এই সময়ে নার্সারিতে...

কয়েক দফা বৃষ্টিতে গাছপালা ও চারপাশ সবুজ ও সতেজ হয়ে উঠছে। গাছ লাগানো কিংবা বাগান করার জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে এখনই। এ সময় আর্দ্রতাপূর্ণ আবহাওয়া গাছের টিকে থাকা এবং বেড়ে ওঠায় সহায়তা করে। সবুজপ্রেমীরাও এই সময়টিকে বেছে নেন প্রিয় গাছ বা শখের বাগান করার জন্য। বাসাবাড়ির ছাদ, বারান্দাসহ যেখানেই মিলছে এক টুকরো জায়গা, সেখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে বাড়ির বাগান। তাই এই সময়ে নার্সারিগুলোতে ক্রেতারাও ভিড় করছেন। অনেকে বাসাবাড়ির জন্য ফুল ও ফল থেকে শুরু করে অর্কিড, ক্যাকটাসসহ পছন্দের গাছ কিনে নিচ্ছেন। আবার কেউবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এসব গাছ কিনছেন। আগ্রহী এসব ক্রেতার প্রয়োজনীয় চাহিদার জোগান দিচ্ছে রাজধানীতে গড়ে ওঠা ছোট-বড় নার্সারিগুলো।

এই সময় বিভিন্ন প্রজাতির ফলের চাহিদাই বেশি বলে জানান রাজধানীর সবচেয়ে বড় আগারগাঁওয়ের সবুজ বাংলা নার্সারির ব্যবস্থাপক নোমান মাহমুদ। তবে ফলের পাশাপাশি ফুলের চাহিদাও আছে। এই নার্সারিতে প্রায় ৫০ জাতের ফলের চারা এবং কলম রয়েছে। নানা রঙের প্রায় ৮০ ধরনের মৌসুমি ফুল আছে। এ ছাড়া শাপলা ও পদ্ম ফুলও পাওয়া যাবে। একই কথা জানালেন, ব্র্যাক কানন নার্সারির উৎপাদন কর্মকর্তা মো. নূরন নবী। তাঁদের নার্সারিতেও প্রায় সব প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ আছে। তবে নার্সারিভেদে দামে কিছুটা পার্থক্য দেখা গেছে।

ফলের গাছ
নার্সারিগুলোতে দূর থেকেও চোখে পড়ে ডালভর্তি ফলসহ নানান প্রজাতির গাছ। চারা তো নয়, যেন আস্ত ফলের গাছ। ফলের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির আম, পেয়ারা ও লেবুর চাহিদাই বেশি। এ ছাড়া রয়েছে আমড়া, জাম্বুরা, আমলকী, বেল, মাল্টা, করমচা, আতা, পেঁপে, কলা, বরই, ডালিম, আনার, জামরুল, কাঁঠাল, কাঠলিচু, কমলা, নাগপুরি কমলা, সফেদা, থাই লম্বাটে সফেদা, থাই লাল শরিফা, থাই ডুমুর, থাই ড্রাগন ইত্যাদি। পলিব্যাগের চারার দাম পড়বে ১৫০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত। ড্রামে লাগানো ফলসহ গাছের দাম পড়বে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে দাম নির্ভর করে গাছের আকার ও প্রজাতির ওপর। ড্রাম ও মাটি আলাদা ক্রয় করলে খরচ অনেক কমে যাবে। ড্রামের দাম পড়বে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা এবং প্রতি বস্তা মাটির দাম ৮০-১০০ টাকা।

ছোট-বড় নার্সারিগুলোতে চলে এসেছে এ ঋতুর গাছ। ছবি: সুমন ইউসুফ
ছোট-বড় নার্সারিগুলোতে চলে এসেছে এ ঋতুর গাছ। ছবি: সুমন ইউসুফ


ফুল গাছ
বর্ষায় বিচিত্র ফুলের সৌরভে চারপাশ ভরে ওঠে। বেলি ফুলের সমারোহ দেখা যায় অনেক। প্রায় সব নার্সারিতেই রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা রং-বেরঙের ফুল। অনেক রঙের গোলাপ থেকে শুরু করে কদম, বেলি, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, জুঁই, জবা, কামিনী, হাসনাহেনা, মোসেন্ডা, হলুদ আলমন্ডা, কবরিসহ প্রায় সব প্রজাতির ফুলই রয়েছে নার্সারিতে। পলি ব্যাগের ফুল গাছের দাম পড়বে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা। টবে লাগানো ফুল গাছের দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে দাম নির্ভর করবে গাছের আকার ও প্রজাতির ওপর।


অর্কিড
ক্রেতাদের এখন বাড়তি আকর্ষণ রয়েছে মাটি ছাড়া জন্মানো ঝুলন্ত শিকড় ও ফুলপ্রধান অর্কিডের। ফুল ফুটন্ত অর্কিডের পাশাপাশি আছে ছোট চারা। বোতলবন্দী টিস্যু কালচারের চারাও পাওয়া যাচ্ছে নার্সারিগুলোতে। অর্কিডের মধ্যে রয়েছে ক্যাটালিয়া, ভ্যানডোরিয়াম, ফিলা নাফসিসেস, ভ্যান্ডা ইত্যাদি। আকার ও প্রজাতিভেদে দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

ক্যাকটাস
দেশীয় ক্যাকটাসের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা লাল ও হলুদ গ্রাফটিং বা কলমের ক্যাকটাসও পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস রয়েছে নার্সারিগুলোতে। ক্রিসমাস, সলকু, রেবুসিয়াস, ফারোডিয়া, ফণীমনসা, মাবিলেরিয়াস, লুবিভিয়ার মধ্যে আকারভেদে ছোট-বড় ক্যাকটাস পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।


পাতাবাহার
শোভাবর্ধনকারী গাছের মধ্যে আছে চীনাবাঁশ, কলসিবাঁশ, ঝাউগাছ, পাম কিং ও বার্ড নেস্ট প্রভৃতি। এ ছাড়া ঔষধি, সবজি ও মসলাজাতীয় গাছের চারাও রয়েছে নার্সারিগুলোতে। তবে এগুলোর চাহিদা কিছুটা কম এখন। পলি ব্যাগের গাছগুলোর দাম পড়বে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা। টবের গাছগুলোর দাম পড়বে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

যেখানে পাবেন
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনেক নার্সারি রয়েছে। এ ছাড়া গুলশান আড়ংয়ের বিপরীতে ব্র্যাকের নার্সারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের ফুটপাত, ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাত, ধানমন্ডি আবাহনী মাঠের বিপরীতে, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে, কমলাপুরের টিটিপাড়া, শাহজাহানপুর, মিরপুর, বেইলি রোড, গুলশান, বনানী ডিওএইচএস, খিলক্ষেতের কাওলা, উত্তরাসহ রাজধানীর অনেক জায়গায় নানা ধরনের গাছ কিনতে পাওয়া যায়।