সাবধানে রাখুন কাঠের আসবাব

কাঠের আসবাবের স্থায়িত্ব বাড়াতে নিয়মিত বার্নিশ করা প্রয়োজন
কাঠের আসবাবের স্থায়িত্ব বাড়াতে নিয়মিত বার্নিশ করা প্রয়োজন

বর্ষা শেষে এসেছে শরৎ। তবে প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে। কেউ দারুণ উপভোগ করেন এই সময়টা, কেউ আবার কাদা-পানি মাড়িয়ে ছোটেন জীবনের প্রয়োজনে। ঘরের প্রতিটি জিনিস যিনি গুছিয়ে রাখেন, যত্নে রাখেন—তাঁর চিন্তা কাঠের আসবাব নিয়ে। বৃষ্টির সময় যে সহজেই নষ্ট হয়ে যায় কাঠের সামগ্রী। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় কাঠের জিনিস ফুলে উঠে বেঁকে যেতে পারে, আকৃতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় সাদাটে ছোপ পড়তে দেখা যায়। তবে কিছু বিষয়ে যত্নশীল হলে এসব সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া বলেন, ‘এখনও আবহাওয়া একটু স্যাঁতসেঁতে অর্থাৎ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা কাঠের তৈরি আসবাব বা কাঠের অন্য যেকোনো জিনিসের জন্য খারাপ। এর কারণ হলো কাঠের জলীয় বাষ্প শোষণ করার ক্ষমতা।’

নিয়মিত বার্নিশ

নিয়মিত বার্নিশ করালে কাঠের জিনিসের ওপর স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়ে না। তাই প্রতিবছরই কাঠের সামগ্রী বার্নিশ করিয়ে নিন।

যদি বার্নিশ করানোর কাজটি ঝামেলার মনে হয়, তাহলে বাজার থেকে ‘ল্যাকার বার্নিশ’ কিনে নিজেই কাঠের সামগ্রী বার্নিশ করতে পারেন। এটি স্প্রে। এর প্রয়োগে বাড়তি দক্ষতার প্রয়োজন নেই, তাই মিস্ত্রি না ডাকলেও চলবে। মাসে বা দুই মাসে একবার এই স্প্রে ব্যবহার করা ভালো। এমনকি বৃষ্টির সময়ও এই বার্নিশ ব্যবহার করা যায়। এমনটাই জানালেন অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া।

খোলামেলা পরিচ্ছন্ন

এ সময়ে ঘরের দেয়াল একটু ভিজে উঠতে পারে। তাই দেয়াল ঘেঁষে আসবাব রাখা ঠিক নয়। সারা বছরই আসবাব রাখতে হবে দেয়াল থেকে একটু দূরে, যেন বাতাস চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে। আসবাবগুলোর বিন্যাসও এমন হতে হবে, যেন সেগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে গায়ে গায়ে লেগে না থাকে। এই ফাঁকা অংশে বাতাস চলাচল করলে আসবাব শুষ্ক থাকে এবং আসবাবের পেছনের ও আশপাশের ময়লা পরিষ্কার করাও সহজ হয়।

ঘরটাই আর্দ্র?

কাঠের আসবাব আর্দ্রতা আর ভেজা জিনিস থেকে দূরে রাখতে হবে। জানালা থেকে দূরে বা জানালার এক পাশে এমনভাবে আসবাব সাজানো উচিত, যাতে বৃষ্টির ছাঁট সহজেই ছিটে না আসে। এমনিতেই বৃষ্টির সময় কিংবা ভেজা বাতাসের সময় প্রয়োজন না থাকলে জানালা-দরজা আটকে রাখুন, এতে ঘরের সব কাঠের সামগ্রী ভালো থাকবে। এ রকম সময়ে সব দরজা-জানালা বন্ধ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালিয়ে দিতে পারেন, ঘরের বাতাসের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র ব্যবহার করতে না চাইলে ভেজা বাতাসের সময় বা বৃষ্টির সময় যে ঘরটিতে অবস্থান করছেন, শুধু সেই ঘরের জানালা খোলা রাখুন, তাহলে গুমোট লাগবে না।

আসবাবে আর্দ্রতা এড়াতে

আর্দ্র বাতাসের কারণে ওয়ার্ডরোব বা আলমারিতে রাখা কাপড়ে সোঁদা গন্ধ হতে পারে, মাড় দেওয়া কাপড় নরম হয়ে যেতে পারে। তাই ন্যাপথলিন বা কর্পূর রাখা ভালো। এগুলো আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়, ফলে কাপড় ও আসবাব দুই-ই ভালো থাকে।

অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া জানালেন, নিমপাতাও একই কাজ করে। নিমপাতা রোদে শুকিয়ে নিয়ে গুঁড়া করে একটি নরম কাপড়ে পুরে ছোট পুঁটলি বানিয়ে নিতে পারেন। পুঁটলির মুখ বেঁধে ড্রয়ার, ওয়ার্ডরোব বা আলমারির তাকের এক কোণে রেখে দিন। নিমের গুঁড়ার ঝরঝরে ভাবটা কমে এলে বুঝতে হবে তা পাল্টে নেওয়ার সময় হয়ে গেছে। ভেজা কাপড়, তোয়ালে প্রভৃতি কোনো অবস্থাতেই কাঠের আলনা বা দরজাতে ঝোলানো যাবে না। এ ছাড়া কাঠের সামগ্রী পরিষ্কার করতে কখনোই ভেজা কাপড় ব্যবহার করা উচিত নয়; এগুলো পরিষ্কার করতে শুকনো ও নরম কাপড় বেছে নিন।