টিফিন নিয়ে

মজার টিফিন সবারই পছন্দ। ছবি: নকশা
মজার টিফিন সবারই পছন্দ। ছবি: নকশা
>শুরু হলো উদ্ভাবন পর্ব। কত ধরনের টিফিন যে তৈরি করতে হতো! কত ধরনের স্যান্ডউইচ, কত ধরনের রোল! পরোটার সঙ্গে শামি কাবাব বা টিকিয়াও বাদ গেল না।

নতুন টিফিন বক্সটা দেখে খুশিতে আটখানা সনকা। মনে হলো, এখানে রাখা সব খাবার সাবাড় করবে এক লহমায়।
স্কুলের প্রস্তুতি চলছে। জীবনে প্রথম পা রাখবে স্কুলে। তারই তোড়জোড়।

পরীক্ষামূলকভাবে স্কুলের প্রথম দিনের আগের রাতে সেই বাক্সে রাখা হলো একটা ডিম, সঙ্গে একটু ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। টিভি দেখতে দেখতে টিফিন বক্সটা কোলে নিয়ে পুরোটাই খেয়ে নিল ও। পরীক্ষায় পাস করলাম আমরা। পরদিন সকালে টিফিন বক্সে এই খাবারটাই দেওয়া হলো।

স্কুলের প্রথম দিনটা খুবই আনন্দে কাটল সনকার। কত যে গল্প করল! টিচার কেমন, কোন মেয়েটা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছিল, কোন মেয়ে ওকে পেনসিলের খোঁচা মেরেছে—বলল সবিস্তারে।
লুকিয়ে টিফিন বক্স খুলে দেখি, মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ করছে ভিতরটা। কিছুই নেই তাতে।
আশ্বস্ত হলাম। পরদিনও একই অভিজ্ঞতা।

সব পাল্টে যেতে থাকল তৃতীয় দিন থেকে। এদিন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হাওয়া, কিন্তু ডিমটা পড়ে আছে বক্সের এক কোণে।
পরদিন একই ব্যাপার। বোঝানো হলো, ডিম খেলে শক্তি বাড়ে। দুই পদের সঙ্গে যুক্ত হলো একটা চকলেট বার (গল্পটা বেশ আগের। বাচ্চারা কাড়াকাড়ি করবে বলেই এখন অনেক স্কুলেই টিফিনে চকলেট, চিপস নেওয়া বারণ)।

এবার কয়েকটা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই পড়ে থাকল ডিমের সঙ্গে। চকলেট নেই।
মুশকিলে পড়া গেল। যুক্তিপূর্ণ উপদেশ এখানে কোনো অর্থ বহন করছে না। এবার দাবি, টিফিনে শুধু চকলেট দিলেই হবে, আর কিছু নয়। তাতে পেটে কৃমি হবে, সেই কৃমি পেটের নাড়িভুঁড়ি গিলে খাবে—এ ধরনের সতর্কবাণী আমলেও নিল না ও। চকলেটই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার—এটা প্রমাণের জন্য চোখ থেকে ঝরাল এক টন পানি।
কৌশল বদলাতে হলো। হ্যাঁ, চকলেট দেওয়া হবে। তবে সঙ্গে নুডলস থাকলে কেমন হয়?

কাজ হলো। খেল। কিন্তু পরদিনই নুডলসের অর্ধেকটা ফিরে এল। সন্ধ্যায় ওয়াল্ট ডিজনির বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট দেখতে দেখতে বলল, ‘বেলা যা খায়, আমি তাই খাব।’ কার্টুন ছবিটায় বেলা তো দানবটাকে স্যুপ খেতে শেখাচ্ছিল। কার্টুনের জীবন্ত কেটলিটা এনেছিল চা! স্যুপ তো টিফিনে দেওয়া যায় না।
তখন ও বলল, ‘আলু দিয়ো।’

মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! ব্যস! সেদ্ধ আলুতে মাখন, লবণ আর গোলমরিচ দিয়ে তৈরি হলো খাবার। সঙ্গে থাকল একটা সসেজ। প্রায় এক সপ্তাহ নিশ্চিন্ত থাকা গেল। টিফিনের খাবারে যে বৈচিত্র্য থাকা খুব দরকার, ওর আলু-সসেজ প্রীতিতে সে কথাও গেলাম ভুলে। ফলে কদিন পরেই ফিরে আসতে লাগল টিফিন-চকলেটটি শুধু উধাও!

এরপর শুরু হলো উদ্ভাবন পর্ব। কত ধরনের টিফিন যে তৈরি করতে হতো! কত ধরনের স্যান্ডউইচ, কত ধরনের রোল! পরোটার সঙ্গে শামি কাবাব বা টিকিয়াও বাদ গেল না। তখনো পাস্তা-যুগ আসেনি। এলে হয়তো সেটাও যোগ হতো টিফিনে।

অন্য রকম বিড়ম্বনাও ছিল। কোনো মেয়ে হয়তো এমন কিছু বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে, যা ওর খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু কী সেটা, তা ঠিকভাবে বলতে পারে না। ওর বর্ণনা অনুযায়ী টিফিন বানানোর পর বলেছে, ‘এ রকম নয়। ওর মতো বানাও।’ সে সময় কষ্ট হতো বেশি। অজানা টিফিন কী করে বানানো যায়! বেশির ভাগ সময়ই টিফিন তৈরিতে জিপিএ-৫ পাওয়া যেত না, বেশির ভাগ সময়ই নিদারুণ ফেল।

সে বহুকাল আগের কথা। সনকা এখন বড় হয়েছে। এখন ওকে টিভি দেখিয়ে খাওয়াতে হয় না। ভাজি, ভর্তা, সবজি, মাছ, মাংস—সবই খায় মজা করে। ভাবি, ইশ্! স্কুলজীবনে যদি ওর রুচি এখনকার মতো হতো, তাহলে প্রতিদিন টিফিন নিয়ে পরীক্ষায় পড়ার আতঙ্কে থাকতে হতো না।