পার কারে ১০ জন এবং ড্রাগন কোস্টারে ২০ জন। শিশুদের জন্য আছে ১৩টি রাইড।

সম্প্রতি কথা হয় ডাইনো পার্কে বেড়াতে আসা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিলুপ্ত ডাইনোসরের গল্প এ প্রজন্মের তরুণদের জানাতে হলে এখানে নিয়ে আসতে হবে। অত্যন্ত সুন্দরভাবে কৃত্রিম ডাইনোসর এখানে স্থাপন করা হয়েছে।

ডাইনোপার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এইচ এম আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘চীনে ঘুরতে গিয়ে ডাইনোসর জাদুঘর দেখি। সেই ধারণা কাজে লাগিয়ে কুমিল্লায় দুই বছর ধরে এ কাজ করেছি। চীন থেকে লোক এনে এই রাইড ও ডাইনোসর বসানো হয়েছে। এটি আমাদের পারিবারিক উদ্যোগ।’

গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনোদনকেন্দ্রটি যাত্রা শুরু করে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে লালমাইতে পার্কটি স্থাপন করা হয়। ডাইনো পার্কে এসে আশপাশের শালবন বৌদ্ধবিহার, ময়নামতি জাদুঘর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বৌদ্ধ সভ্যতা নিদর্শন দেখা যাবে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলতলি অথবা নন্দনপুর এলাকা দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পার হয়ে কিছুটা সামনে গেলেই ডাইনো পার্ক। এ ছাড়া কুমিল্লা শহর থেকে ২২০ টাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করেও যাওয়া যায়। দল বেঁধে কিংবা ভেঙে ভেঙে গেলে কোটবাড়ি থেকেও কম ভাড়ায় যাওয়া যায়।