সে নিজেই আমাকে তালাক দিতে বলে

>

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা

আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। জুলাই মাসের শুরুতে পরিবারের সিদ্ধান্তে বিয়ে করেছি। আমার বয়স ৩২ বছর, স্ত্রীর ২১। সে এখনো লেখাপড়া করছে। বিয়ের আগে তার সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি। তাই বিয়ের পর দূরত্বসুলভ আচরণকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিলাম। দূরত্ব কাটাতে আমি তাকে সময় দিতাম এবং ফ্রি হওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু বিয়ের আট দিনের মাথায় জানায়, সে আমাকে পছন্দ করে না, এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। ছেলেটি প্রবাসী। তাদের প্রতিনিয়ত কথা হয়। সব শুনে আমি কোনো নেতিবাচক আচরণ করিনি। তবু সে নিজেই আমাকে তালাক দিতে বলে, না হলে সে আত্মহত্যা করার হুমকি দেয়। তার এই সম্পর্কের ব্যাপারে নাকি তার পরিবারের কেউ জানে না। তার পরিবারকে জানালে ভয়ংকর কিছু করবে। এ জন্য তার পরিবারকেও আমাকে জানাতে দিচ্ছে না। আমার মা ছাড়া আসলে কোনো অভিভাবক নেই। এখন আমি কী করব, তা বুঝে উঠতে পারছি না।
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ

মেয়েটি এখন যে ধরনের আচরণ করছে, তা তোমার মধ্যে দুঃসহ যন্ত্রণা তৈরি করছে। নিজেকে অত্যন্ত অসহায় আর প্রতারিত মনে হচ্ছে এবং একই সঙ্গে ভয়ও লাগছে যখন সে আত্মহত্যা করার কথা বলছে।

তুমি তো এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলে না। তোমার সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে ব্যাপারটি কারও সঙ্গে আলোচনাও করতে পারছ না। বিবাহিত জীবন নিয়ে তোমার হয়তো অনেক স্বপ্ন ছিল, যেগুলো ভীষণভাবে ধাক্কা খেয়েছে এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে।

বোঝা যাচ্ছে, মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে চলেন না। হয়তোবা তাঁরা ছোটদের মতামতকে একেবারেই গুরুত্ব দেন না এবং নিজেদের ইচ্ছাগুলোই চাপিয়ে দেন।

তবে মেয়েটি যে তার সম্পর্কের কথা কাউকে কিছু না জানিয়ে তোমার সঙ্গে বিয়েতে রাজি হয়েছে, সেটি তার অনেক বড় একটি ভুল হয়েছে। তোমার ওপরে বিশাল একটি দায়িত্ব এসে পড়েছে, যা হওয়ার কথা ছিল না। তোমার যে অনেক সহিষ্ণুতা রয়েছে, সেটি প্রশংসনীয়। তুমি যথাসাধ্য চেষ্টাও করেছ কোনোরকম জোর না করে সময় দিয়েছ নিজেকে তৈরি করার জন্য, সে কারণেই সাহস করে তোমাকে কথাটি বলতে পেরেছে। তবে খুব প্রয়োজন ছিল বিয়ের আগে মেয়েটির সঙ্গে কিছুদিন কথা বলে ওর মনটি বোঝার চেষ্টা করা।

বর্তমান যুগে কিন্তু বাবা-মা বিয়ে ঠিক করলেও পরিবারগুলোই উৎসাহিত করে বিয়ের আগে বেশ কিছুদিন দেখা করে ও কথাবার্তা বলে তারা যেন পরস্পরকে কিছুটা হলেও বোঝার সুযোগ পায়। যেহেতু বিয়ে একটি দীর্ঘ সময়ের স্থায়ী সম্পর্কে যাওয়ার পরিকল্পনাটির প্রথম ধাপ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়, এর আগেই জানাশোনা হওয়াটা খুবই জরুরি। সেটি করতে পারলে হয়তোবা মেয়েটি তোমাকে অনুরোধ জানাতে পারত বিষয়টি যেন বিয়ে পর্যন্ত না গড়ায়। ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে খুলে না বললেও তুমি বুঝতে পারতে সে এখন বিয়ে করার জন্য একেবারেই প্রস্তুত নয়। এর ফলে তুমিও ওকে বিয়ে করা ঠিক হবে কি না সেটি ভাবার সুযোগ পেতে। এখন তোমার তো অপরিসীম কষ্ট হচ্ছেই, সেই সঙ্গে মেয়েটির অসহায়ত্ব চরমে পৌঁছে গেছে। তোমার এবং মেয়েটির পরিবার যখন বিষয়টি জানবে, তখন তারাও অনেক এলোমেলো আচরণ করতে পারে। তবে ওর পরিবারের কোনো একজন সদস্যকে বা মেয়েটির কোনো বন্ধু, যাকে সে বিশ্বাস করে তার কাছে বিষয়টি জানানো প্রয়োজন। তোমার পক্ষে তো দীর্ঘদিন এই মানসিক বোঝা বহন করা সম্ভব নয়।

মেয়েটির অনুভূতির প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে তুমি ওকে জানাও যে তোমাকে  বিষয়টির ব্যাপারে একটি পদক্ষেপ নিতেই হবে। তুমি এভাবে মনে এতটা কষ্ট নিয়ে ওর কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারছ না। ও যদি কোনোভাবেই কাউকে জানাতে না চায় এবং এভাবেই তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে অন্য সম্পর্কটি চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে তার দায়িত্বের জায়গাটি সে একেবারেই পালন করছে না বলে ধরে নিতে হবে। এ ছাড়া মেয়েটি তোমার বাসায় নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেললে তুমি যেহেতু বিপদে পড়বে, তাই তোমার নিজের নিরাপত্তা রক্ষার্থে শেষ পদক্ষেপ হিসেবে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে এই বলে যে, তোমার নববিবাহিত স্ত্রী আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে এবং তুমি এতে করে প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছ।