চুল যখন রাজকন্যার

যত্ন নিলে শিশুর চুল থাকবে ভালো। নকশার এ আয়োজনে মডেল হয়েছেন অভিনেত্রী দিলারা জামান ও পদ্মহেম পাবন। ছবি: কবির হোসেন
যত্ন নিলে শিশুর চুল থাকবে ভালো। নকশার এ আয়োজনে মডেল হয়েছেন অভিনেত্রী দিলারা জামান ও পদ্মহেম পাবন। ছবি: কবির হোসেন

ছোট্ট মেয়েটি পরিবারের সবার কাছে তো রাজকন্যাই। তাদের যত্নটাও সেভাবেই নিতে চান বাবা-মায়েরা। ঘুমিয়ে থাকা শিশুর চুলের ঘ্রাণ নেন বুকভরে। যেভাবে মন চায়, সেভাবেই সাজিয়ে দেন চুলগুলো। মনের মতো চুলের সাজ তো থাকছেই, চুলের যত্নেও চাই সচেতনতা। যত্ন না নিলে ছোটদের চুল একটা সময় রুক্ষ ও মলিন হয়ে যায়। ছোট থাকতেই যদি এক ধাপ এগিয়ে যত্ন নেওয়া হয়, বড় হওয়ার পরও পাওয়া যাবে সেটার সুফল।

গোসলের পর চুল শুকিয়ে ঝরঝরে করে নিন
গোসলের পর চুল শুকিয়ে ঝরঝরে করে নিন

যা জানা প্রয়োজন

শিশুর চুলের সুস্থতায় দরকার সুষম খাদ্য। পর্যাপ্ত আমিষ যেমন প্রয়োজন, তেমনি পরিমিত পরিমাণে তেলজাতীয় খাবারও দিতে হবে। শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কারণ এ থেকে পাওয়া যাবে ভিটামিন ও খনিজ (মিনারেল)। যেভাবে পরিবেশন করলে এ খাবারগুলো খেতে পছন্দ করে, সেভাবেই দিতে চেষ্টা করুন শিশুকে। তবে প্রতিদিনই সব পুষ্টি উপাদান শিশু যেন তার খাওয়া থেকে পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে—এমনই জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুরাইয়া বেগম।

অনেকে মনে করেন, ছোটবেলায় চুল বড় রাখলে, পরবর্তী সময়ে সহজেই চুল পড়ে যায় বা পাতলা হয়ে যায়। এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই বলে জানালেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু শিশুদের চুলে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা যাবে না। চুল সোজা করা বা রং করানোর কাজে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়, যা শিশুর জন্যÿক্ষতিকর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তুষার সিকদার জানালেন, শিশুর চুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে।

নিয়মিত যত্নে

শিশুরা অনেক সময় চুলে হাত দিতে দেয় না। চুল আঁচড়ে দেওয়া বা চুলের যত্ন নেওয়ার কাজগুলো করতে দিতে চায় না। তবে যত্নের অভাবে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। পরবর্তী সময় চুলে হাত দিতে গেলে শিশু ব্যথা পায় এবং একসময় চুল পড়ে যেতে থাকে। আবার বাইরে থেকে যত যত্নই নেওয়া হোক না কেন, সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করা না গেলে একসময় চুল পড়ে যেতে থাকে। রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন এই বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে জানালেন কীভাবে শিশুকে বুঝিয়ে ও আদর করে নিয়মিত চুলের যত্ন নিতে হবে।

প্রতিদিন দু-তিনবার চুল আঁচড়াতে হবে। স্কুলে যাওয়ার আগে ও স্কুল থেকে ফেরার পর চুল আঁচড়ে দিন; গোসলের পর চুল শুকিয়ে ঝরঝরে হয়ে এলে চুল আঁচড়ে দেওয়া ভালো।

সপ্তাহে তিন-চার দিন চুল ও মাথার ত্বকে তেল মালিশ করে দিন। এর ৩০-৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু করার পালা। তবে চাইলে রাতে তেল মালিশ করে পরদিন সকালে শ্যাম্পু করানো যেতে পারে। অবশ্য যেসব শিশুর ঠান্ডা লেগে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, সারা রাত ধরে তেল লাগিয়ে না রাখাই ভালো। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র আর মাথায় তেল—দুটোর কারণে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।

শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার লাগাতে পারেন, এর ফলে চুলে জট লাগার ভয় থাকবে না। তবে চুল থেকে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা খুব জরুরি।

অন্তত ১০ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর উপযোগী তেল, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার বেছে নিন। শিশুদের উপযোগী কন্ডিশনার পাওয়া না গেলে বড়দের কন্ডিশনার ব্যবহার করা যায়; তবে তা করতে হবে খুবই সতর্কভাবে। ব্যবহার করার সময় কোনোভাবেই সেটা চুলের গোড়ায় লাগতে পারবে না।

চুল আঁচড়ানো ও তেল লাগাতে হবে নিয়মিত
চুল আঁচড়ানো ও তেল লাগাতে হবে নিয়মিত

 যেমন খুশি, তেমন সাজো?

দু-তিন মাস পরপর শিশুর চুলের আগা কেটে দেওয়া প্রয়োজন। শিশুর চুল যেভাবে খুশি, সেভাবেই কাটতে পারেন। তবে স্টাইল করাতে গিয়ে চুল যেন শিশুর জন্য অত্যাচারের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। বড় চুল যেন শিশুর সহজাত জীবনযাপনে, উচ্ছলতায় বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে এমনভাবেও যেন চুল কাটা না হয় যাতে শিশুসুলভ নিষ্পাপ ভাবটা চেহারা থেকে হারিয়ে যায়।

ঘুমের সময়

ঘুমানোর আগে চুলগুলো গুছিয়ে ঝুঁটি করে বেঁধে দেওয়া ভালো। চাইলে বেণিও করে দিতে পারেন। শিশু স্কুলে চুল ঝুঁটি করে বেঁধে গেলে, রাতে বেণি না করাই ভালো। বেণি করলে চুলে একটু ভাঁজ পড়ে থাকে, যার কারণে সকালে বেণি খুলে ঝুঁটি করলে সুন্দর দেখায় না।

বাদ যাবে কেন রাজপুত্ররা। চুল বাঁধার নিয়ম বাদ দিলে বাকি সব নিয়ম তাদের বেলাতেও একই।