হালে চলে বাইসাইকেল

তরুণদের কাছে বাহন হিসেবে জনপ্রিয় বাইসাইকেল। ছবি: কবির হোসেন
তরুণদের কাছে বাহন হিসেবে জনপ্রিয় বাইসাইকেল। ছবি: কবির হোসেন

ঘুরেফিরে সেই কচ্ছপ-খরগোশের গল্প। দৌড় একসঙ্গে শুরু করে। কিন্তু গন্তব্যে আগে পৌঁছে যায় কচ্ছপ। একই দশা হয়েছে এ জামানার সাইকেল-গাড়িরও। ঢাকায় গাড়ির চেয়ে সাইকেল আগে চলে। যানজটে পড়ে গাড়িরা যখন ঝিমায়, সাইকেলগুলো ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে যায়। এই শহরে গাড়ির গতি ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটারের কম, সাইকেল চলে সাড়ে ১০ কিলোমিটার বেগে। ব্যস্ত এই শহরে শম্বুক গতিতে কে চলতে চায় বলুন! অনেকে এখন তাই স্টিয়ারিং ছেড়ে হ্যান্ডেলবার ধরছেন। স্কুলপড়ুয়া কিশোর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনেকের পছন্দের যান এখন সাইকেল। বলতে পারেন হাল জামানার ক্রেজ এখন সাইকেল। সময় তো বাঁচেই, স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। বলছিলেন ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আনিসুল হক। তিনি রোজ বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে যান সাইকেল চালিয়ে।
মিনিটের পর মিনিট বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে, বাস পেলে পরে বাদুড়ঝোলা হয়ে যানজট ঠেলে অফিস যেতে যেতে পেরেসান অনেকে। এ থেকে রেহাই পেতে দ্বিচক্রযানই সহজ সমাধান। চাকরিজীবী তরুণ-তরুণীদের পছন্দ তাই সাইকেল। বলছিলেন আরিফুর রহমান। সকাল-বিকেল সাইকেলে চড়ে নাখালপাড়ার বাসা থেকে গুলশান অফিসে যাওয়া-আসা করেন।

দলেবলে প্যাডেল মেরে
ছুটির দিনে বন্ধুবান্ধব নিয়ে সাইকেলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন অনেকে। চান প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে। ঢাকা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই গ্রামীণ জনপদের দেখা মেলে। কেরানীগঞ্জ, রূপগঞ্জ, বছিলা, ৩০০ ফুট, দিয়াবাড়ি, বিরুলিয়া এসবই ঢাকার সাইকেলচালকদের ঘোরার প্রিয় জায়গা। বাংলাদেশে সাইক্লিস্টদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিডিসাইক্লিস্টসের তো দু-দুটো আয়োজনই আছে এ নিয়ে। বাইক ফ্রাইডেতে দলে দলে সাইক্লিস্ট পাড়াগাঁ ঘুরতে বেরোয়। যারা একটু জোরে চালায় তাদের জন্য আছে ‘স্যারডে জোশিলা’। আবার ঢাকার বাইরে সাইকেল নিয়ে লং ট্রিপেও যান কেউ কেউ।

নিয়মিত সাইকেল চালালে শরীর ফিট থাকে
নিয়মিত সাইকেল চালালে শরীর ফিট থাকে

সাইকেলের রকমফের
দুই চাকার সহজ এ বাহনটির রকমফের আছে। কেউ চালান মোটা চাকার এমটিবি (মাউন্টেন বাইক), কারও পছন্দ চিকন চাকার বাঁকানো হ্যান্ডেলবারের রোডবাইক। আবার কমিউটিংয়ের জন্য ফিক্সিও বেছে নেন কেউ কেউ। তবে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ সাইকেলচালকই এমটিবি চালান। অথচ আমাদের দেশ প্রায় সবটাই সমতলভূমি। বেশির ভাগ রাস্তাঘাটই সমান। চড়াই-উতরাইয়ের বালাই নেই এখানে। রোডবাইক বা ফিক্সি দিব্যি চলে যায় এখানে। তারপরও লোকে এখানে মাউন্টেন বাইক বেশি চালায়। যে কারণে সাইকেলের দোকানগুলোতে ভূরি ভূরি এমটিবি দেখা যায়। রোডবাইকের দেখা মেলে কালেভদ্রে।
যেখানে পাবেন

নতুন (ব্র্যান্ড নিউ) সাইকেলের শোরুম বলতে একনামে পরিচিত মেঘনা গ্রুপের সাইকেললাইফ এক্সক্লুসিভ। আছে প্রাণ আরএফএল, লায়ন, মাস্টার হুইলস, বাইসাইকেল শপ বিডি। ভেলোস সাইকেললাইফ এক্সক্লুসিভের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। এই সিরিজের লিজিয়ন ও আউটরেজ মডেলের সাইকেলগুলোর কাটতি বেশি। দাম সাড়ে ১৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ২২ হাজার টাকার মধ্যে। সারাসেনের ডুয়াল সাসপেনশনের ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দামের সাইকেলও আছে তাদের শোরুমে, জানালেন সাইকেললাইফ এক্সক্লুসিভের তেজগাঁও শাখার শোরুম ইনচার্জ জন অর্ঘ্য মণ্ডল। মেঘনার তৈরি সাইকেল ইউরোপের বাজারেও রপ্তানি হয়।
দেশে সাইকেলের জনপ্রিয় আরও কিছু ব্র্যান্ড আছে ফিনিক্স, কোর, নেক্রো, ফক্সস্টার। এগুলো সবই লায়ন সাইকেলের। তাদের কাছে ৭ হাজার ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকার সাইকেল আছে। রোডবাইকও আছে তাদের। পাওয়া যায় ফিক্সিও।
ব্র্যান্ড ছাড়াও সাইকেলের বড় বাজার আছে বংশালে। সেখান থেকে আরও কম দামে সাইকেল কেনা যায়। ব্র্যান্ডের বাইকগুলোতে আছে শঙ্কর ধাতুর (অ্যালয়) ব্যবহার, এগুলো ওজনেও হালকা। তাই একটু সামর্থ্যবানদের নজর ব্র্যান্ডের দিকেই।

আগে জেনে নিন
সাইকেল কেনার আগে কিছু বিষয় মনস্থির করে নিতে হবে। সাইকেলটি কী কাজে ব্যবহার করবেন? যদি পাকা রাস্তায় দ্রুত চালানো উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাইলে রোড বাইক। যদি ‘অফ রোডিং’ করতে হয় তাহলে এমটিবি। আর শহরে কমিউটিং করতে হলে সিটি বাইক অথবা কমিউটার হচ্ছে সবচেয়ে ভালো, বললেন বিডিসাইক্লিস্টসের সদস্য তাহমিদুল কবীর । তাঁর মতে, সাইকেলের ফ্রেমের একটা আকার আছে যেটা আমাদের উচ্চতার সঙ্গে সম্পর্কিত। সাইকেল কেনার সময় এটা অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত। সাইকেল কেনার জন্য ভালো বাজেট করলেও সাইকেলের তালা, সেফটি গিয়ারস কেনার ব্যাপারে অনেকে ততটা গুরুত্ব দেন না। সাইকেল ও নিজের সুরক্ষার জন্য লক, হেলমেট ও হ্যান্ড গ্লাভস কেনা উচিত ।

সচেতন থাকুন
আর সাইকেল চালানোর সময় রাস্তার একেবারে বাঁয়ের লেন ধরে চালানো উচিত। ট্রাফিক আইন মানার পরামর্শ দিলেন নিয়মিত কমিউট করেন এমন একাধিক সাইক্লিস্ট। এতে দুর্ঘটনার মাত্রাও কমে আসবে। তবে ঢাকায় সাইকেলকে আরও জনপ্রিয় করতে সাইকেল লেন ও পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।