লটকন নাকি ডাবের শাঁস?

রসাল লটকন আর সুস্বাদু ডাবের শাঁস আমাদের অনেকেরই প্রিয়। একটু টক স্বাদের লটকন খাওয়ার লোভ সামলানো কঠিন, আবার মিষ্টি স্বাদের ডাবের শাঁস তো অসাধারণ। নিত্যদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণে দুটি ফলই শরীর সুস্থ ও চাঙা রাখতে সহায়তা করে। লটকন ও ডাবের শাঁসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ।

রসাল লটকন

লটকন দারুণ পুষ্টিকর ফল। এতে প্রোটিন (৩.০৮ গ্রাম), ক্যালসিয়াম (৪৪ মিলিগ্রাম), আয়রন (০.৯৯ মিলিগ্রাম), ফসফরাস (৪৪ মিলিগ্রাম), ভিটামিন বি১ (০.০১৪ মিলিগ্রাম), ভিটামিন সি (২৪.৭৫ মিলিগ্রাম), ভিটামিন এ (৩০ মাইক্রোগ্রাম) এবং সামান্য পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম আছে।

■ লটকনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। দিনে দু-তিনটি লটকন খেলে শরীরের ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ হয়। রুচি বাড়াতে লটকন বেশ উপকারী।

■ যেহেতু লটকনে ভিটামিন সি আছে তাই লটকন ত্বক, দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখতে বেশ কার্যকর। লটকন অ্যান্টিঅ্যাক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ।

■ রক্তশূন্যতা রোধে লটকন বেশ সহায়তা করে। যেহেতু লোহা আছে সেহেতু লটকন হাড়ের জন্য বিশেষ উপকারী।

■ লটকনে ভিটামিন বি পাওয়া যায় বলে স্কার্ভি রোগ ও মুখের ঘা সারাতে ও প্রতিরোধে সহায়ক।

■ খাদ্যশক্তির ভালো উৎস লটকন। লটকনে ৯২ কিলোক্যালরি/গ্রাম খাদ্যশক্তি পাওয়া যায় বলে শরীরে শক্তি জোগায়, পাশাপাশি মানসিক অবসাদ দূর করতেও সাহায্য করে।

■ লটকনের অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইম দেহ গঠন ও কোষকলা সুস্থ রাখে। তবে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁদের পরিমাণমতো খেতে হবে।

সুস্বাদু ডাবের শাঁস

সুস্বাদু ডাবের শাঁসে কার্বোহাইড্রেটস (১৫.২৩ গ্রাম), প্রোটিন (৩.৩ গ্রাম), বি৯ বা ফোলটেস (২৬ মাইক্রোগ্রাম), বি৩ বা নিয়াসিন (০.৫৪০ মিলিগ্রাম), ভিটামিন বি৫ বা প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (০.৩০০ মিলিগ্রাম), পাইরিডোক্সিন (০.০৫৪ মিলিগ্রাম), বি২ বা রিবোফ্ল্যাভিন (০.০২ মিলিগ্রাম), বি১ বা থিয়ামিন (০.০৬৬ মিলিগ্রাম), ভিটামিন সি (৩.৩ মিলিগ্রাম), ভিটামিন ই (০.২৪ মিলিগ্রাম), ভিটামিন কে (০.২ মাইক্রোগ্রাম), সোডিয়াম (২০ মিলিগ্রাম), পটাশিয়াম (৩৫৬ মিলিগ্রাম), ক্যালসিয়াম (১৪ মিলিগ্রাম), কপার (০.৪৩৫ মিলিগ্রাম), লোহা (২.৪৩ মিলিগ্রাম), ম্যাগনেশিয়াম (৩২ মিলিগ্রাম), ম্যাঙ্গানিজ (১.৫০০ মিলিগ্রাম), সেলেনিয়াম (১০.১ মাইক্রোগ্রাম), জিঙ্ক (১.১০ মিলিগ্রাম), বিটা ক্যারোটিনও ফাইটোস্টেরলস আছে।

■ শাঁসের পুষ্টি ও অাঁশ দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে। শাঁসে আছে মিডিয়াম চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দ্রুত শরীরে মিশে যায়। উচ্চমাত্রায় ফাইবার আছে বলে খাবার হজমে বেশ উপকারী।

■ শাঁসে অধিক পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ আছে, যা ফ্যাট ও প্রোটিন মেটাবোলাইজ করতে বেশ কার্যকর।

■ দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শাঁস দারুণ উপকারী।

■ শাঁস রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। এ ছাড়া শরীরের ভিটামিন ই, থায়ামিন ও আয়রনের মাত্রা ঠিক রাখে। আয়রন শরীরের রক্ত চলাচলে সহায়তা করে।

■ শাঁসের পটাশিয়াম শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্যকর। এ ছাড়া হৃদ্‌যন্ত্রের সক্রিয়তা ও মাংসপেশি গঠনে বেশ উপকারী। ডাবের শাঁস শরীরের হাড় পাতলা ও ভঙ্গুরতা, অস্টিওপোরোসিসকে প্রতিরোধ করে।