ঈদের যুগল সাজ

ঈদে এবার নীল রঙের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। নকশার আয়োজনে মডেল হয়েছেন অভিনয়শিল্পী নাবিলা ও তাঁর স্বামী মো. জোবায়দুল হক। সালোয়ার কামিজ: হুমায়রা খান, শার্ট: ওটু, গয়না: কনক,  সাজ: ফারজানা মুন্নী, ছবি: কবির হোসেন
ঈদে এবার নীল রঙের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। নকশার আয়োজনে মডেল হয়েছেন অভিনয়শিল্পী নাবিলা ও তাঁর স্বামী মো. জোবায়দুল হক। সালোয়ার কামিজ: হুমায়রা খান, শার্ট: ওটু, গয়না: কনক, সাজ: ফারজানা মুন্নী, ছবি: কবির হোসেন
ঈদ সবার জন্যই আনন্দের। তা তিনি সাধারণ মানুষ আর তারকা হোন। সাধ্যমতো সবাই নিজেকে সাজান। আর বিয়ের পর যদি প্রথম ঈদ হয়, সেখানে যুগল পোশাক তো প্রাধান্য পাবেই। নাবিলা আর জোবায়দুল হকের পোশাকে এ কারণে থাকছে ঈদের যুগল সাজ।


জমকালো দাওয়াতের কথা ভেবেই এই পোশাকটিকে বানিয়েছেন হুমায়রা খান। কালো রঙের র‍্যাপ ব্লাউজটি মসলিনের তৈরি। সঙ্গে সোনালি রঙের ব্রকেডের তৈরি লম্বা স্কার্ট। উল নেই এমন স্যুট কাপড় দিয়েই তৈরি করা হয়েছে চেক নকশার ব্লেজারটি তৈরি করেছে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ওটু। পারিবারিক দাওয়াতের বাইরে রাতের অনুষ্ঠানের জন্য আদর্শ।

জাম রঙের কামিজের ওপর ভারী সুতার কাজ। কামিজের সামনের অংশটা কাটা। গলার কাছটায় লম্বাভাবে বোতামের সারি। বোতামও এবার পোশাকের নকশায় বেশ দেখা যাচ্ছে। চলতি ধারা অনুযায়ী কামিজের দুই দিকের ঝুল একটু বাড়িয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান ডিজাইনার মায়া রহমান। কামিজের ওপরে জরি আর জামরঙা সুতার কাজ। সিকোয়েন্সও আছে হালকা। গলার কাছটায় জ্যাকেট স্টাইলের মতো করে করা। ছেলেরা মূলত পাঞ্জাবি বলতে কালো, নীল আর সাদা রংটাকেই বেছে নেয়। তবে ঈদ বলে কথা। একটু উজ্জ্বল রং থাকতেই পারে। এ কারণেই জামরঙা কটি বেছে নেওয়া । বিশ্ব ফ্যাশনে এখন জন্তুর মোটিফ ব্যবহার করা হচ্ছে বেশ বলে জানালেন ফ্যাশন পরামর্শক আসিফ ইকবাল। কটির ওপর সুতার মধ্যে হাতির অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতটুকুতেই চলে এসেছে জমকালো ভাব। চাইলে বেগুনি ও সোনালি রঙের ছটাও রাখতে পারেন পাঞ্জাবিতে।

দেশীয় পোশাকই পছন্দ নাবিলার

বিয়ের আগে সাধারণ কাটের বা আনারকলি স্টাইলের কামিজটাই বেশি পছন্দ করতেন অভিনয়শিল্পী মাসুমা রহমান নাবিলা। ঈদের সারা দিন সেটা পরেই কাটিয়ে দিতেন। সাদা রংটিই কারণে–অকারণে নজর কেড়ে নেয় বেশি। কারণ, এটি নাবিলার পছন্দের রং। তবে কাহিনি এখন কিছুটা ভিন্ন। বিয়ের পর প্রথম ঈদ বলে কথা। সকালবেলা কাটিয়ে দেবেন শাড়ি পরেই। ঈদে যেই পোশাকটিই বেছে নেন না কেন, উপকরণ হতে হবে দেশীয়, জানান নাবিলা। সুতি, শিফন, নেট, মসলিনের ওপর থাকতে পারে হাতের কাজ অথবা ছাপা নকশা। তবে যে নকশাই থাকুক, সেটা হতে হবে অভিজাত। কামিজও কিনবেন তিনি। পেঁয়াজ, হালকা গোলাপি বা হালকা নীল রঙের দিকেই নজর থাকবে বেশি এবার। ঈদের কেনাকাটা এখনো শুরু করেননি। পরের সপ্তাহেই বের হবেন কেনাকাটায়।

ঈদের দিনটি কাটে ঢাকাতেই। বিয়ের আগে পরিবার বা নিজেই ঈদের কেনাকাটা করতেন। তবে এবার স্বামী জোবায়দুল হক পছন্দ করে কিনে দিলে সেটাই হয়তো পরা হবে। জানালেন, রিমের (ডাকনাম) পছন্দের ওপর আমার আস্থা আছে। কেনাকাটা করার সময়ও সে খুব মজা করে। পোশাক কেনার সময় পরামর্শগুলোও দেয় ঠিকঠাক। রিম যদি নিজ থেকে আমার জন্য কিছু কিনে আনে, তাহলে সেটা আমার পছন্দ হবেই, এটুকু ভরসা করতে পারি নিশ্চিন্তে। তবে রিম খুব একটা পাঞ্জাবি পরতে পছন্দ করে না। কিন্তু নাবিলা চান ঈদের দিন সে একটা পাঞ্জাবি পরুক। তবে তার জন্য পাঞ্জাবি কিনে আনার খুব একটা সাহস নেই আমার। দোকানে দুজন একসঙ্গে গিয়েই এ জন্য হয়তো পাঞ্জাবি কেনা হবে বললেন নাবিলা।

সালোয়ার–কামিজ: ড্রেসিডেল
সালোয়ার–কামিজ: ড্রেসিডেল

কাটে এখন অনেক রকম ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। প্রায় সব ধরনের কাটই পছন্দ নাবিলার। তবে আনারকলি আমার খুব পছন্দ করেন। জ্যাকেটের মাধ্যমে লেয়ার করাটাও নাবিলার বেশ পছন্দ। ব্লাউজ বা কামিজে লেয়ারিং করার স্টাইলটা বেছে নিতে পারেন।

নাবিলার ঈদের দিনের সাজ নির্ভর করবে পোশাকের রং ও নকশার ওপর। কখনো তুলে নেবেন হালকা শেডের লিপস্টিক। কখনোবা ঢাকনা খুলে লাগাবেন গাঢ় থেকে গাঢ় রঙের লিপস্টিক। চুল খোলা রাখতেই বেশি পছন্দ করেন। চুলের স্টাইলে কোঁকড়া অথবা সোজা দুটোকেই পোশাকের কাট, নকশার ওপর ভিত্তি করে প্রাধান্য দেবেন।

পোশাক: ওটু
পোশাক: ওটু

দিনে বেছে নেন পাঞ্জাবি

মো. জোবায়দুল হক। মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকে চাকরি করছেন সহযোগী পরিচালক হিসেবে। মায়ের কিনে দেওয়া পায়জামা-পাঞ্জাবি পরেই সকালবেলা নামাজে যান তিনি। বিকেলবেলায় পাল্টে যায় পোশাকের স্টাইল। জিনসের সঙ্গে টি-শার্ট অথবা শার্ট পরে নেন। পায়ে থাকে স্নিকারস। তবে নাবিলার ইচ্ছে, এবার ঈদের দিন স্বামী জোবায়দুল হক পাঞ্জাবি পরেই সারা দিন–রাত পার করবেন। জোবায়দুল পোশাক নিয়ে খুব একটা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে পছন্দ করেন না। যে ধরনের পোশাকে আরামবোধ করেন, সেই পোশাকগুলোই ঘুরেফিরে পরেন। সাদা ও নেভি ব্লু রঙের পাঞ্জাবি বেশি পছন্দ করেন বলে জানান। স্ট্রাইপ অথবা বোতামের চারপাশে হালকা একটু কাজ আছে, এমন পাঞ্জাবিতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন। জায়গা আর দাওয়াত বুঝে মাঝেমধ্যে কোটি পরেন। সুতি পছন্দ বেশি। তবে ঈদের দিন একটু ভিন্নধর্মী কাপড়ের পোশাকও বেছে নিতে পারেন এবার। দরকারেই কেনাকাটা করেন। অদরকারে নয়। নাবিলার সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর বেশ মিল আছে। ঈদের দিনের পরিকল্পনা বলতে দিনের বেলায় শ্বশুরবাড়ি যাবেন। সন্ধ্যার পর বিবাহিত বন্ধুদের বাড়িতে নাবিলাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন।

আকাশ থেকেই রংটি বেছে নিয়েছেন ডিজাইনার হুমায়রা খান। মসলিনের এই কামিজটি এ লাইন স্ট্রেট কাটের। সামনের অংশ খোলা। ওপরে জারদৌসির হালকা কাজ। ফ্রিল দেওয়া কলার। হাতা কাটা কামিজটি বিকেলবেলার জন্য আদর্শ। নাবিলার সঙ্গে মিলিয়ে জোবায়দুল হক পরেছেন গাঢ় নীল রঙের শার্ট। শার্টের ওপরে আছে ফুলেল নকশার প্রাধান্য।
আকাশ থেকেই রংটি বেছে নিয়েছেন ডিজাইনার হুমায়রা খান। মসলিনের এই কামিজটি এ লাইন স্ট্রেট কাটের। সামনের অংশ খোলা। ওপরে জারদৌসির হালকা কাজ। ফ্রিল দেওয়া কলার। হাতা কাটা কামিজটি বিকেলবেলার জন্য আদর্শ। নাবিলার সঙ্গে মিলিয়ে জোবায়দুল হক পরেছেন গাঢ় নীল রঙের শার্ট। শার্টের ওপরে আছে ফুলেল নকশার প্রাধান্য।

সাদা মসলিনের শাড়ির ওপর সোনালি সুতার জারদৌসি কাজ। হাতা কাটা ব্লাউজের ওপর একই কাজ করা বুলেরো জ্যাকেট পুরো শাড়ির সাজেই নিয়ে এসেছে ভিন্ন মাত্রা। স্নিগ্ধতা ও অভিজাত নকশা দুটোই একসঙ্গে চলে এসেছে পুরো সাজে। খুব বেশি গয়নার দিকে না গিয়ে কানের বড় ঝুমকাতেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিয়ের পর ঈদ বলেই যে জমকালো শাড়ি আর গয়নায় নিজেকে মুড়িয়ে রাখতে হবে এমন নয়। বরং গরমের কথা চিন্তা করে দেশীয় হালকা উপকরণ আর রঙের তৈরি পোশাক বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন ডিজাইনার হুমায়রা খান। অভিনয়শিল্পী নাবিলারও সবচেয়ে পছন্দের রং হচ্ছে সাদা।

স্ত্রীর সঙ্গে মিলিয়ে সাদা রঙের পাঞ্জাবি-পাজামা পরতে পারেন। এবার বিশ্ব ফ্যাশনের চলতি ধারা অনুযায়ী হাতের কাজ প্রাধান্য পাচ্ছে। ফ্যাশন হাউজ ওটুর পাঞ্জাবির ওপর পরা কটিতে তেমনই ফুলেল নকশার হাতের কাজ।