সুগন্ধি সারা দিন

সুগন্ধির সৌরভ মনকে সতেজ করে তোলে। মডেল: মীম মানতাসা, সুগন্ধি: সংগৃহীত, পোশাক: আইকনিক ফ্যাশন গ্যারেজ, সাজ: পারসোনা, ছবি: কবির হোসেন
সুগন্ধির সৌরভ মনকে সতেজ করে তোলে। মডেল: মীম মানতাসা, সুগন্ধি: সংগৃহীত, পোশাক: আইকনিক ফ্যাশন গ্যারেজ, সাজ: পারসোনা, ছবি: কবির হোসেন

খালি চোখে দেখা যায় না। তবে অনুভব করা যায়। সেই অনুভব সৌরভের, সতেজতার। সুগন্ধির মজা এখানেই। নিজের উপস্থিতি জানান দেবে। আপনি তো বটেই অন্যরাও তা টের পাবে—নিশ্বাসে।

সুগন্ধির ব্যবহার তো আজকালের নয়। প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষের পছন্দ এটি। অনেকটা অজান্তেই নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলে যায় সুগন্ধি। সুগন্ধি বা পারফিউমের দোকানে গেলে বোতলজাত নানা রকম সুঘ্রাণের মধ্য থেকেই একটি গন্ধ আপনার পছন্দ হবেই। মনে হবে এটিই যেন আপনার জন্য বানানো।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত—মনকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখার কাজটা সুগন্ধিই করে। তাই পোশাক, স্থান আর পরিবেশের সঙ্গে সুগন্ধি মিলিয়ে ব্যবহার করার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুরুর দিকের কথা
ইংরেজিতে পারফিউম, ফরাসিতে পাফাম, বাংলায় পরিচিত সুগন্ধি নামে। কবে কোথায় এর উৎপত্তি, এ নিয়ে আছে বিতর্ক। উৎপত্তিস্থল হিসেবে মেসোপোটেমিয়ার (বর্তমান ইরাক, কুয়েত ও সৌদি আরব) নামই পাওয়া যায় বেশি। বিশ্বের প্রথম নারী রসায়নবিদ তাপ্পুতীর কথা রয়েছে সুগন্ধির বিভিন্ন ইতিহাসে। তিনি মেসোপোটেমিয়ায় ফুল, তেল, গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে তৈরি করতেন সুগন্ধি। লাতিন শব্দ পারফিউমাস (ধোঁয়ার মাধ্যমে) থেকে পারফিউম শব্দটি এসেছে। প্রাচীন মেসোপোটেমিয়া ও মিসরে সুগন্ধি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে রোমান ও পারসিয়ানরা সুগন্ধি বানানোর প্রক্রিয়া আরও আধুনিক করে তোলে। চার হাজার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত সুগন্ধির কারখানার সন্ধানও পাওয়া গেছে সাইপ্রাসে। এখানে ফল ও ফুলের ব্যবহার করা হতো সুঘ্রাণ তৈরিতে।

ব্যক্তিত্ব প্রকাশে
উপহার হিসেবে সুগন্ধি অনায়াসে থাকতে পারে পছন্দের তালিকার শীর্ষে। অনেকেই ভাবেন এটি ব্যক্তিগত উপহার। কে কেমন সুগন্ধ পছন্দ করেন, না জেনে উপহার দিলে হয়ে যাবে হিতে বিপরীত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পছন্দ-অপছন্দ, পোশাক, জীবনযাপন থেকেই বোঝা যায় কার কেমন সুগন্ধি ভালো লাগতে পারে। উল্টো দিকে আপনি কোন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করছেন, তাতে আপনার ব্যক্তিত্ব কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যাবে। উডি (কাঠ) ঘরানার সুগন্ধি যাঁরা পছন্দ করেন তাঁরা প্রকৃতি ও গাছ ভালোবাসেন। রুচিকর এবং অভিজাত, শান্ত চরিত্রের মানুষেরা সবাইকে জানিয়ে দেন তাঁদের পছন্দ উষ্ণ ও পার্থিব অনুভূতি।

অন্যদিকে রোমান্টিক ও নমনীয় মনের অধিকারীরা ফুলের মতো ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি পছন্দ করেন। তাঁরা রুচিকর পোশাক ও সাজ পছন্দ করেন।

ঋজু ব্যক্তিত্বের নারীদের পছন্দ প্রাচ্য (ওরিয়েন্টাল) ঘরানার সুগন্ধি। অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে আট-দশজন থেকে সহজেই আলাদা করা যায় তাঁদের। অকপটে কথা বলতেও ভয় পান না তাঁরা।

উচ্ছল, প্রাণশক্তিতে ভরপুর তারুণ্যের জন্য ফলের নির্যাস। নিরুদ্বেগ থাকতে পছন্দ করেন এমন ব্যক্তিত্বের মানুষেরাও পছন্দ করেন গ্রিন পারফিউম। তাঁরা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন, তাই সারাক্ষণ নিতে চান প্রকৃতির তাজা নির্যাস।

সতেজ থাকার জন্য যেমন গোসল করতে হয়, পরিষ্কার কাপড় পরতে হয়, তেমনি প্রতিদিন সুগন্ধি ব্যবহার করাটাও জরুরি। সতেজ বোধ করার পেছনে সুগন্ধির ভূমিকা অনেক। জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান। তাঁর পরামর্শ, বাইরে যাওয়ার ২০ মিনিট আগে সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত। সে ক্ষেত্রে সুগন্ধি দেওয়ার পরেও মেকআপ দেওয়া যায়। মেকআপ নিয়েও সুগন্ধি দেওয়া যায়। তবে এ সময় কানের পেছনে, হাতের কবজিতে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে মেকআপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। যেসব জায়গায় রক্তের সঞ্চালন বেশি বা শরীরের যেসব জায়গা তুলনামূলক উষ্ণ, সেসব জায়গায় সুগন্ধি স্প্রে করলে সারা দিন ধরে সুরভিত থাকা যায়। ৩০ বছর ধরে ক্লিনিকের অ্যারোমেটিক অ্যালিক্সিয়া ব্যবহার করছেন কানিজ আলমাস খান। এর হালকা সুগন্ধে সারা দিন সতেজ থাকা যায়।

সুগন্ধি আপনার উপস্থিতির জানান দেয় যেকোনো আয়োজনে
সুগন্ধি আপনার উপস্থিতির জানান দেয় যেকোনো আয়োজনে

কোন বেলায় কোন সুগন্ধি
বোতলজাত সুগন্ধি সাধারণত ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। স্থায়িত্বের সময় অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। যাঁরা বেশি ঘামেন তাঁদের সুগন্ধি কম সময় থাকে, জানালেন ঢাকার পারফিউম ওয়ার্ল্ডের ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপক তানভীর আলম। রাত ও দিনের সুগন্ধির মধ্যেও তফাত আছে। প্যাকেটের গায়ে লেখা না থাকলেও রং ও প্যাকেজিং বলে দেবে কখন কোথায় যাওয়ার আগে সুগন্ধিটা ব্যবহার করা যাবে। উজ্জ্বল হলুদ বা কমলা রঙের প্যাকেট হলে সেটা সাধারণত দিনের জন্য, মনে করিয়ে দেবে বসন্তের কথা। গাঢ় নীল, লাল, বেগুনিরঙা প্যাকেজিং বলে দেয় রাতের কথা।

রাতের সুগন্ধিগুলো তুলনামূলক কড়া। আবহাওয়াও প্রভাব ফেলে। আদা, গোলমরিচ, কস্তুরি, জুঁই ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি সুগন্ধি রাতের জন্য আদর্শ। ঠান্ডা আবহাওয়ায় উপকরণ আবার বদলে যাবে। গাছ, অ্যাম্বার (একধরনের পাথর), চামড়ার ব্যবহার করা হয় এমন সুগন্ধিতে। সূক্ষ্ম কিন্তু দারুণভাবেই গন্ধ ছড়িয়ে দেয় এগুলো। ও ডি পারফিউম, ও ডি টয়লেট পারফিউম রাতের ব্যবহারের জন্য ভালো। ভিক্টোরিয়াস সিক্রেটের ভেরি সেক্সি, ক্লিনিকের হ্যাপি, ডিকেএনওয়াইয়ের বি ডেলিসিয়াস, ডিওরের পিওর পয়জন, ডেভিডভ কুল ওয়াটার নাইট ডাইভ, জারা নাইট ও ডি পারফিউম, ভিক্টর অ্যান্ড রফের ফ্লাওয়ার বম্ব, শ্যানেলের কোকো ও ডি পারফিউম, স্টেলার স্টোলা বাই ম্যাকারথি ইত্যাদি সুগন্ধি রাতের দাওয়াতের জন্য ভালো।

হালকা, সতেজ অনুভূতি এনে দেবে এমন কিছু সুগন্ধি সংগ্রহে থাকুক দিনের জন্য। ভেষজ, সাইট্রাস (লেবু, কমলার মতো ফল থেকে), ফুলেল সৌরভ সারা দিনের জন্য। ও ডি পারফিউম, ও ডি টয়লেট ব্যস্ত দিনের জন্য। শ্যানেলের কোকো ম্যাডমোয়াসেল ও ডি পারফিউম, টম ফোর্ডের ব্ল্যাক অর্কিড, ল্যানকমের লা ভিয়ে এস্ট বেল, ভিক্টোরিয়া’স সিক্রেটের বম্বশেল ও ডি পারফিউম, গুচ্চির ব্লুম, বারবারি ও ডি পারফিউম, জেসিকা সিম্পসনের ফ্যান্সি লাভ ও ডি পারফিউম, ভারসাচের ব্রাইট ক্রিস্টাল আবসলু, কমডিটি রেইন ও ডি পারফিউম, দ্য বডি শপ হোয়াইট মাস্ক ও ডি টয়লেট, ক্লোয়ি নোমাড, ডলচে অ্যান্ড গাবানার ডলচে প্রভৃতি সুগন্ধি দিনের জন্য আদর্শ।

কয়েক ফোঁটা সুগন্ধি আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারে
কয়েক ফোঁটা সুগন্ধি আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারে

নানা উপকরণের সমারোহ
সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় নানা উপকরণ। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানই ঘুরেফিরে আসে সুগন্ধিতে।

ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা
মেয়েদের সুগন্ধিতে বেশি থাকে ফুলের ব্যবহার। রোমান্টিক ও মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে দিতে ওস্তাদ ফুল থেকে তৈরি সুগন্ধিগুলো। ডিওরের পয়জন গার্ল, মার্ক জ্যাকবসের ডেইজি, গুচ্চি ব্যাম্বু লিমিটেড এডিশন, ভিক্টোরিয়া’স সিক্রেটস, ইভ সাঁ লহর ব্ল্যাক অপিয়াম ফ্লোরাল শক, ক্যারোলিনা হেরেরার গুড গার্ল, মাইকেল কোর্সের টারকুইস, ক্লিনিক ব্র্যান্ডের হ্যাপি, শ্যানেলের নং ফাইভ, ভিক্টর অ্যান্ড রফের ফ্লাওয়ার বম্ব প্রভৃতি সুগন্ধি মাতিয়ে রাখবে সারা দিন।

টক টক গন্ধে
অম্ল আছে এমন উপকরণে তৈরি সুগন্ধিগুলো সতেজ অনুভূতি এনে দেবে আপনাকে ও আশপাশের মানুষকে। উচ্ছল মানুষদের জন্য বেশি মানানসই এ ধরনের সুগন্ধি। লেবু, কমলার মতো উপকরণ দিয়ে তৈরি করা সুগন্ধিগুলো দিনের বেলার জন্যই বেশি মানানসই। এগুলোর কিছু সুগন্ধি হয়তো তীব্র অনুভূতিও দেবে। তবে বেশির ভাগই নমনীয় ও সতেজ ঘ্রাণের।

বনের নির্যাস
গাছ আর শৈবালের মিশ্রণে তৈরি হয় এই ঘরানার সুগন্ধিগুলো। পুদিনা, ওকমস, সাইট্রাসভিত্তিক উপাদান, বারগামত (কমলাজাতীয় ফল), মিষ্টি পার্থিব সুগন্ধ ব্যবহার করে বানানো এই সুগন্ধিগুলো মূলত করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ব্যবহার করে থাকেন।

প্রাচ্য ঘরানার সুগন্ধি
মৌলিক প্রাকৃতিক উপাদানগুলো দিয়েই মূলত প্রাচ্য ঘরানার সুগন্ধিগুলো তৈরি করা হয়। কারও মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য এই ধরনের সুগন্ধিগুলো বেশ কাজে দেয়।

ফলের সুগন্ধে
ফলের মিষ্টি স্বাদ সুগন্ধি হিসেবেও পছন্দ করেন অনেকে। আপেল, বেরি, আম, পিচ ফলের স্বাদ পাওয়া যায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সুগন্ধিতে। মিস ডিওরের ব্লুমিং বাকেটে ম্যান্ডারিনের গন্ধ পাবেন। প্রাডার মিলানোর এক স্প্রেতেই কমলার মিষ্টি গন্ধ মনকে জয় করে নেবে। সব ঋতুতে দিনের বেলায় ফলের সুগন্ধিগুলো মন রাখবে সতেজ।

সবুজ সৌরভে
দিনের বেলার কোনো আয়োজনের জন্য আদর্শ পছন্দ হতে পারে সতেজ সৌরভ বা গ্রিন ফ্র্যাগন্যান্স। বসন্তের নতুন পাতা বা নতুন ঘাসের অনুভূতি ছুঁয়ে যাবে এ ঘরানার সুগন্ধি ব্যবহারে। ‘ইউনিসেক্স’ (ছেলে ও মেয়ে, উভয়ের জন্য) হিসেবেই বাজারে বিক্রি করা হয়। সাধারণত হালকা সৌরভই ছড়িয়ে রাখবে চারপাশে।

নীল সমুদ্রের হাতছানি
কিছুটা কৃত্রিম সৌরভ খুঁজে পাবেন সামুদ্রিক সুগন্ধির বোতলগুলোয়। আধুনিক আবিষ্কারের তালিকায় সামুদ্রিক সুগন্ধিগুলো যোগ করেছে নতুন মাত্রা। সুগন্ধি বিশেষজ্ঞদের মত হলো, চাকরির সাক্ষাৎকার ও আনুষ্ঠানিক পরিবেশের জন্য তুলে রাখুন এই ঘরানার সুগন্ধি। সৈকত, পাহাড়ের নির্যাস বা পরিষ্কার লিনেন কাপড়ের গন্ধ খুঁজে পাবেন জর্জিওর ওশেন ড্রিমে, ভার্জিন আইল্যান্ড ওয়াটার বাই ক্রিড, টম ফোর্ডের নিরোলি পর্তোফিনো অ্যাকুয়া, ডলচে অ্যান্ড গাভানার লাইট ব্লু, হিলির সেল মেরিন প্রভৃতি সুগন্ধিতে।

ঝাঁজালো মেজাজি
দারুচিনি, আদা, এলাচি, লবঙ্গ, মরিচ ইত্যাদির ঝাঁজালো আঁচ আপনার ও আশপাশের সবার মন-মেজাজকে চাঙা করে রাখবে। একটু তীক্ষ্ণ মেজাজি ঘ্রাণ থাকলেও ক্যাজুয়াল অনুষ্ঠান আর দুপুরের দাওয়াতে এগুলো মানানসই।

ঢাকার হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আফজালুল করিম জনান, সুগন্ধি তৈরিতে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। নিয়মিত ব্যবহারে সমস্যা নেই। তবে অনেক সময় কিছু কিছু জায়গায় জ্বালাপোড়া করতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো স্থানে টানা অনেক দিন সুগন্ধি ব্যবহার করলে অ্যালার্জি হতে পারে। সুগন্ধি ব্যবহারের পর ত্বক চুলকালে বা লাল হয়ে গেলে সুগন্ধি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সুগন্ধে সতেজ
সুগন্ধি লাগানোর আগেও কিছু প্রস্তুতি রয়েছে। হাত-পা ময়েশ্চারাইজ করে নিন। এতে গন্ধ ধরে রাখা যাবে অনেকক্ষণ। এর আগে যদি গোসল করে থাকেন তাহলে তো কথাই নেই। রাতের সুগন্ধিগুলো সাধারণত অনেকক্ষণ স্থায়ী হয় না। গলার কাছে স্প্রে করলে সহজেই ছড়াবে সুগন্ধ। স্প্রে কিছুটা দূর থেকে করা উচিত। অন্তত ৫-৭ ইঞ্চি।

অনেকে মনে করেন সুগন্ধি স্প্রে করে তার মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলেই হবে। মেঘের মতো এসে পড়বে গায়ের ওপর। এ রকম নাটকীয়ভাবে সুগন্ধি লাগাতে পারেন, তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। শরীরের কিছু নির্দিষ্ট স্থান আছে যেখানে লাগালে বেশিক্ষণ সুরভিত থাকবেন আপনি। যেমন রাতের বেলায় আঙুলে নিয়ে কানের পেছনে লাগাতে পারেন। গলার কণ্ঠার আশপাশের জায়গা উঁচু-নিচু হওয়ায় সুগন্ধি আরাম করে নিতে পারে, ত্বকের সঙ্গেও যোগাযোগ ভালো হয়। কাপড় পরার আগে সুগন্ধি লাগান এবং ১০ মিনিট সময় দিন।

এ ছাড়া লাগাতে পারেন হাঁটুর ঠিক পেছনে, কনুইয়ে, নাভিতে, হাতের কবজি, গোড়ালিতে। হাতের কবজিতে সুগন্ধি লাগিয়ে অনেকে দুই কবজি একসঙ্গে ঘষে নেন। এটা ভুল বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নিজে থেকে শুকানোর সময় দিন। এসব জায়গা শরীরের অন্যান্য স্থানের চেয়ে কিছুটা উষ্ণ হওয়ায় সুগন্ধ বেশ কিছুটা সময় আপনাকে ঘিরে রাখবে। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর আবার সুগন্ধি লাগিয়ে নিতে পারেন। সুরভিত থাকবে আপনার পুরোটা দিন।

সুগন্ধি শরীরে এনে দেবে ফুলের সৌরভ
সুগন্ধি শরীরে এনে দেবে ফুলের সৌরভ

বুঝে নিন আসল সুগন্ধি
সুগন্ধি কেনার সময় দেখেশুনে নিতে হবে। ভালো ব্র্যান্ড কেনার পাশাপাশি ভালো দোকান থেকে কেনার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। প্যাকেজিং এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। সেলোফেনের কাগজটি কিছুটা ভারী হবে। বাক্সের ওপর দিয়ে প্যাকেট করা থাকবে মসৃণভাবে। যে কাগজটি দিয়ে বাক্সটি বানানো হয় সেটিও বেশ শক্ত হয়ে থাকে। বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত হালকা রঙের সুগন্ধি বানিয়ে থাকেন। সুগন্ধি পণ্যটির ক্রমিক নম্বর বোতলের নিচের দিকে লেখা থাকবে। আঠা দিয়ে আটকানো থাকবে না। বোতল ও সুগন্ধির বাক্সের নিচের নম্বর একই হবে। আসল সুগন্ধির বোতলটিও ভালো কাচের হয়ে থাকে। বোতলের গঠন ও নকশা যদি মসৃণ ও সূক্ষ্ম না হয় তাহলে সন্দেহ করতে পারেন।

কয়েক বছর ধরে যে কটি সুগন্ধি বিশ্ব মাত করে রেখেছে শ্যানেলের ‘নাম্বার ফাইভ’, ডিওরের জাডোর, কেলভিন ক্লেইনের সি কে ওয়ান, প্রাডার লা ফেমে, এলিজাবেথ আরডেনের রেড ডোর ইত্যাদি সুগন্ধির কথা বলা যায়। বাংলাদেশের ক্রেতারা হুগো বস, কেলভিন ক্লেইন, ভারসাচে, গুচ্চির সুগন্ধি বেশি বেছে নেন বলে জানালেন তানভীর আলম।

 রেখে দিন যত্নে
সুগন্ধি সংরক্ষণের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বাড়িতে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা। তবে রোদ থেকে দূরে। সুগন্ধির প্যাকেট খোলার তিন বছরের মধ্যেই সেটি ব্যবহার করে ফেলা ভালো বলে জানালেন তানভীর আলম। সুগন্ধির রং যদি বদলে যেতে থাকে অথবা ব্যবহারের পর যদি ত্বকে জ্বালাপোড়া ভাব হয় তাহলে সেটি না লাগানোই ভালো।

 সুগন্ধির ধরন
বাজারে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি পাওয়া যায়। পারফিউম, ও ডি পারফিউম, ও ডি টয়লেট, ও ডি কোলন ইত্যাদি লেখা দেখা যায় সুগন্ধির বোতলে। একনজরে জেনে নেওয়া যাক কোনটা কী?

 পারফিউম
পারফিউম লেখা বোতলগুলোয় বেশি ঘনত্বের সুগন্ধি থাকে। পারফিউমে সাধারণত ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুগন্ধ থাকে। ব্যবহার করার পর বেশি সময় (৬-৮ ঘণ্টা) পর্যন্ত গন্ধ ছড়াতে পারে। দামটাও এ কারণে অন্য ঘরানার সুগন্ধির থেকে বেশি। স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য পারফিউম ব্যবহার করা ভালো। এগুলোতে সুগন্ধি তেল বেশি থাকায় ব্যবহারের পর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় না।

 ও ডি পারফিউম
পারফিউমের পর ও ডি পারফিউম বেশি (১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ) সুগন্ধ বহন করে থাকে। ব্যবহারের পর ৪-৫ ঘণ্টার মতো সুগন্ধ আপনাকে ঘিরে থাকবে। পারফিউমের চেয়ে দাম কিছুটা কম। স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য ভালো। প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য আদর্শ। এ ছাড়া রাতের জন্যও এই সুগন্ধি মানানসই।

 ও ডি টয়লেট
৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুগন্ধের ঘনত্ব পাওয়া যাবে ও ডি টয়লেটে। ও ডি পারফিউমের চেয়ে দাম কম হওয়ায় পারফিউমের দুনিয়ায় এর চাহিদাও বেশি। ২ থেকে ৩ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এটি সাধারণত দিনের বেলার জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ও ডি টয়লেটের অর্থ তৈরি হচ্ছি।

 ও ডি কোলন
এই সুগন্ধিতে সবচেয়ে কম ঘনত্বের সুগন্ধি থাকে। ২ থেকে ৪ শতাংশ মাত্র।

 ও ডি ফ্রেশ
১ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুগন্ধির ঘনত্ব থাকে এতে। এটি তৈরিতে পানির ব্যবহারও করা হয়।

 এ ছাড়া মিস্ট, ডিওডরেন্টসহ সুগন্ধি রয়েছে বাজারে। একেবারে ছোট আকারের বোতল বা স্টিকেও কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায়। যেগুলো বাইরে বেরোনোর সময় ব্যাগে রেখে দিতে পারেন।