সাদামাটা জীবন রাঙিয়ে তুলবেন যেভাবে

নতুন বই জীবনে নতুনত্ব নিয়ে আসে। মডেল: আয়েশা, ছবি: অধুনা
নতুন বই জীবনে নতুনত্ব নিয়ে আসে। মডেল: আয়েশা, ছবি: অধুনা

ছুটির দিন আর কাজের দিন—এ ছাড়া যেন আমাদের নাগরিক জীবনে আর কোনো দিন নেই। সারা সপ্তাহ কাজের দিনে কাজ আর কাজ করে পার করে দিই। আবার ছুটির দিনে আগামী সপ্তাহে কী কাজ করব, তা ভাবতে ভাবতে নতুন সপ্তাহে পা রাখছি। ঘড়ির কাঁটা ধরে নিত্যই একটা সাদামাটা জীবন কেটে যাচ্ছে। একসময় ভালো কিছু হবে, এই প্রচেষ্টায় প্রতিদিন একই কাজ নিরসভাবে করে চলেছি। দিন শেষে সময় যে কখন কেটে যাচ্ছে, তার হিসাব কষার সময়ই যেন নেই। সাদামাটা জীবনকে রাঙিয়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। আজকের দিনটিকে যদি আমরা ভালোভাবে কাটাতে পারি, পরিশ্রম করি, তাহলে আমাদের আগামীকাল হয়ে উঠবে আরও সম্ভাবনাময়। সাদামাটা জীবন রাঙানোর জন্য কয়েকটি অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।

প্রতিদিন পড়ুন
শেষ কবে বই হাতে নিয়েছিলেন? বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ আর আমাদের অনেকেরই বইপড়া উচ্ছন্নে যায়। কর্মজীবনে আর কি বই পড়া লাগে আবার! বইপড়ার অভ্যাস নেই বলে কখন যে আমাদের জীবন সাদামাটা হয়ে যায়, তা কি আমরা টের পাই? শিল্প-সাহিত্য কিংবা পেশাজীবনে কাজে লাগে, এমন বই পড়ার অভ্যাস করুন। সকালটা শুরু করুন বই দিয়ে। ‘বই পড়া আসে না আমার’, ‘আর বই পড়তে ইচ্ছে হয় না’, ‘ভালো বই নেই’—এসব কোনো অজুহাত নয়। বই পড়তে কোনো কারণ প্রয়োজন নেই, বই আপনাকে নিত্যনতুন পথ দেখাবেই।

তুষ্টি না পুষ্টি
কথায় বলে, ‘আপনি যা খাচ্ছেন, তা আপনার ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে।’ প্রতিদিনই তিনবেলার আহারে পেটপূর্তি চলে আমাদের। পেটপুরে খাবারে যতটা মনোযোগ, পুষ্টিকর খাবারে যেন ততটা মনোযোগ নেই আমাদের। পুষ্টিকর খাবারে মন সতেজ থাকে, তা আমরা ভুলে যাই। এতটাই খাই যে কখনো কখনো পানি খাওয়ার কথা ভুলে যাই। সাদামাটা জীবন রঙিন করতে সুস্থ শরীরের কোনো বিকল্প নেই। ‘এখন তো বয়স ২০, সামনে ৩০, তারপরে ৪০—তখন দেখা যাবে’, এসব ভুলে যান। এখন থেকেই স্বাস্থ্যের দিকে খুব খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনীয় পুষ্টির দিকে খেয়াল করে প্রতিদিন খাবার গ্রহণ করুন। প্রতিদিন নিয়মিত বিরতিতে পানি পানের অভ্যাস করুন। খাবারের পরে এক বসাতে ৩–৪ গ্লাস পানি না পান করে প্রতি ঘণ্টায় পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ছুটির দিনেই সব বিনোদন নয়
আমরা সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করি কখন যে শুক্রবার বা ছুটির দিন আসবে। ছুটির দিনের অপেক্ষায় পুরো সপ্তাহই নিস্তেজ হয়ে যায়। কাজে কোনো উদ্যমই পান না সারা সপ্তাহে। নিজের উদ্যম বাড়াতে প্রতিদিনই বিনোদনের সুযোগ রাখুন। বিনোদনে মন উৎফুল্ল থাকে। সকালে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস কিংবা অফিস থেকে বাড়িতে ফেরার পথে কোনো শিল্প প্রদর্শনী বা সামাজিক অনুষ্ঠানে পা রাখতে পারেন। অফিসে শেষে বাড়ি ফিরেই টেলিভিশনের সামনে বসার বদভ্যাস এড়িয়ে চলুন। পরিবারকে সময় দিন প্রতিদিন। শুক্রবার সন্তানকে সময় দেবেন, এটা ভুলে যেতে হবে। প্রতিদিনই সন্তানের জন্য সময় রাখুন। কিংবা বাবা-মাকে সময় দিন। ভবিষ্যতে সময় দেওয়ার কথা যাঁরা ভাবছেন, তাঁরা হয়তো ভুলে যান সামনে হয়তো আর সময় না–ও আসতে পারে!

নতুন কিছু শিখুন
ছুটির দিন সারা দিন ঘুম কিংবা সারা সপ্তাহ অফিস অফিস করে পার করে দিই আমরা। নতুন কিছু কি শেখার তেমন সুযোগ পাই আমরা? সাদামাটা জীবন রাঙাতে নিত্যনতুন শেখার অভ্যাস করুন। হাতেকলমে শেখার অভ্যাস করুন। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের কোনো শখ থাকলে তা নতুন করে শিখতে পারেন। ফটোগ্রাফি শিখতে পারেন, ভায়োলিন বা গিটার শিখতে পারেন। নতুন কোনো ভাষাও শিখতে সময় দিন নিজেকে। নিজের জন্য প্রতিদিন সময় রাখুন। নিরস জীবন এড়াতে নিজের জন্য নতুন কিছু শেখার চর্চার করুন।

অন্যের সঙ্গে তুলনা নয়
ফেসবুক মারফতে বন্ধুর ভালো চাকরি কিংবা ঘোরাঘুরির ছবি দেখে মনটা অনেকেরই খারাপ হয়। আবার অন্যের এটা আছে, আমার এটা নেই কেন—খুঁজতে খুঁজতে কখন যে জীবনের অনেকটা সময় পার হয়ে যায়, তা কি আমরা টের পাই? নিজেকে কখনোই অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না। এমনকি সন্তান, পরিবারের সদস্য বা সহকর্মী কাউকেই কখনোই অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না। নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা বা সমালোচনায় আসলে নিজের কাছে আমরা নিজেরা ছোট হই। অন্যকে কখনোই অসম্মান করবেন না। কখনোই সবার এক রকমের যোগ্যতা কিংবা জ্ঞান-বুদ্ধি হয় না। একেকজনের দক্ষতা একেক রকমের। চেষ্টা করুন অন্যদের জীবনের সাফল্যকে নিজের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহের কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে।
সূত্র: কোরা ডাইজেস্ট।