বস কান না পাতলে কী করবেন

বসের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই রবিউলের মেজাজ তিরিক্ষি। একটি প্রকল্পের বিষয়ে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পুরোটা সময় নিজের মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন বস। একসময় রবিউল দেখেন, মোবাইল ফোনে কী যেন দেখে আপন মনে হাসছেন বস! ওদিকে বকবক করছেন রবিউল।

বসের এ ধরনের আচরণকে আভিধানিক ভাষায় বলা হয় ‘ফাবিং’। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কর্মী হয়তো কোনো জরুরি বিষয়ে কথা বলতে এসেছেন, কিন্তু তাতে মনোযোগ না দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোবাইলে ব্যস্ত। স্মার্টফোনের উদ্ভাবনের পর বিষয়টি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে।

কিন্তু কেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমন আচরণ করেন? এতে কর্মীদের ওপরই বা কী প্রভাব পড়ে?
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বেলর ইউনিভার্সিটির বিপণন বিভাগের অধ্যাপক জেমস রবার্টস ও মেরেডিথ ডেভিড সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। গবেষণাপত্রটির নাম ‘পুট ডাউন ইয়োর ফোন অ্যান্ড লিসেন টু মি: হাউ বস ফাবিং আন্ডারমাইনস দ্য সাইকোলজিক্যাল কন্ডিশনস নেসেসারি ফর এমপ্লয়ি এনগেজমেন্ট’। এই গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মস্থলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার মতো কাজ কর্মীদের সাফল্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

অধ্যাপক জেমস রবার্টস বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক ও কর্মীদের মধ্যকার সম্পর্ক অনেকটা বিয়ের মতো। তাঁদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং তাঁদের লক্ষ্যও এক হওয়া উচিত। রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মোবাইল ঘাঁটার অভ্যাস খুব ক্ষতিকর বলে এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সেই হিসেবে কর্মস্থলে ফাবিংয়ের মতো কাজেরও নেতিবাচক ছাড়া অন্য কোনো প্রতিক্রিয়া হতে পারে না।’

মোট ৪১৩ জন তত্ত্বাবধায়ক ও কর্মীর ওপর জরিপের ভিত্তিতে এই গবেষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘ফলাফলে দেখা গেছে, কর্মীদের উপস্থিতিতে যদি তত্ত্বাবধায়কেরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তবে তা কর্মীদের কাজে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’ আরও দেখা গেছে ফাবিংয়ের কারণে বসদের ওপর কর্মীদের আস্থা ও বিশ্বাস কমে যায়।

নতুন নয়
কর্মীদের প্রতি বসদের অমনোযোগিতার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এখন যেমন স্মার্টফোনের কারণে হয়, তেমনি আগেও হতো। তখন হয়তো দেখা যেত, কর্মী কথা বলছেন, আর বস কলম নাড়ানো বা অন্য কোনো নথি পড়ায় ব্যস্ত।

গবেষক জেমস রবার্টস বলেন, ‘আগেও এমন হতো। কিন্তু মোবাইল ফোন বেশি ক্ষতিকর। মোবাইল ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার সব মনোযোগ কেড়ে নেয়। আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কর্মীদের কিছু বার্তা দিতে এ ধরনের কৌশল ব্যবহার করতেন। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে এ কৌশল কাজ করবে না।’ তিনি আরও বলেন, তরুণ কর্মীদের ক্ষেত্রে এই কৌশল একেবারেই অকার্যকর।

কী করবেন
অধ্যাপক জেমস রবার্টস পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ফাবিং এড়াতে বস ও কর্মী—উভয়কেই সংবেদনশীলতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। এতে করে উভয় পক্ষই ফাবিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বুঝতে পারবে। তিনি আরও বলেছেন, তত্ত্বাবধায়কদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শুধু কাজের পরিমাণ হিসাবে না নিয়ে কর্মীদের কাছে তাঁদের ভাবমূর্তিকেও বিবেচনায় নিতে হবে।

অন্যদিকে যখন দেখবেন বস আপনার কথা শোনার বদলে অন্য কাজে ব্যস্ত, তখন কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। এগুলো হলো:

১. যা বলতে চান, তা স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরুন বসের কাছে। অনেক সময় কর্মীরা অগোছালোভাবে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন। এতে বিরক্ত হয়েও কিছু ক্ষেত্রে বসেরা হাতে মোবাইল তুলে নেন।

২. প্রত্যেকের কাছেই নিজেদের কাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনার কাজটিই সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু বসের হাতে তো অনেক কাজ থাকতে পারে। সুতরাং সুযোগ বুঝে নিজের কথা বসের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।

৩. অফিসে নানা রাজনীতি থাকে। এসব থেকে দূরে থাকাই ভালো। এতে হুট করে কোনো বসের কালো তালিকায় পড়ে যেতে পারেন। তা থেকে বস আপনার কথা শুনতে অনাগ্রহী হতে পারেন।

মূল কথা হলো, এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে অবশ্যই আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। মাথা গরম করে এমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বসবেন না, যাতে উল্টো আপনি দোষীর কাতারে পড়ে যান। এসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে একটু সময় লাগে। সুতরাং সময় দিন, ধৈর্য ধরুন। ঠকবেন না।

তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, সিবিএস নিউজ, আইবি টাইমস ও দ্য মুজে