ঈদে পোলাও রাঁধেন এলভিন

পোলাওয়ের গন্ধে ম-ম। ঈদের দিন নিজ হাতেই রান্না করেন তাসনুভা এলভিন। ছবি: দীপু মালাকার
পোলাওয়ের গন্ধে ম-ম। ঈদের দিন নিজ হাতেই রান্না করেন তাসনুভা এলভিন। ছবি: দীপু মালাকার
ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি আগ্রহ মডেল ও অভিনেত্রী তাসনুভা এলভিনের। টিভিতে রান্নার নতুন কোনো রেসিপি দেখলেই সেটা লিখে রাখতেন। পরের চেষ্টাটা সেই রান্না করার। এলভিন তখন সপ্তম শ্রেণিতে, টিভিতে রেসিপি দেখেই রান্না করে ফেললেন ফ্রায়েড রাইস। সেটাই এলভিনের প্রথম রান্না। আর পাকা রাঁধুনি হয়ে উঠলেন এইচএসসি পাস করার পরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ঢাকায় এলেন এলভিন। নিজের আগ্রহ থেকেই রান্না শিখেছেন। ‘আমরা ঢাকায় ছয়-সাতজন বান্ধবী মিলে একটা বাসায় থাকতাম। রান্নায় সাহায্য করার জন্য একজন খালা ছিলেন আমাদের সঙ্গে। তিনি যখন মাংস রান্না করতেন তখন আমি তাঁকে মাঝে মাঝে বলতাম, আজ আমি মাংস রান্না করব। খালাকে সাহায্য করতে করতে রান্না শেখা হয়ে গেছে আমার’, বললেন এলভিন। নিজের মায়ের হাতের রান্নাই তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। স্বামী ফাহাদ রিয়াজি কে রান্না করে খাওয়াতে সবচেয়ে ভালো লাগে। ঈদের দিনে তো বটেই। শোনালেন এক অভিজ্ঞতা। ‘বিয়ের পরে আমার প্রথম ঈদ ছিল সেটা। দুই দিন আগে আমার কাজের সহকারী গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। ঈদের দিন সবকিছু ফেলে রেখে আমি স্বামীর জন্য অনেক কষ্ট করে রান্না করছিলাম। তখন আমার স্বামী বাইরে থেকে এসে দেখে আমি ঘেমে-নেয়ে একাকার। এটা দেখে ও খুব কষ্ট পায়। তখন আমরা দুজন মিলেই ঈদের রান্নাগুলো করেছিলাম।’ ঈদের দিন সাধারণত পোলাও রান্না করেন এলভিন। ‘আমার স্বামী গরুর মাংস খুব পছন্দ করে। ওর জন্য ঈদে গরুর মাংসের রেজালা করি। মুরগির রোস্ট করি। শ্বশুরবাড়ির অন্যদের জন্য গলদা চিংড়ি ভুনা করি। সব সময় ঈদের রান্নায় আমি একটা মিষ্টি বানাই।’ এবারও এমন খাবারগুলো রান্না করবেন এলভিন
মুরগির রোস্ট
মুরগির রোস্ট

মুরগির রোস্ট

উপকরণ: মুরগি ৩টা, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা ১ চা-চামচ, কাজু আর পেস্তা বাদামবাটা ২ টেবিল চামচ, টক দই ১ টেবিল চামচ, জয়ফল-জয়ত্রীবাটা আধা চা-চামচ, তেল ১ কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ টেবিল চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, দুধ ১ কাপ, জাফরান ১ চিমটি ও কিশমিশ ১ টেবিল চামচ।

্রণালি: প্রথমে কেটে রাখা মুরগিকে আদা, রসুন এবং পেঁয়াজবাটা দিয়ে এক ঘণ্টা মেখে রাখুন। এরপর তেলে ভেজে নিন। একটি পাত্রের মধ্যে সব মসলা দিয়ে আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা মুরগিগুলো দিয়ে দিন। কিছু সময় পর একটু দুধ নিয়ে নেড়েচেড়ে দিন। যখন হালকা হালকা সেদ্ধ হয়ে আসবে, তখন দই এবং জয়ফল-জয়ত্রীবাটা দিয়ে দিন। চিকেন রোস্ট মাখা মাখা হয়ে এলে ওপরে ঘি, জাফরান ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।

পোলাও
পোলাও

পোলাও

উপকরণ: পোলাওয়ের চাল দেড় কেজি, গাজর ১ কাপ, মটরশুঁটি ১ কাপ, দুধ ২ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, তেল আধা কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ ও লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি : পোলাওয়ের চাল ভালোভাবে ধুয়ে একটা ঝাঁঝরিতে রাখতে হবে। পানি যেন ভালোভাবে ঝরে যায়। এরপর একটা পাত্রে পরিমাণমতো তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি, আদা-রসুনবাটা দিন। পোলাওয়ের চাল ভেজে নিন। ভাজার সময় মটরশুঁটি আর গাজরও দিয়ে দিতে হবে। পোলাও চাল ভাজা ভাজা হলে আগে থেকে মেপে রাখা পানি দিয়ে দিন। দেড় কেজি চাল হলে তিন লিটার পানি দিয়ে কিছু সময় জ্বাল দিতে হবে। এরপর দুই কাপ দুধ দিন। পোলাওটা যখন হয়ে আসবে তখন ঘি ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।

গলদা চিংড়ি ভুনা
গলদা চিংড়ি ভুনা

গলদা চিংড়ি ভুনা

উপকরণ: গলদা চিংড়ি ৮টি, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া দেড় চা-চামচ, ধনে গুঁড়া দেড় চা-চামচ, হলুদ, মরিচ গুঁড়া ২ চা-চামচ, হলুদ আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৫/৬টা, এবং তেল ১ কাপ।

প্রণালি: ৮টি গলদা চিংড়িতে আদা-রসুনবাটা এবং লবণ দিয়ে এক ঘণ্টা মেখে রাখুন। এরপর একটি পাত্রে তেলের মধ্যে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজুন। এর মধ্যে জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, হলুদ-মরিচের মসলা দিয়ে কষান। কষানো উপকরণের মধ্যে আগে থেকে মেখে রাখা গলদা চিংড়িগুলো দিয়ে দিন। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট কষানোর পর যখন দেখবেন মাছ থেকে বের হওয়া পানি টেনে গেছে তখন সামান্য আর একটু পানি দিয়ে দিন। এরপর কয়েক টুকরা কাঁচা মরিচ দিয়ে ১০ মিনিটের মতো জ্বাল দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।

গরুর রেজালা
গরুর রেজালা

গরুর রেজালা

উপকরণ: গরুর মাংস ২ কেজি, আদাবাটা দেড় টেবিল চামচ, রসুনবাটা দেড় টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ (স্বাদমতো), এলাচি ৫টা, তেজপাতা ২টা, লং ৪টা, দই ১ কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ বাটি, কাজু বাদাম ১ টেবিল চামচ, জয়ফল-জয়ত্রী আধা চা-চামচ, কেওড়া জল ১ টেবিল চামচ, তেল ২ কাপ ও ঘি ১ কাপ।

প্রণালি: গরুর মাংস একটু বড় বড় কেটে নিন। একটা পাত্রে তেল আর ঘি দিয়ে পেঁয়াজ হালকা ভেজে নিন। এরপর গরম মসলার সঙ্গে আগে থেকে তৈরি করে রাখা মসলাগুলো দিয়ে দিন। মসলা ভালো করে ভুনে গরুর মাংস তাতে দিয়ে দিতে হবে। মাংস ৪০ মিনিট দমে রেখে দিন। কিছু সময় জ্বাল দেওয়ার পর গরুর মাংস থেকে পানি বের হবে। মাংস আরও ৪০ থেকে ৬০ মিনিট ধরে কষান। ঝোলের জন্য সামান্য পরিমাণ গরম পানি দিন।

এর কিছু সময় পর কয়েকটা আলুবোখারা দিতে হবে। আগে থেকে বাদাম, টক দই এবং বেরেস্তা দিয়ে যে পেস্ট বানিয়ে রাখা হয়েছিল সে উপকরণসহ এক কাপ দই গরুর মাংসের মধ্যে দিয়ে দিন। এরপর কিছু সময় দমে রাখুন। গরুর রেজালা নামানোর কিছু সময় আগে পাঁচ-ছয়টা কাঁচা মরিচ ও কেওড়া জল দিয়ে কিছু সময় রেখে নামিয়ে নিন।

ফালুদা
ফালুদা

ফালুদা

উপকরণ: ফালুদা মিক্স ২ প্যাকেট, দুধ ২ লিটার, চিনি ৩ টেবিল চামচ, নুডলস ১০০ গ্রাম, পরিবেশন করার জন্য আপেল, কলা, আঙুর ফল, ওয়েফার ও জেমস।

প্রণালি: ২ লিটার ঠান্ডা দুধের মধ্যে ফালুদা মিক্স ঢেলে দিন। জ্বাল দিতে হবে। আস্তে আস্তে ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন। যখন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসবে তখন ফ্রিজে রাখতে হবে। প্যাকেটের মধ্যে রাখা জেলি কেটে ফ্রিজে রেখে দিন। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করার আগে ফালুদার ওপরে ভ্যানিলা চকলেট, সেদ্ধ নুডলস দিয়ে দিন। আইসক্রিমের ওপরে বিভিন্ন রঙের জেমস, জেলি এবং বিভিন্ন প্রকার ফল দিয়ে দিতে হবে। এরপর একপাশে দুটো ওয়েফার দিয়ে পরিবেশন করুন।