বইয়ে তোলা হলো জামদানির নকশা

জামদানির নকশা নিয়ে প্রকাশিত হলো বই
জামদানির নকশা নিয়ে প্রকাশিত হলো বই

নারায়ণগঞ্জের তাঁতি পরিবারে জন্ম তারিকের। জন্মের পর থেকেই দেখেছেন বাড়ির সবাই কমবেশি জামদানি তৈরিতে যুক্ত। কেউ সুতায় রং করছেন, কেউ তা শুকাচ্ছেন আবার কেউ খটখট শব্দে তাঁতে বুনছেন নিপুণ নকশার জামদানি। দেখে দেখে কবে যে তারিক নিজেও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন, মনে করতে পারলেন না। তারিকের সরল স্বীকারোক্তি—‘জামদানি বোনা যে কঠিন, সেটা কখনো মনে হয়নি। কত ধরনের নকশা আছে! প্রায় সব নকশাই মুখস্থ। জামদানি বোনার সময় তাই কোনো কাগজ (আঁকা নকশা) দেখার দরকার পড়ে না।’

তারিকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল জামদানি নকশা নিয়ে তৈরি ট্র্যাডিশনাল জামদানি ডিজাইন (ঐতিহ্যবাহী জামদানি নকশা) বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে। রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হলো বইটি। যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। বইটির প্রধান গবেষক ডিজাইনার চন্দ্র শেখর সাহা।

ইউএস অ্যাম্বাসেডর ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ চার বছর ধরে জামদানির আদি নকশা সংগ্রহ ও সংকলন করে। প্রাথমিকভাবে মোট ৩৯০টি নকশা পাওয়া যায়, যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সেমিনার ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে যাচাই–বাছাই করা হয় আদি নকশা। এই পর্যায়ে টিকে ছিল ১৮৬টি নকশা। যেখান থেকে ৬৭টি নকশা মুদ্রিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী জামদানি নকশা বইয়ে।

চন্দ্র শেখর সাহা জানালেন, এত বছর ধরে জামদানির নকশা বোনা হচ্ছে শুধুই বংশ পরম্পরায় বা ওস্তাদের কাছ থেকে শিখে। নকশাটা বুনতে গেলে একটা অঙ্কের প্রয়োজন হয়, যা বুলির মাধ্যমে তাঁতিরা শ্রুতিতে নেন, সেখান থেকে স্মৃতিতে নেন, তারপর বুননের মাধ্যমে সেটা দৃশ্যমান করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় এত দিন ধরে বোনা হচ্ছিল জামদানি। তবে ঐতিহ্যবাহী এই নকশা ও বুনন কৌশল বছরের পর বছর ধরে রাখতে চাইলে সেটা লিপিবদ্ধ করে রাখা জরুরি।

ঐতিহ্যবাহী জামদানি নকশা বইটির নানা তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পারের অঞ্চল রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ থেকে। গবেষণা চলাকালে নতুন করে ৮৪টি জামদানি তৈরি করা হয়েছে তাঁতিদের দিয়ে। আছে আদি নকশার আলোকচিত্র, যাচাই-বাছাই করে ঠিক করা হয়েছে জামদানির বিভিন্ন নকশার নাম। বইটির একটি নিবন্ধে রুবি গজনবি লিখেছেন, মূল জামদানির নকশায় আঠারো শতকে যে ধরনের নকশা ব্যবহার করা হতো, এখনো অনেক নকশা তেমনই আছে। অর্থাৎ ২০০ বছর ধরে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি কারিগরদের এই নকশায়।

২৪৪ পৃষ্ঠার বইটির দাম তিন হাজার টাকা। বইটি পাওয়া যাবে আড়ং, অরণ্য, পাঠক সমাবেশ, বেঙ্গল বুক, তক্ষশিলা, বুক ওয়ার্ম ইত্যাদি দোকানে।

বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের প্রকল্প সমন্বয়ক শাহিদ হোসেন শামীম বলেন, জাতীয় পর্যায়ে ৩৫০ জন তাঁতিকে নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করে জামদানির নকশা, বুনন কৌশলসহ নামকরণ নির্ধারণ করা হয়।

বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।