বাড়তি স্বাদে চাটনি

ভাত, খিচুড়ি কিংবা মুচমুচে খাবারের সঙ্গে যোগ হয় নানা পদের চাটনি—তাহলে তো আর কথাই নেই। নানা স্বাদের চাটনির রেসিপি দিয়েছেন ফাতেমা আজিজ


আপেল চাটনি

উপকরণ

সবুজ আপেল (খোসা ছাড়িয়ে চৌকো করে কেটে নেওয়া) ৬টি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদা (মিহি টুকরা) ২ টেবিল চামচ, কমলা-লেবু অথবা মালটার রস ২ কাপ, আপেল সাইডার ভিনেগার এক সিকি কাপ, লাইট ব্রাউন সুগার ১ কাপ, ভাজা সাদা সরিষার গুঁড়া ১ চা-চামচ, রেড চিলি ফ্লেক্স আধা চা-চামচ, লবণ দেড় চা-চামচ, কিশমিশ পৌনে কাপ ও পুদিনাপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ।

প্রণালি

একটি পাত্রে কিশমিশ ও পুদিনাপাতা বাদে অন্য সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে মাঝারি-উচ্চ তাপে জ্বাল দিন। কিছুক্ষণ পর আঁচ কমিয়ে অনবরত নাড়ুন। ৫০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রান্না করুন। পানি টেনে মাখা মাখা হলে পুদিনাপাতা কুচি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে কিশমিশ দিয়ে নেড়ে ২ বা ১ মিনিট পর চুলা বন্ধ করে দিন। ঠান্ডা হলে বায়ুরুদ্ধ কনটেইনার বা বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। এই চাটনি লুচি, পুরি বা চিপসের সঙ্গে খেতে ভালো লাগবে। ২ সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।

আনারসের চাটনি

উপকরণ

ব্লেন্ড করা আনারস ২ কাপ, মৌরি ১ চা-চামচ, রেড চিলি ফ্লেক্স আধা চা-চামচ, মেথি সিকি চা-চামচ, শুকনা মরিচ ১টি, আদা বাটা সিকি চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা কাপ, কিশমিশ ৮-১০টি, ভাজা কাজুবাদাম ৩ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ এবং সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি

৫ বা ৬টি ভাজা কাজুবাদাম রেখে বাকিগুলো আধা ভাঙা করে নিন। চুলায় একটি কড়াইয়ে ব্লেন্ড করা আনারস আদা বাটা দিয়ে জ্বাল দিন। সেদ্ধ হয়ে এলে নামিয়ে ঘুঁটে দিন। আরেকটি কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করে তাতে মেথি, শুকনা মরিচ ও মৌরির ফোড়ন দিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর ঘুঁটে রাখা আনারস দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। ৫ বা ৭ মিনিট পর চিনি ও লবণ দিয়ে নাড়ুন। কয়েকবার ফুটে উঠলে চিনি মিশে গেলে কিশমিশ ও আধা ভাঙা কাজুবাদাম দিয়ে মিশিয়ে রান্না করুন। এবার লেবুর রস মিশিয়ে নাড়ুন। ইচ্ছে করলে লবণ ও চিনির স্বাদ ঠিক আছে কি না দেখে নিতে পারেন। ৪ বা ৫ মিনিট পর আঁচ কমিয়ে ১ টেবিল চামচ সরিষার তেল দিয়ে নেড়ে ঢেকে চুলা বন্ধ করে দিন। সার্ভিং ডিশে ঢেলে ওপরে কাজুবাদাম ও কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে নাশতা, পোলাও বা পান্তাভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

চালতার চাটনি

উপকরণ

চালতা ২টি, সরিষার তেল আধা কাপ, ভাজা পাঁচফোড়ন গুঁড়া ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, দুটো কাঁচা মরিচ দিয়ে সরিষা বাটা দেড় টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ২ চা-চামচ, শুকনা মরিচের গুঁড়া দেড় চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ৪টি, লাল মরিচ ৪টি, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ।

প্রণালি

চালতা কেটে ভালো করে ধুয়ে ডুবো পানিতে সেদ্ধ করুন। চালতা নরম হয়ে এলে পানি ঝরিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে শিল-পাটায় ছেঁচে নিন। তারপর ধনেপাতা কুচি, কাঁচা মরিচ ও লাল মরিচ পাটায় ছেঁচে নিতে হবে। কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করে ছেঁচে রাখা চালতা, হলুদ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া ও লাল মরিচের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে কষিয়ে নিন। এবার চিনি দিন। ভালো করে নেড়ে কাঁচা মরিচ ও বাটা সরিষা দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন। এবার পাঁচফোড়ন গুঁড়া দিয়ে নেড়ে থেঁতো করা মরিচ ও ধনেপাতা ছড়িয়ে দিয়ে ঢেকে চুলা বন্ধ করে দিন। পাঁচ মিনিট পর ঢাকনা খুলে একবার মিশিয়ে নেড়ে দিন। নামিয়ে একটু ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।

কুল-তেঁতুলের চাটনি

উপকরণ

শুকনা কুল বা বরই ৩০০ গ্রাম, তেঁতুলের ঘন মাড় সিকি কাপ, পানি সিকি কাপ, আখের গুড় সিকি কাপ, লবণ স্বাদমতো, চাটনির মসলা ১ চা-চামচ, সরিষার তেল সিকি কাপ, হলুদ গুঁড়া সিকি চা-চামচ ও মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ।

প্রণালি

পাকা বরইয়ের মুখের দিকে খুঁটে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন পানি ফেলে বরই ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। চুলায় একটি পাত্রে বরইগুলো নিয়ে তাতে পানি, তেঁতুলের ক্বাথ, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া ও গুড় দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নাড়ুন। এবার অন্য একটি পাত্রে তেল গরম করে মসলাসহ সেদ্ধ করা কুল-তেঁতুলের মিশ্রণ ঢেলে দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন। এবার পাঁচফোড়ন গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে অল্প আঁচে রান্না করুন। তেল ছাড়লে নামিয়ে গরম স্ন্যাক্স, পোলাও বা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

খানদানি আমসত্ত্ব

উপকরণ

পাকা আম ৪টি, চিনি (আমের মিষ্টি অনুপাতে) আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, গোলমরিচ গুঁড়া সিকি চা-চামচ, লাল মরিচের গুঁড়া সিকি চা-চামচ, খেজুর কুচি ২টি, ভাজা কাজুবাদাম গুঁড়া সিকি কাপ, সরিষার তেল (প্রতি লেয়ারে) ২ চা–চামচ ও ভাজা সাদা তিল পরিমাণমতো।

প্রণালি

আমের মুখ কেটে ১০ বা ১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে আম ধুয়ে নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। একটি বোলে আমগুলো ভালো করে চিপে নিয়ে রস বের করে তারের অথবা পিতলের চালুনি দিয়ে চেলে নিয়ে ছোবড়াগুলো ফেলে দিন। রসে কোনো ধরনের পানি মিশানো যাবে না। এবার একটি ননস্টিক প্যানে আমের রস, চিনি, লবণ, গোলমরিচ ও লাল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে মাঝারি আঁচে কাঠের চামচ দিয়ে নাড়ুন। ফুটে উঠলে খেজুর কুচি ও কাজুবাদাম গুঁড়া মিশিয়ে অনবরত নাড়ুন। ঘন থকথকে হলে নামিয়ে রাখুন। একটি কাঠের তক্তায় বা ট্রেতে প্লাস্টিকের চাটাই বিছিয়ে তাতে ২ টেবিল চামচ সরিষার তেল মেখে জ্বাল দেওয়া আমের কিছুটা মিশ্রণ নিয়ে লেপে দিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নিন। পুনরায় ২ চা-চামচ তেল মেখে আবার কিছুটা আমের মিশ্রণ দিয়ে লেপে শুকাতে দিন। একই ভাবে ৪ বা ৫ লেয়ার আমের মিশ্রণের প্রলেপ দিন। শেষ প্রলেপের ওপরে আরও ২ চা-চামচ তেল মেখে শুকিয়ে নিন। ভালো করে শুকালে আমসত্ত্ব রোল করে মুড়িয়ে নিয়ে ২ ইঞ্চি করে কেটে ভাজা সাদা তিলে গড়িয়ে সার্ভিং ডিশে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

বি দ্র: এখানে মিষ্টি আমসত্ত্বের রেসিপি দেওয়া হয়েছে। যাঁরা একটু টক-মিষ্টি-ঝাল খেতে চান, তাঁরা একটু টক-মিষ্টি আমের রসের সঙ্গে লবণ, চিনি, বিট লবণ, গোলমরিচ ও লাল মরিচের গুঁড়া এবং ভাজা পাঁচফোড়ন গুঁড়া মিশিয়ে বানাতে পারেন। বৃষ্টির কারণে রোদে শুকানো না গেলে চুলার ওপরে একটি উঁচু স্ট্যান্ড বসিয়ে আঁচ একেবারে কমিয়ে দিন-রাত আমসত্ত্বের ট্রে বসিয়ে শুকাতে পারেন।

বেগুনের ঝাল মসলার চাটনি

উপকরণ

ছোট আকারের বেগুন ১ কেজি, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, আখের গুড় সিকি কাপ, তেঁতুলের ক্বাথ সিকি কাপ, লবণ স্বাদমতো, ভাজা পাঁচফোড়ন গুঁড়া ১ চা-চামচ, সরিষার তেল আধা কাপ, জিরা ১ চা-চামচ, মেথি আধা চা-চামচ, মৌরি ১ চা-চামচ ও শুকনা মরিচ ৬টি।

প্রণালি

জিরা, মেথি, মৌরি ও শুকনা মরিচ হালকা টেলে গুঁড়া করে নিন। তেঁতুল ভিজিয়ে রেখে ঘন ক্বাথ বা মাড় বের করে নিন। বেগুন মাথার কাছে জোড়া রেখে লম্বা ৪ ফালি করে কাটুন। অল্প পানিতে বেগুন আধা সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি ভেজে নিন। পেঁয়াজ হালকা বাদামি রং হয়ে এলে তাতে বেগুন ও লবণ দিয়ে ভাজুন। বেগুনের রং পরিবর্তন হলে তাতে তেঁতুলের মাড়, পাঁচফোড়নের গুঁড়া ও গুড় দিয়ে মৃদু আঁচে ঢেকে রান্না করুন।