চুল ধোয়া, চুল শুকানো

প্রতিদিনই চুল ধুতে হবে। মডেল: সৌমি, ছবি: নকশা
প্রতিদিনই চুল ধুতে হবে। মডেল: সৌমি, ছবি: নকশা

চুলের দিকে বাড়তি নজর দিতে হয় সবসময়ই। না হলে চুল পড়া, খুশকি-ফুসকুড়ির মতো ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে, নিয়ম মেনে চুল ধোয়া ও শুকানোর কাজটা না হলে সমস্যা হবেই। চুল বিষয়ে কিছু পরামর্শ জানালেন হারমনি স্পার রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা ও হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ার ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি।

চুল ধোয়া

অনেক সময় গোসলের আগে বাইরে যাওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে মাথার ত্বকে একটু ট্যালকম পাউডার দিয়ে চুল ভালো করে আঁচড়ে নিলে ত্বকের রন্ধ্রগুলো (ফলিকল) বন্ধ হয়ে থাকে। এতে বৃষ্টির পানিও মাথার ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে না। বৃষ্টির পানি পড়লেই চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। চুল আবার বেশি বেশি ধোয়া হলে রুক্ষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে একটু গোলাপজল মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিলে এ সময় চুলে উৎকট কোনো গন্ধ থাকবে না।

ছবি: নকশা
ছবি: নকশা

চুল ধোয়ার আগে বেলি ফুলসমৃদ্ধ তেল মাথার ত্বকে মালিশ করে চুল ধুয়ে ফেললে ভ্যাপসা গন্ধ হবে না। সে ক্ষেত্রে বাজারের তেল ছাড়াও ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন বেলি ফুলের তেল। কয়েকটি তাজা বেলি ফুল নারকেল তেলের মধ্যে দিয়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিট গরম করে তা ছেঁকে একটি বোতলে ভরে রেখে দিন। আর চাইলে এর মধ্যে এক চিমটি কর্পূর দিয়ে নিতে পারেন।

চুল সারা দিন ঝরঝরে রাখতে শ্যাম্পু করার সময় অবশ্যই এর সঙ্গে একটু লেবুর রস বা ভিনেগার মিশিয়ে নিতে হবে। চুলে প্রতিদিনই শ্যাম্পু করা ভালো, তাই মৃদু ক্ষারের অথবা হাতে বানানো বা প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।

কোনো কারণে ছত্রাকের সংক্রমণ হলে শ্যাম্পু করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন নখের আঁচড় মাথার ত্বকে না লাগে। আর শ্যাম্পু করার সময় চুল ঘষাঘষি না করে মাথার ত্বক মালিশ করে শ্যাম্পু করতে হবে। চুল সামনের দিকে না এনে পেছনের দিক দিয়ে শ্যাম্পু করতে হবে এবং ঝরনা ব্যবহার করে শ্যাম্পু ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে খুব সুন্দরভাবে শ্যাম্পু চুল ও স্কাল্প থেকে ঝরে যাবে। খুব ভালোভাবে লক্ষ রাখতে হবে, চুলে বা স্কাল্পে যেন শ্যাম্পু না লেগে থাকে।

গোসলের পর কিছুক্ষণ চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখা যায়। মডেল: অন্তরা
গোসলের পর কিছুক্ষণ চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখা যায়। মডেল: অন্তরা

আদা-রসুন পেস্ট করে তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাকটি ১০ মিনিট চুলে লাগিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে পারেন। আদা ও রসুন দুটোই ছত্রাকরোধী হিসেবে কাজ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। চায়ের লিকার চুলের ত্বকের জন্য ভালো, যা অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এক চামচ চা-পাতা পানিতে জ্বাল দিয়ে লিকার তৈরি করে নিন। শ্যাম্পু করার পর এই লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে।

চুল শুকানো

চুলের জন্য টোনার তৈরি করে রাখতে পারেন। একটানা ১৫ থেকে ২০ দিন এই টোনার রেখে ব্যবহার করা যায়। মৌরি ও মেথি এক কাপ করে নিয়ে তিন কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে দেড় কাপ পরিমাণ করে নিতে হবে। এরপর ছেঁকে একটি স্প্রে বোতলে রেখে রাতে বিলি কেটে মাথার ত্বকে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়ার পর চুল বেঁধে ঘুমাতে হবে। চুল শুকনো অবস্থায় রাতে এই টোনার ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুল ও মাথার ত্বক ছত্রাকমুক্ত থাকবে।

হেয়ার ড্রায়ারের শীতল হাওয়ায় চুল শুকাতে হবে। ছবি: নকশা
হেয়ার ড্রায়ারের শীতল হাওয়ায় চুল শুকাতে হবে। ছবি: নকশা

ঠান্ডা বাতাসে চুল শুকাতে হবে। হেয়ার ড্রায়ারের হট অপশন ব্যবহার না করে, কোল্ড অপশন ব্যবহার করে চুল শুকাতে হবে। এক কাপ মিনারেল ওয়াটারের সঙ্গে এক চা-চামচ কর্পূর ও পছন্দ অনুযায়ী কয়েক ফোঁটা সুগন্ধি নিয়ে একটি বাতাসরোধী বোতলে ভরে রাখতে পারেন। টোনারটি চুল শুকানোর আগে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে দিনভর সতেজতার সঙ্গে সঙ্গে চুল সুন্দরও থাকবে।

মনে রাখা ভালো—

চুল যেন কখনোই ভেজা অবস্থায় না থাকে।

চুল ধোয়ার পর খুব ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।