আপনার হৃদযন্ত্রের বয়স কত?

প্রতীকী ছবি: এএফপি
প্রতীকী ছবি: এএফপি

আপনার হাঁটুর বয়স কত? প্রশ্নটি একটু বেমক্কা হয়ে গেল! দয়া করে রাগ করবেন না। খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার বয়স, আর হাঁটুর বয়সে কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু হৃদযন্ত্রটি যে আপনার বয়সেরই সমান হবে, তা কিন্তু এখন আর বলা যাচ্ছে না। যুক্তরাজ্যের সরকারি সংস্থা ‘পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড’ এমন প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে। সংস্থাটি ৩০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের হৃদযন্ত্রের বয়স নির্ধারণ করতে অনলাইনে পরীক্ষা চালু করেছে। এর মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির বিষয়ে আগাম তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে ১৬টি বিষয়ে করা প্রশ্নোত্তর থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হৃদযন্ত্রের বয়স নির্ধারণ করা হচ্ছে। এসব প্রশ্নের সবই সাধারণ শারীরিক ও জীবনযাপন–বিষয়ক। এভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে কি না, সে বিষয়ে জানানো হচ্ছে আগাম তথ্য। সেই সঙ্গে হৃদযন্ত্রের বয়স কমানোর জন্য জনগণকে জীবনযাপনের ধারা পরিবর্তনের বিষয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ।

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের অনুমান, যদি হৃদযন্ত্রের সঠিক সুরক্ষা সম্ভব হতো, তবে ৭৫ বছরের কম বয়সী ৮০ শতাংশ মানুষের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে চারজনের অকালমৃত্যুর ঝুঁকির জন্য দায়ী অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। তাই মানুষের ধূমপান পরিত্যাগ, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ ও পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা উচিত।

তবে এই পরীক্ষা রোগনির্ণয়–সংক্রান্ত নয়। আপনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন, সেটিও বলা হচ্ছে না। কিন্তু এটি আপনার মধ্যে কার্যকর সচেতনতা তৈরি করতে পারে। আর সেই লক্ষ্যেই এমন পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।

৫৯ বছরের ডেভিড গ্রিন এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘অনলাইন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দেখা যায় আমার হৃৎপিণ্ডের বয়স ১০ বছরের বেশি! ওই সময়টায় আমার খুব খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল, আমার জীবন ছোট হয়ে আসছে।’ ডেভিড তাঁর হৃদযন্ত্রের বয়সের কথা জেনে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। তবে একই সঙ্গে তাঁর মধ্যে সচেতনতাও বেড়ে যায়। ফলে হৃদযন্ত্রের যত্নে মনোযোগী হন তিনি।

বিবিসি বলছে, অনলাইনে এখনো পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ মানুষ হৃদযন্ত্রের বয়স নির্ণয়ের এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর প্রকৃত বয়সের চেয়ে তাঁদের হৃদ্‌যন্ত্রের বয়স বেশি। ফলে তাঁদের মধ্যে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। আর ৩৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর হৃদযন্ত্রের বয়স তাঁদের প্রকৃত বয়সের চেয়ে পাঁচ বছর বেশি এবং ১৪ শতাংশের হৃদযন্ত্রের বয়স প্রকৃত বয়সের চেয়ে অন্তত ১০ বছর বেশি।

ইংল্যান্ডে প্রতিবছর হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে ৮৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন ও স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় ভিন্নধর্মী এই পরীক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবসকে সামনে রেখে এই কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার মুখপাত্র ম্যাট কিরেনি বলেন, পরীক্ষাটি লাখ লাখ মানুষকে সহায়তা করার সম্ভাবনা আছে।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ নার্স মাওরিন তালবোট বলেন, হৃদযন্ত্রের বয়স নির্ধারণের উদ্দেশ্য হার্টের রোগ শনাক্ত করা নয়। বরং জনগণকে তাঁদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের বিষয়ে আরও সচেতন করাই এর লক্ষ্য। সে অনুযায়ী তাঁদের জীবনযাপনে সামান্য পরিবর্তন আনা যেতে পারে। যদি কেউ নিজের হৃদযন্ত্রের বয়সের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন, তবে তাঁর উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।