মনের ঘরে রোদ-বৃষ্টি

নিজের মনকে যেন নিজেই বুঝতে পারে না রুনা (ছদ্মনাম)। মনের যেন কোনো নিশ্চয়তা নেই। ভালোই হয়তো হাসি-খুশি আছে, হঠাৎ কারও সামান্য কথায় এমন রেগে গেল, যেন সব ভেঙে তছনছ করে ফেলবে। কোনো কোনো সময় কাজের এমন উৎসাহ আসে, যেন মনে হয় অল্প সময়ে অনেক কিছু করে ফেলবে। আবার কিছুক্ষণ না যেতেই এমন বিষাদে ডুবে যায় মন, যেন মনে হয় সব ছেড়ে ছুড়ে ‘মরে গেলেই বোধ হয় ভালো’।

মানুষের মনটা একরকম বহমান নদীর মতো। নদীর জল যেমন স্থির থাকে না, আমাদের মনও তেমন। মাঝে মাঝে আনন্দ, বেদনা, কষ্ট, রাগ, ভালো থাকা, খারাপ লাগা, অস্থিরতা, উদ্দীপ্ত হওয়া ইত্যাদি নানা অনুভূতির মধ্য দিয়ে আমরা প্রত্যেকেই প্রতিনিয়ত যাই। 

মুড সুইং কী?

• মনের আবেগের একটি অবস্থাই মুড। মনের অনুভূতির তারতম্য যদি ক্ষণে ক্ষণে বদলায় বা দ্রুত ওঠা–নামা করে, যা সহজেই অন্যের দৃষ্টিগোচর হয়, সেটাই মুড সুইং।

• মনের এই ওঠা-নামা কেন?

• মানুষের মনের এই অতিরিক্ত ওঠা-নামা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক।

• অনেক সময় কোনো মানসিক চাপদায়ক ঘটনার জন্যও সাময়িকভাবে আমাদের মুড সুইং হতে পারে। তবে মুড সুইং আবার ক্ষেত্রবিশেষে নিম্নলিখিত মানসিক রোগের একটি লক্ষণও হতে পারে।

• ব্যক্তিত্বের ত্রুটি (বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার)

• বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার

• র‍্যাপিড সাইক্লিং মুড ডিসঅর্ডার

• দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা (ডিসথাইমিয়া)

• মাদকাসক্তি

• মাদক ছাড়া অন্য কিছুতে আসক্তি/নেশা (যেমন জুয়া, ইন্টারনেট, পর্নোগ্রাফি ও শপিংয়ে আসক্তি,) 

মনের অস্থিতিশীলতার উপসর্গ

• মন এই ভালো, এই খারাপ ইত্যাদির সঙ্গে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো থাকতে পারে।

• হঠাৎ অনিয়ন্ত্রিত রাগ (ভাঙচুর, চিৎকার, গালাগালি, অন্যকে বা নিজেকে আঘাত করা)

• বেপরোয়া বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা (বেপরোয়া ড্রাইভিং, অনিরাপদ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, আত্মহত্যার চেষ্টা বা হুমকি, নিজেকে আঘাত, নেশাদ্রব্য গ্রহণ, ভাঙচুর ইত্যাদি)

• ভবিষ্যতের ফলাফল বিবেচনা না করে প্রায়ই আবেগতাড়িত আচরণ বা সিদ্ধান্ত, যা ক্ষতির কারণ ঘটায়

• সার্বক্ষণিক শূন্যতাবোধ

• বিষণ্নতা বা অতিরিক্ত চঞ্চলতা

• হঠাৎ কথা বলার মাত্রা বেড়ে যাওয়া

• ঘুম কম হওয়া 

মুড সুইংয়ের জন্য কখন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন

• যদি হঠাৎ এই পরিবর্তন ঘটে।

• অন্য বা নিজের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ।

• মনের এই ওঠা–নামা যদি অন্যের কাছে অতিরিক্ত দৃশ্যমান হয়

• মনের এই পরিবর্তনের জন্য যদি জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম (যেমন পারস্পরিক সম্পর্ক, পেশাগত জীবন, দৈনন্দিন জীবন ইত্যাদি) নানাভাবে ব্যাহত হয়।

অন্যরা সামলাবেন কীভাবে?

• মনের হঠাৎ হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে ব্যক্তির অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া না দেখানো।

• মুড সুইংয়ের কারণে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য আচরণ করলে সাময়িকভাবে তার প্রাপ্য কিছু সুবিধা কমিয়ে দেওয়া (যেমন কথা কম বলা, গুরুত্ব কম দেওয়া, ভালোবাসার প্রকাশ কিছুটা কমিয়ে দিন।)

• ব্যক্তি কোনো সমস্যা বা মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে গেলে সে বিষয়ে নিয়ে কথা বলা এবং সমস্যা সমাধানে সাহায্য করা।

সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।