আত্মরক্ষার কৌশলে দক্ষ তাঁরা

পর্দায় তারকাদের অ্যাকশন দৃশ্যে বুঁদ হয়ে যান সাধারণ ভক্তরা। পর্দার অভিনয়কে এতটাই বাস্তব মনে হয় যে মারামারিটাও সত্যি বলেই মনে হয়। অনেক তারকাই আছেন, যাঁরা পর্দার বাইরের জীবনে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে কুংফু, তায়কোয়ান্দোসহ বিভিন্ন রকমের মার্শাল আর্টে পারদর্শী। আজ পড়ুন এমনই কয়েকজন তারকার কথা, যাঁরা বিভিন্ন আত্মরক্ষার কৌশলে বেশ পারদর্শী।
জেনিফার অ্যানিস্টোন বুদোকোন
জেনিফার অ্যানিস্টোন বুদোকোন

বিরহ কাটাতে জেনিফারের বুদোকোন!
বুদোকন হচ্ছে যোগব্যায়াম আর মার্শাল আর্টের সমন্বয়ে তৈরি একটি কৌশল। শারীরিক শক্তি বাড়াতে পশ্চিমা দুনিয়ায় এ কৌশলটি বেশ জনপ্রিয়। হলিউডের অভিনয়শিল্পী জেনিফার অ্যানিস্টোন বুদোকোন জানেন, বেশ ভালোভাবেই। একসময় জেনিফার ও ব্র্যাড পিটের মধ্যে দারুণ প্রেমময় সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরেই বেশ হতাশাগ্রস্ত ছিলেন জেনিফার। তখন হতাশা কাটাতে বুদোকোন শেখেন। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যামেরন শেইন বুদোকোনকে জনপ্রিয় করেন। জেনিয়ার ক্যামেরনের ক্লাবে অংশ নিয়ে বুদোকোন শেখেন। বুদোকোনে এক দিকে যেমন শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়, তেমনি মনের জোর বাড়ে। জেনিফার তাঁর অতীত ভুলতে বুদোকোন শেখেন। নানা শারীরিক কসরতের মাধ্যমে বুদোকোন শিখতে হয়।

জেসিকা বেল
জেসিকা বেল

জেসিকা ভক্ত মার্শাল আর্টের
দ্য ইলিউশনিস্ট আর টোটাল রিকল সিনেমার জন্য বেশ আলোচিত অভিনয়শিল্পী জেসিকা বেল। সবাই আগ্রহের জন্য যেখানে মার্শাল আর্ট শেখেন, সেখানে জেসিকা এটা শেখেন ফিটনেস ধরে রাখার জন্য। সিনেমার ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, প্রতিদিন মার্শাল আর্ট ক্লাসে যান। জেসিকার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই স্বামী জাস্টিন টিম্বারলেককে দেখা যায় মার্শাল আর্ট ক্লাসে।
২০১৫ সালে সন্তান জন্মের সময়ও মার্শাল আর্ট ক্লাসে দেখা যায় জেসিকাকে। সন্তান জন্মের পরে ছেলে সিলাস র‍্যান্ডাল টিম্বারলেককে কোলে নিয়ে মার্শাল আর্ট ক্লাস যেতেন। নিজের শরীর আর স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভীষণ সচেতন বলেই মার্শাল আর্টে সময় দেন। শীত কিংবা বৃষ্টি—কোনো কিছুতেই মার্শাল আর্ট বাদ দেন না। সকালের সূর্য ওঠার পর ক্লাসে ছুটে যান এই তারকা। এক সাক্ষাৎকারে জেসিকা বলেন, ‘আমার কিক বক্সিংয়ে ভীষণ আগ্রহ। আমি প্রতিদিনই কিক বক্সিং চেষ্টা করি।’

রবার্ট ডাউনি জুনিয়র
রবার্ট ডাউনি জুনিয়র

মাদকের বিরুদ্ধে কুংফু লড়াই
পর্দায় তাঁকে সবাই ‘আয়রন ম্যান’ কিংবা ‘শার্লক’ হিসেবে মারামারি আর মাথা খাটাতে দেখে। রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে রোবটদের সঙ্গে কাল্পনিক সব অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য ভীষণ জনপ্রিয়তা আছে। রবার্ট ব্যক্তিজীবনে ব্রুস লির ভীষণ ভক্ত। ব্রুস লির পথ অনুসরণ করে রবার্ট উইং চুং কুংফং চর্চা করে। ব্রুস লি ব্যক্তিজীবনে উইং চুং কুংফং ঘরানার চর্চা করেন। এই কৌশলে প্রতিপক্ষের ওপর দ্রুত আঘাত আনা হয় ছুটে চলার কৌশল শেখা যায়।
২০০৩ সাল থেকে কুংফু শিখছেন রবার্ট। প্রশিক্ষক এরিক ওরামের কাছ থেকে সরাসরি কুংফু শিখছেন রবার্ট। কুংফু শেখার আরেকটি কারণ হচ্ছে একসময় রবার্ট মাদকে আসক্ত ছিলেন। যখন কোনোভাবেই আসক্তি কমাতে পারছিলেন না, তখন কুংফু শেখার কারণে মনকে নিয়ন্ত্রণ করা শেখেন রবার্ট। মন নিয়ন্ত্রণের কৌশলে মাদককে বিদায় জানান রবার্ট। রবার্টের ভাষ্যে, ‘কুংফু আপনার শরীর ও মনের পুনর্গঠনে সহায়তা করে।’ কুংফু শেখার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া সরকার মাদকের জন্য রবার্টের শাস্তি কমিয়ে দিয়েছিল। সিনেমার ব্যস্ততা তেমন না থাকলে যখন দূরের কোনো দ্বীপে ঘুরতে যান, রবার্ট সেখানেও চলে তার কুংফু চর্চা।

কুইন অব পপ ম্যাডোনা
কুইন অব পপ ম্যাডোনা

নাচের জন্য ম্যাডোনার কারাতে শেখা!
কুইন অব পপ ম্যাডোনা কারাতে জানেন। গাই রিচির কাছ থেকে কারাতে শেখার অনুপ্রেরণা পান। কারাতের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে কয়েক মাস প্রশিক্ষণ নেন ম্যাডোনা। ফিটনেস ধরে রাখার জন্য কারাতে শেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কারাতে শেখার পর অনেক মিউজিক ভিডিওতে কারাতের আঙ্গিকে নাচতে দেখা গেছে ম্যাডোনাকে। বিভিন্ন কনসার্টের মঞ্চে কারাতে ঘরানার নাচ দিয়ে মাঝেমধ্যেই চমকে দেন। ম্যাডোনার কারাতে শেখার প্রতি আগ্রহকে আরেক ধাপ নিয়ে গেছেন তাঁর মেয়ে লর্দেস। লর্দেসকেও নিয়মিত দেখা যায় কারাতে ক্লাসে। জানা যায়, প্রতিদিন সকালে ব্যায়ামের সময় কারাতের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে চর্চা করে। পেশাদারভাবে যাঁরা কারাতে চর্চা করেন, তাঁদের মতোই খাওয়াদাওয়া অনুকরণের চেষ্টা করে লর্দেস।

মেলের জিউ-জিৎসু চর্চা
মেলের জিউ-জিৎসু চর্চা

মেলের জিউ-জিৎসু চর্চা
ব্রেভহার্ট সিনেমায় অভিনয়ের জন্য খুবই জনপ্রিয় মেল গিবসন। মার্কিন এই অভিনেতাকে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অভিনেতা হিসেবে মনে করা হয়। মেল গিবসন একাধারে ব্রাজিলীয় জিউ-জিৎসু ও তাই চি চুয়ানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। অনেক বছর ধরেই ব্রাজিলীয় জিউ-জিৎসু ও তাই চি চুয়ানের চর্চা করে আসছেন মেল গিবসন। ২০০৬ সালে এক সিনেমায় অভিনয়ের সময় ব্রাজিলীয় জিউ-জিৎসু ও তাই চি চুয়ানের প্রতি আগ্রহী হয়েছিলেন মেল। সেই আগ্রহে এতটাই মেতে যান যে পরে ব্রাজিলিয়ান জিউ-জিৎসু ও তাই চি চুয়ান শেখার জন্য একটি প্রশিক্ষণ সেন্টারে ভর্তি হয়ে যান তিনি। বিভিন্ন সিনেমায় মাঝেমধ্যেই মেলকে দেখা যায় ব্রাজিলিয়ান জিউ-জিৎসু ও তাই চি চুয়ান ঘরানার অ্যাকশন দৃশ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের কাছে ব্রাজিলীয় জিউ-জিৎসু ও তাই চি চুয়ানকে দারুণ জনপ্রিয় করে তুলেছেন মেল গিবসন। শুধু শেখাই নয়, এখন ব্রাজিলীয় জিউ-জিৎসু ও তাই চি চুয়ানের অনেক প্রতিযোগিতাতে মাঝেমধ্যেই দেখা যায় মেলকে। তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে চলেছেন এই তারকা।

আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার
আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার

দুর্দান্ত আর্নল্ড
শরীরচর্চার যেকোনো তালিকায় আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের নাম থাকবে না, এটা কোনোভাবেই মেনে নেন না সিনেমা দর্শকেরা। অ্যাকশন দৃশ্যের জন্য আর্নল্ডকে একসময় আশপাশের মানুষেরা ‘দ্য অস্ট্রিয়ান ওক’ নামে ডাকত। সিনেমার সব অ্যাকশন দৃশ্যে কোনো ধরনের নিরাপত্তাবেষ্টনী কিংবা ডামি ছাড়াই অনায়াসেই অভিনয় করে যান আর্নল্ড। কমান্ডো সিনেমায় অভিনয়ের সময় মার্শাল আর্টে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সরাসরি কোনো প্রতিযোগিতাতে অংশ না নিলেও আর্নল্ডের প্রশিক্ষক মাইকেল ভেনড্রেলের ধারণা, তিনি দ্বিতীয় শ্রেণির ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়ার যোগ্য। শুধু মার্শাল আর্টই নয়, তায়কোয়ান্দোতেও ভীষণ পারদর্শী আর্নল্ড। অনেক বছর আগেই তায়কোয়ান্দোতে অনারারি প্রথম ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেছিলেন। প্রথম জীবনে বডিবিল্ডার হতে স্বপ্ন দেখতেন বলে আর্নল্ড সব সময়ই শরীর গড়নের দিকে মনোযোগী। সিনেমার ব্যস্ততা কিংবা রাজনীতির টেবিলে সময় দিলেও নিয়মিত জিমনেসিয়ামে পা পড়বেই তাঁর। এখনো সিনেমায় দুর্দান্ত সব অ্যাকশন দৃশ্যে ৭১ বয়সী আর্নল্ড অনায়াসেই অভিনয় করে যান।

দীপিকা
দীপিকা

মার্শাল আর্ট জানেন দীপিকা
নাচ আর দারুণ অভিনয়ের জন্য ভক্তদের কাছে খুব জনপ্রিয় দীপিকা পাড়ুকোন। দীপিকার অনেক ভক্তই চমকে যান, যখন তাঁরা দীপিকার মার্শাল আর্ট দক্ষতার কথা জানতে পারেন। চাঁদনি চক টু চায়না সিনেমায় অভিনয়ের আগে দীপিকা জিউ–জিৎসু শেখেন। সিনেমার দৃশ্যকে বাস্তবের মতো দেখাতে নাকি জাপানিজ এই মার্শাল আর্ট শেখেন দীপিকা।
এরপর ২০১৫ সালে বাজিরাও মাস্তানি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শেখেন তলোয়ার চালানো, ঘোড়দৌড় ও কালারিপায়াত্তু। কালারিপায়াত্তু হচ্ছে ভারতীয় মার্শল আর্টের একটি ধরন। বলিউডে এখনো তেমন অ্যাকশন দৃশ্যের অভিনয়ে ঝলক দেখাতে না পারলেও ব্যক্তিগত জীবনে মার্শাল আর্ট নিয়মিত চর্চা করেন এই তারকা। একসময় বেশ হতাশাগ্রস্ত ছিলেন দীপিকা, সেই হতাশা কাটাতেও মার্শাল আর্টের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে তাঁর।
গ্রন্থনা: জাহিদ হোসাইন খান, সূত্র: র‌্যাঙ্কার ও টাইমস অব ইন্ডিয়া