দক্ষ পেশাজীবী হতে সিএমএ ডিগ্রি

দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের পাঠাগারে শিক্ষার্থীরা। ছবি: খালেদ সরকার
দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের পাঠাগারে শিক্ষার্থীরা। ছবি: খালেদ সরকার

প্রতিনিয়ত দেশে নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে আর্থিক হিসাবনিকাশে নানা ধরনের কাজের জন্য প্রয়োজন হয় একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসাবরক্ষক বা ব্যবস্থাপক। আবার ইদানীং শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ঝুলিতে নিয়ে ভালো চাকরি পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। এর সঙ্গে দরকার পেশাগত কিছু ডিগ্রি। এমনই এক ডিগ্রি হচ্ছে সিএমএ বা কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস। ব্যবস্থাপনা আর হিসাব শাখায় দক্ষ পেশাজীবী তৈরির লক্ষ্যে সিএমএ পড়াচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)।

বছরে দুটি সেশনে এখানে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হতে পারেন, জানুয়ারি থেকে জুন এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর। ‘ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুট’ পদ্ধতিতে কোর্সটিতে উচ্চমাধ্যমিক পেরোনো শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। আবার স্নাতক করেও ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে ‘গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি রুট’ পদ্ধতিতে। আইসিএমএবির ঢাকাসহ সারা দেশে মোট ছয়টি শাখা রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক (শিক্ষা) মো. আবদুল মালেক বলেন ‘সিএমএ কোর্সটি দুটি পদ্ধতিতে করানো হয়। একটি কোচিংপদ্ধতি এবং অন্যটি করেসপন্ডেন্স পদ্ধতি। যাঁরা কোচিংপদ্ধতিতে ভর্তি হবেন, তাঁদের নিয়মিত ক্লাস ও ক্লাস টেস্ট দিতে হবে। আর করেসপন্ডেন্স কোর্সের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস করতে হয় না। শুধু অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিলেই হয়। যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের জন্য করেসপন্ডেন্স পদ্ধতিটি সুবিধাজনক।’

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি সিএমএ ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এরই মধ্যে জুলাই থেকে ডিসেম্বর সেশনের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। অনলাইনের মাধ্যমে erp. icmab. org. bd-এই ঠিকানায় গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। কোচিং প্রোগ্রামের প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ২৮ জুন, ২০১৮ পর্যন্ত। আর করেসপন্ডেন্স প্রোগ্রামের প্রার্থীরা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ পাবেন।

ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতিতে ভর্তি হতে হলে প্রার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে কমপক্ষে জিপিএ ৮ পেতে হবে। আর গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতিতে ভর্তি হতে যেকোনো বিভাগ থেকে ন্যূনতম স্নাতক পাস হতে হবে। এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত পরীক্ষার ফল লাগবে কমপক্ষে ৬ পয়েন্ট।

গত ২৭ মে প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা অফিসে গিয়ে জানা গেল, বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী এখানে কোর্স করছেন। আর সদস্য আছেন প্রায় ১ হাজার ৪০০। এর মধ্যে ২৫০ জনেরও বেশি সদস্য বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত।

সিএমএ কোর্সটিতে ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুট ছাত্রছাত্রীদের পাঁচটি লেভেল ও গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি রুট ছাত্রছাত্রীদের চারটি লেভেল সম্প­ন্ন করতে হয়। একটি লেভেল শেষ করতে সময় লাগে ছয় মাস। লেভেলগুলোর মধ্যে রয়েছে নলেজ লেভেল, বিজনেস লেভেল, অপারেশনাল লেভেল, ম্যানেজমেন্ট লেভেল এবং স্ট্র্যাটেজিক লেভেল।

ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতির ছাত্রছাত্রীদের নলেজ লেভেলের জন্য ভর্তি ফি দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা, আর গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি রুট ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে বিজনেস লেভেলের জন্য ২৯ হাজার ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়। পরবর্তী সময়ে অপারেশনাল লেভেল, ম্যানেজমেন্ট লেভেল এবং স্ট্র্যাটেজিক লেভেলের জন্য ফি যথাক্রমে ১০ হাজার, ১৪ হাজার ও ১৮ হাজার টাকা।

সিএমএ ডিগ্রি নিতে হলে ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুট ছাত্র-ছাত্রীদের মোট ২০টি বিষয় পড়তে হয়। অন্যদিকে গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতির শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় ১৭টি বিষয়। আর এসব বিষয় পড়িয়ে থাকেন আইসিএমএবি থেকে পাস করা সদস্য ও দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ক্লাস হয় দুই শিফটে। প্রথম শিফট শুরু হয় বেলা তিনটা থেকে, চলে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় শিফট সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু হয়ে চলে রাত নয়টা পর্যন্ত। রোববার ছাড়া সপ্তাহে প্রতিদিন ক্লাস হয়।

প্রতিষ্ঠানটির চতুর্থ তলায় রয়েছে ৩২৮ আসনের একটি লাইব্রেরি। দেখা গেল, অনেকেই পড়ায় বুঁদ হয়ে আছেন। তাঁদেরই একজন চূড়ান্ত লেভেলের শিক্ষার্থী আশরাফ আলী। তিনি হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাস করে এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে এখানে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো। শিক্ষকেরা অনেক সহযোগিতা করেন। এখানে এসে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। ভবিষ্যতে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দেব এটাই আমার প্রত্যাশা।’

চাকরির বাজারে সিএমএ ডিগ্রিধারীদের চাহিদা কেমন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল মালেক জানালেন ‘বর্তমান চাকরির বাজারে একজন সিএমএ ডিগ্রিধারীর অনেক চাহিদা রয়েছে। এই ডিগ্রিটি সম্পন্ন করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন এনজিও, মোবাইল ফোন কোম্পানি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি বিদেশেও চাকরির ভালো সুযোগ রয়েছে।’

আইসিএমএবির সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম (এফসিএমএ) বলেন, ‘সিএমএ সদস্যরা গতানুগতিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট নন বরং বিজনেস লিডার। একজন সিএমএ সদস্য তাঁর কর্মজীবন শুরু করতে পারেন ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট কিংবা ফাইন্যান্স বা অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার হিসেবে। সেখান থেকেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি প্রস্ফুটিত হতে থাকে। শুধু দেশেই নয় দেশের বাইরেও আমাদের সদস্যরা অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। কারণ, আমাদের এ কোর্সটি আন্তর্জাতিক কারিকুলাম স্ট্যান্ডার্ডে পড়ানো হয়। এখানে এমনভাবে পড়ানো হয় যেন তাঁরা বিদেশেও কাজ করতে পারেন।’

যাঁরা কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিং পড়ে পেশা শুরু করতে চান তাঁরা ভর্তি ও অন্যান্য তথ্য জানতে যোগাযোগ করতে পারেন আইসিএমএবির ঢাকাসহ দেশের অন্য শাখাগুলোতে।

এ ছাড়া ভিজিট করতে পারেন www.icmab.org.bd-এই ঠিকানায়।