আম্মার ছবি একাল সেকাল

আরা নেওয়াজ বেগম। মায়ের জন্মস্থান জলপাইগুড়িতে বেড়াতে গিয়ে আলোকচিত্রী ছেলের তোলা মায়ের ছবি। গত ২৫ জানুয়ারি তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন
আরা নেওয়াজ বেগম। মায়ের জন্মস্থান জলপাইগুড়িতে বেড়াতে গিয়ে আলোকচিত্রী ছেলের তোলা মায়ের ছবি। গত ২৫ জানুয়ারি তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন

আম্মার ছবি চল্লিশের দশক থেকে নানারা তুলতেন আবার বাসাতেই ডেভেলপ ওয়াশ করতেন—সেই মজার মজার গল্প শুনেছি বিভিন্ন সময়। আমার ছবি তোলার মুহূর্তে, আম্মা সব সময় ভুলগুলো শুধরে দিতেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আম্মাকে নিয়ে বেড়াতে গেলাম তাঁর জন্মস্থান ভারতের জলপাইগুড়ি জেলায়। আম্মার শরীরটা বেশ খারাপ ছিল। রংপুর থেকে রওনা হয়ে বুড়িমাড়ি সীমান্তে পা রাখামাত্রই আম্মা সতেজ হয়ে উঠলেন। আম্মার অসুস্থতা কোথায়? সে তো দিব্যি সুস্থ! কে বলবে আম্মা অসুস্থ?

আম্মার স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থানে ঘুরছি আর আম্মার ছবি তুলছি। কিন্তু কোনোভাবেই ছবিতে হারাতে পারছি না মামা-নানাদের। যে ছবিই তুলি, আম্মা জানান এর থেকেও ভালো লোকেশন অমুক বন কিংবা পাহাড়ের ধারে। বুঝলাম আম্মার দেখার তালিকা অনেক বড়। আম্মার প্রথম স্কুল জলপাইগুড়ির ১৯২৮ সালের কদমতলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে খুঁজে বের করলাম মাসিমাকে। দুজনে দুজনকে দেখে জড়িয়ে ধরে সে কী কান্না, ঘণ্টাখানেক ধরে কান্না আর পুরোনো দিনের গল্প। থামাতে পারছি না, পারব কী করে! দুজনের এ মিলন তো প্রায় ৬০ বছর পর। সাধনা মাসিমা বলছিলেন, তাঁদের ছেলেবেলার কত স্মৃতি! সে সময় ধর্ম-বর্ণ নিয়ে কোনো হানাহানি ছিল না। সবাই সবাইকে চিনত ও ভালোবাসত। অসুস্থ মাসিমা আর আম্মা চোখ মুছে ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করছেন। কাজের সুবাদে নানা স্থানে যাওয়া ও দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। কিন্তু এমন আবেগতাড়িত দৃশ্য দেখিনি। আম্মার কোনো স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু আম্মা আমার সব আশা পূরণ করেছেন। আমার বড় বড় বিপদে আম্মার কারণে পার পেয়ে গিয়েছি। এখন আফসোস হয়, আম্মার সেরা ছবিটি তুলতে পারিনি। শেষ যাত্রায় আম্মার সেই ‍ঘুমানো সুন্দর মুখটার ছবি না তুললেও মনে আঁকা ছবিটি কোনো দিনই মুছে যাবে না।

আরা নেওয়াজ বেগম যখন ছোট, বাড়িতেই তোলা হতো ছবি
আরা নেওয়াজ বেগম যখন ছোট, বাড়িতেই তোলা হতো ছবি

লেখক: আলোকচিত্রী