নজরকাড়া প্রবেশদ্বার

সবুজের ছোঁয়ায় সেজেছে বাড়ির প্রবেশদ্বার। কৃতজ্ঞতা: সামিনা হোসেন প্রেমা
সবুজের ছোঁয়ায় সেজেছে বাড়ির প্রবেশদ্বার। কৃতজ্ঞতা: সামিনা হোসেন প্রেমা

প্রকৃতির সাজে বাড়ি—এটাই এখন ঘর সাজানোর চলতি ধারা, গোটা দুনিয়াজুড়েই। বাড়ির প্রবেশদ্বারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বড় বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটবাড়িতে ঢোকার দরজাটাই যদি মন ভালো করে দেওয়ার মতো হয়, তাহলে সেই বাড়ির কর্তা-কর্ত্রীর প্রতি আলাদা একটা শ্রদ্ধা জাগতে বাধ্য। সুন্দর করে সাজানোই শেষ কথা নয়। ব্যস্ত জীবনে সেই সৌন্দর্য ধরে রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া সাজানোর সময় প্রতিবেশীর সুবিধা-অসুবিধার দিকেও রাখতে হবে খেয়াল। সবকিছু মিলিয়েই প্রবেশদ্বার যদি নজরকাড়া হয়, প্রশংসা আপনি পাবেনই।

ঢোকার দরজায় উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার নজর কাড়বে অনায়াসেই। নীল, গোলাপি, হলুদ বা লাল—ব্যবহার করা যায় এমন সব রং। তবে এই দরজার কোনো অংশে ব্যবহৃত রং পাল্টে ফেলা না গেলে ওই রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখুন বাকি সবকিছুর। সম্ভব হলে একটি উজ্জ্বল রং বেছে নিন, যা ছুঁয়ে যাবে প্রবেশদ্বারে রাখা যেকোনো সামগ্রী।

বিশ্বের প্রচলিত ধারায় প্রবেশপথে ব্রোঞ্জ বা সোনালি রঙের সামগ্রী থাকছে। তবে বাহুল্য ছাড়া। লাল-হলুদ-নীল বা উজ্জ্বল—যে রংটিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, সেই রঙের সঙ্গে মিল রেখে ফুলগাছ রাখতে পারেন। দরজা ও দেয়ালে নীল-সাদার সমন্বয় থাকলে সাদা ফুলের গাছ রাখতে পারেন। গোলাপি-সাদার সমন্বয় থাকলে হয়তো এই দুই রঙের ফুলের গাছই রাখলেন। তবে মোদ্দা কথা হলো, গাছ-ফুল যেটিই রাখুন, যেভাবেই রাখুন—প্রকৃতির ছোঁয়া রাখাটাই এখন ধারা।

নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমা পছন্দ করেন এমনটাই। তিনি বলেন, ‘বরাবরই গাছ পছন্দ করি। সেটি বারান্দা হোক, আর ঘরেই হোক। আজকাল অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে জায়গা কম থাকে, গাছ রাখার মতো পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে না। তবে আমি সুযোগটা পেয়েছি। পরিমিতভাবে সাজিয়েই দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে চেয়েছি।’ অনেক জায়গা থাকলেই অনেক জিনিস রাখতে হবে, এমনটা একেবারেই করবেন না। বেশি জিনিস রাখলে একটু হিজিবিজি লাগে। আয়না বা বড় শোপিস রাখার চেয়ে অল্প কিছু গাছ দিয়ে সাজাতেই ভালো লেগেছে সামিনা হোসেনের।

র‌্যাডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান ও অন্দরসজ্জাবিদ গুলসান নাসরীন চৌধুরী বলেন, ‘দরজার বাইরের দেয়ালে কয়েক ধরনের কাজ করা যেতে পারে। একটু আলাদা হতে পারে দেয়ালের একটা পাশ। যেমন এদিকটা গাঢ় রং করা যায়। অথবা চাইলে ওয়ালপেপার বা রাস্টিক টাইলস ব্যবহার করা যায়। আবার চাইলে সাধারণভাবে চাঁপা সাদা রংটাও রাখা যেতে পারে।’ তবে বাইরের দিকে হাত লেগে বা বাইরের ধুলা-ময়লার কারণে সহজেই অপরিচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে বলে গাঢ় রং ব্যবহার করাই ভালো—জানালেন তিনি।

চাই বৈচিত্র্য

বাইরের দেয়ালসজ্জায় বৈচিত্র্য আনতে দেয়ালেই বাহারি টব বা শোপিস লাগাতে পারেন। দেয়ালের টবে মানি প্ল্যান্ট বা অন্যান্য ঘরের গাছ রাখতে পারেন। বাড়িতে ঢোকার পথে একটা আয়নাও রাখা যেতে পারে বলে জানালেন গুলসান নাসরীন চৌধুরী। অন্যের বাড়িতে ঢোকার আগে সেই বাড়ির আয়নায় অতিথি একটু নিজেকে দেখে নিতে পারলে বেশ হয়। আয়নাটিও হতে পারে বৈচিত্র্যময়। আয়নার ফ্রেম হতে পারে বেত, কাঠ, রট আয়রন বা টেরাকোটার তৈরি। আবার রিকশাচিত্রের রং ও নকশায় তৈরি ফ্রেমও হতে পারে আয়নাটির। তবে ফ্রেমটি যে ধাঁচেরই হোক না কেন, প্রবেশপথ সাজানোর বাকি সরঞ্জামের সঙ্গে এটির সামঞ্জস্য রাখতে হবে।

আয়নার ফ্রেমে যদি বাহারি রঙের রিকশা-পেইন্ট থাকে, তাহলে ফুল রাখার ছোট টব, ডেকোরেশন পট বা শোপিসগুলোতেও চাই তেমনই বাহারি রঙের ছোঁয়া। আবার একরঙা অনেকগুলো ছোট টব রাখা যায়, যেগুলোর এক একটি হবে আলাদা আলাদা রঙের। ফ্রেম যদি রট আয়রন বা গ্রিল জাতীয় হয়, এই ধরনেরই শোপিস রাখুন। বেত বা টেরাকোটার ফ্রেম হলে সেটির সঙ্গে মিলিয়ে রাখুন অন্যান্য উপকরণ। বেতের আয়নার ফ্রেমের ভেতরেও ছোট পট রাখতে পারেন।

সাধারণত বাইরের দরজাটা সেগুন কাঠের করা হয়ে থাকে, দরজার রঙের সঙ্গে মিল রেখেও সাজানোর অন্যান্য উপকরণ বেছে নেওয়া ভালো।

 প্রশস্ত জায়গা পেলে

পর্যাপ্ত জায়গা পেলে জুতার র‌্যাক রাখতে পারেন। পাশে রাখুন একটি ছোট টুল। এতটা জায়গা না থাকলে ছোট জুতার র‌্যাক রাখতে পারেন, যেটির ঢাকনা লাগিয়ে নিলে এর ওপরেই বসে জুতা পরা সম্ভব।

একটু বেশি জায়গা পেলে দু–তিনটি টুল রাখতে পারেন। সম্ভব হলে রাখতে পারেন ছোট একটি টেবিলও। টেবিলের সঙ্গে সেট করে রাখুন একটি চেয়ার, যেন প্রয়োজন হলে টেবিলের নিচ থেকে চেয়ার টেনে নিয়ে বসা যায়। টেবিলটা রাখতে পারেন দেয়ালের আয়না বরাবর ঠিক নিচেই। অনেক অতিথি এলে হয়তো ঘরের ভেতর অতিথির গাড়িচালকদের আপ্যায়ন করার সুযোগ থাকে না। সে ক্ষেত্রে এই চেয়ার-টেবিল আর বাড়তি টুল কাজে দেবে।

একটা কোণে জায়গা থাকলে ছোট সোফা রাখতে পারেন। পাশেই হয়তো গাছ রাখলেন। আর এত কিছুর জায়গা না থাকলে দেয়ালটাই সাজিয়ে নিন মনের মতো করে।