ঘরে বসেই ঈদের কেনাকাটা

ঘরে বসে অনলাইনে কেনাকাটায় উৎসাহ বাড়ছে। ছবিটি প্রতীকী।  প্রথম আলো
ঘরে বসে অনলাইনে কেনাকাটায় উৎসাহ বাড়ছে। ছবিটি প্রতীকী। প্রথম আলো

দিন বদলেছে। এখন আর বাজারে না গেলেও চলে। বাজার চলে আসে ঘরে। ইন্টারনেট আছে এমন কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের সাহায্যে অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা করছেন অনেকে। ঈদের বাজারে ঘোরার সময় নেই বা যানজটে নাকাল হতে চান না যাঁরা, তাঁরাই কেনাকাটা করেন অনলাইনে। যদিও এ সংখ্যা এখনো কম। তবে ক্রমশ তা বাড়ছে।

দেশি প্রায় সবগুলো পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই অনলাইনে পোশাক বিক্রির সুবিধা রেখেছে। নকশা, আকার ও পরিমাণ নির্ধারণ করে পণ্যের ফরমাশ দেওয়া যায়। দাম মিটিয়ে দেওয়া যায় ডেভিড-ক্রেডিট কার্ড, বিকাশের মাধ্যমে কিংবা নগদে। অর্ডারের তিন দিনের মধ্যে পণ্যটি বাড়ি বা অফিসের ঠিকানায় পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

ফ্যাশন হাউস লা রিবের প্রধান নির্বাহী মুন্নুজান নার্গিস বললেন, তাঁদের মোট বিক্রির ৩ শতাংশ হয় অনলাইনে। অন্য পোশাক নির্মাতা যেমন আড়ং, কে ক্র্যাফট, ইয়েলো, এক্সট্যাসির ক্ষেত্রে ঈদের সময় এ হার খানিকটা কম-বেশি হয়ে থাকে।

অনলাইনে বেশি বিক্রি হয় পাঞ্জাবি, শাড়ি, টি-শার্ট এবং সালোয়ার-কামিজ। এর মধ্যে শাড়ি-পাঞ্জাবির ক্রেতা সব থেকে বেশি। অনলাইনে পোশাক বিক্রি করা বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের অনলাইনে কেনাকাটার প্রবণতা বেশি। এঁদের মধ্যে রয়েছেন চাকরিজীবী নারী, প্রবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।

অনলাইন দোকান অভিরুপার উদ্যোক্তা ফারজানা সোমা জানান, নিয়মিত পণ্য কেনেন এ রকম নির্দিষ্ট কিছু ক্রেতা রয়েছে তাঁদের। সে রকম এক ক্রেতা এনজিওকর্মী ঈশিতা পায়েল বলেন, যানজটের কারণেই মার্কেটে যাননি তিনি। নতুন এই উদ্যোক্তারা চাইলে একাধিক শাড়ি পাঠিয়ে দেন, যেগুলো থেকে পছন্দ করে কেনা যায়। এ রকম উদ্যোক্তাদের মধ্যে আরও রয়েছে আসমোর লাইফস্টাইল, ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তা সঙ, ড্রেস গ্যালারি ইত্যাদি।

শুধু কাপড়ই নয়। চুড়ি, গয়না, সানগ্লাস, ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিস এখন অনলাইনে কেনা যায়। নান্দনিক গ্রাফিকসে পণ্যের ছবি তুলে আপলোড করেন উদ্যোক্তারা। চাইলে বড় আকারে জুম করে সেসব পণ্য দেখা যায়। অসুবিধা একটাই, স্পর্শ করে দেখা যায় না।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওয়াহেদ জানান, দেশে প্রতিদিন অনলাইন ডেলিভারি সংখ্যা এখন ২৫ হাজার। ২০২১ সালে এটি গিয়ে দাঁড়াবে ১ লাখে। তিনি বলেন, ‘দোকানে দোকানে ঘুরে পণ্য দেখার থেকে অনলাইনে এক জায়গায় বসে বহু পণ্য দেখে নেওয়া যায়। দোকান না থাকা এবং প্রতিযোগিতা বেশি থাকায় অনলাইনে পণ্যের দামও কমে আসে।’

অনলাইনের একজন ক্রেতা ওয়ালি-উল-আলীম। তিনি বলেন, সারা দিন অফিস করার পর এই গরমে বিপণিবিতানে যেতে ইচ্ছে করে না। তা ছাড়া সময় মিলিয়ে সবাইকে একত্র করে ঢাকা শহরের মার্কেটে যাওয়া এখন কঠিন। ইতিমধ্যে নিজের এবং স্বজনদের উপহার দেওয়ার জন্য কিছু পাঞ্জাবি অনলাইন থেকে কিনেছেন তিনি।

ফেসবুকভিত্তিক পোশাক বিক্রেতা ড্রেস গ্যালারির পরিচালক রাহাতুল জান্নাত জানান, তাঁদের ক্রেতাদের অনেকেই প্রবাসী বাঙালি নারী। যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছর। কারচুপি ও শাড়ি তাঁদের বেশি বিক্রি হয়, যেগুলোর দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রবাসী অনেক নারীই দেশি পোশাকের ব্যাপারে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের রুবিনা আক্তার ও মৌরি চৌধুরী নিয়মিত পোশাক কেনেন এই প্ল্যাটফর্ম থেকে।