এবার নজর দিন স্বাস্থ্যের দিকে

ঈদের সময় ভারী খাবার অনেক হয়েছে। এবার এসব খাবার কম খেতে হবে। ছবি: অধুনা
ঈদের সময় ভারী খাবার অনেক হয়েছে। এবার এসব খাবার কম খেতে হবে। ছবি: অধুনা

এই ঈদের পর খাওয়াদাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকরণ হলো গরু ও খাসির মাংসের নানা পদ। এগুলো যে বেশি খাওয়া ভালো না, তা সবাই জানেন। তবে স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে ও মাত্রা বুঝে খেলে ক্ষতিকর দিকগুলো অনেকটা কমানো যায়। আসুন জেনে নিই কীভাবে এই সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ

যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে বা রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি, তাঁদের জন্য রেডমিট বা লাল মাংস ভালো নয়। এ কারণে যে তা হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে এই সময় রেডমিট তো কিছু খাওয়া হবে। খাওয়ার সময় যতটা সম্ভব মাংস চর্বিমুক্ত করে নিন। মাংসের গায়ে লেগে থাকা সাদা চর্বির আস্তরণ পুরোটাই কেটে ফেলে দিন। তেল, ঘি, বাটার এড়িয়ে দই, সিরকা, লেবুর রস দিয়ে ম্যারিনেট বা বেক ও স্টেক করে খাওয়া গেলে ভালো। সামান্য তেল ব্রাশ বা কাবাব করে খেলে অনেকটা চর্বিমুক্ত করা যায়। পায়া, নেহারি, মগজ ইত্যাদি না খাওয়াই উচিত। আর হ্যাঁ, প্রতি বেলা মাংসের পদ না খেয়ে একবেলা সবজি বা মাছ রাখুন। উচ্চ রক্তচাপের ও হৃদ্‌রোগীরা লবণ কমানোর জন্য সয়া সস, বারবিকিউ সস, টেস্টিং সল্ট ইত্যাদি পরিহার করুন।

কিডনি সমস্যা

কিডনি রোগীদের অনেক সময় প্রোটিন মেপে খেতে বলা হয়। রেডমিটে উচ্চমানের প্রোটিন আছে, তাই এটি কিডনি রোগীদের হিসাব করে খেতে হবে। সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রোটিন আছে ২৬ থেকে ২৭ গ্রাম, আর চর্বি আছে সাড়ে ৭ গ্রামের মতো। ওদিকে একই পরিমাণ খাসি বা ভেড়ার মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ ৩০ গ্রাম ও চর্বির পরিমাণ ১০ গ্রামের ওপর। তার মানে, গরুর চেয়ে খাসিতে এই উপাদানগুলো বেশি আছে। কিডনি রোগীদের সারা দিনে সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ গ্রামের মতো প্রোটিন বেঁধে দেওয়া হয়। সে জন্য প্রতি বেলা এক বা দুই পিস মাংস খেলেই কোঠা প্রায় পূরণ হয়ে যায়। মাংস খেলে তাঁর উচিত হবে অন্যান্য প্রোটিন, যেমন ঘন ডাল, ছোলা, বীজজাতীয় জিনিস বা ডিমের সাদা একই সঙ্গে না খাওয়া। এ সময় প্রতিদিন মাত্রাতিরিক্ত মাংস খেলে কিডনি রোগীদের ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে।

ইউরিক অ্যাসিড

গেঁটে বাত থাকলে বা ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে রেডমিট খাওয়া বারণ, এমন কথা অনেকে শুনে থাকবেন। ইউরিক অ্যাসিড নানা কারণে বাড়তে পারে (যেমন কিডনি ফেইলিউরে), সব সময় মাংস খাওয়াকে দায়ী করা যায় না। আর রক্তে ইউরিক অ্যাসিড অতিরিক্ত তৈরি হওয়ার পেছনে কেবল মাংসের ভূমিকাই প্রধান নয়, আরও নানা বিষয় আছে। তারপরও উচ্চমাত্রার পিউরিন আছে এমন খাবার একটু কমই খাওয়া উচিত। মজার ব্যাপার হলো সাধারণত রেডমিট, মুরগি, মাছ ও ডালজাতীয় খাবারে পিউরিনের মাত্রা মাঝারি, অতি উচ্চ নয়। অতি উচ্চমাত্রার পিউরিন আছে গরু ও খাসির কলিজায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য

গরু ও খাসির মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগীদের সমস্যা বাড়ে, কারও পাইলস বা ফিসারের সমস্যা এ সময় বেড়ে যেতে পারে। এই সমস্যা কমাতে এ সময় মাংসের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবারও খাওয়া উচিত। টেবিলে মাংস বা নানা পদের কাবাবের আইটেমের পাশাপাশি নানা রকম সবজি, সালাদ ও ফলমূল রাখুন। মাংস কেবল ভুনা না খেয়ে পেঁপে বা নানা ধরনের সবজি দিয়ে রান্না করুন। প্রচুর পানি পান করতে হবে।

ওজনাধিক্য

যাঁদের ওজন বেশি, তাঁরা চর্বি কম খাওয়ার উদ্দেশ্যে রেডমিট এড়িয়ে চলেন। তবে বিভিন্ন উপায়ে আপনি মাংসের চর্বির পরিমাণ অনেকটাই কমাতে পারেন, আগেই বলেছি। এ সময় মাংস বেশি খেলে সঙ্গে শর্করার পরিমাণ (যেমন ভাত বা মিষ্টিজাতীয় খাবার) বাদ দিয়ে দিন, কেননা শর্করাও ওজন বাড়ায়। ভাত, পরোটা ও অন্যান্য ভাজাপোড়া নাশতা এড়িয়ে চলুন এ সময়। আর হ্যাঁ, ঈদের এই সময়েও ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে ভুলবেন না। ক্যালরি একটু বেশি খাওয়া হয়ে গেলেও ব্যায়ামের মাধ্যমে সেই ক্যালরি ক্ষয় করে ফেলুন।

লেখক: চিকিৎসক