পাতুরি বেশ

শহুরে জীবনযাপন নিয়ে চারদিকে নানা আলাপ, আধুনিক গ্যাজেটে ভরা বিভিন্ন সুবিধা, ছোট্ট পরিবার আর তার জন্য ছোট্ট স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। এত সব সুবিধা আর আধুনিকতার ভিড়ে কোথায় যেন সহজ-সরল মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনটাই হারিয়ে যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনের অফিসের চক্করে চিংড়ি মালাইকারী, গরুর মাংসের আচার কিংবা সরষে ইলিশটাও তার সঙ্গে জীবন থেকে গায়েব। অত হ্যাপা নেবে কে? তাই পাতুরিই বেশ।
বনানীর রোড ১০ বি, বাড়ি নং ৩–এ পাতুরি। ঢুকতে ঠিক রেস্তোরাঁ রেস্তোরাঁ মনে হয় না। দেখলে মনে হয়, বনেদি কোনো বাড়িতে ঢুকছি। একতলা, দোতলা দুই ফ্লোরেই বসা যায়। রুচিসম্মত ছিমছাম সহজ বসার ব্যবস্থা, খুব একটা আড়ম্বর নেই। তবে দেয়ালে সাঁটানো পেইন্টিংগুলো দেখলে বনেদিয়ানা ভালোই টের পাওয়া যায়। তরুণ বয়সী ছেলেরা আপনাকে দেখেই ছুটে আসবে এবং পছন্দমতো টেবিলে বসিয়ে দেবে। এখন মেন্যু দেখে খাবার পছন্দ করে অর্ডার দেওয়ার পালা। আর তার আগে অবশ্য কড়া ভাজা ঢ্যাঁড়স আর পুদিনাপাতার শরবত চলে আসবে। ব্যাস, ঢ্যাঁড়স আর পুদিনার শরবত খেতে খেতে অর্ডার দিয়ে ফেলুন।

ছিমছাম পাতুরি। ছবি: খালেদ সরকার
ছিমছাম পাতুরি। ছবি: খালেদ সরকার

হঠাৎ দেখবেন নানি-দাদির রসুইঘর ঝাঁপি খুলে বসেছে। নানা পদের ভর্তা, ভেটকি কিংবা চিংড়ির পাতুরি, আইড় মাছের ঝুরি, পাবদা মাছের ঝোল, সরষে ইলিশ, কাটা মসলার গরুর মাংস, বুটের ডাল দিয়ে খাসির মাংস এমন আরও নানা পদ। সমস্যা একটাই, অর্ডার দেওয়ার পর বেশ অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়। একটু বিরক্ত লাগে বটে, তবে খাওয়া টেবিলে আসার পর সব বিরক্তি কেটে যাবে। খাবার মুখে দিলেই বুঝতে পারবেন যে সবগুলো পদই একদম টাটকা রান্না করে পরিবেশন করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতি পদের স্বাদই তার নিজ গুণে আলাদা। মসলা আর রন্ধনপ্রণালির কারণে সেই পুরোনো দিনের স্বাদ মনে করিয়ে দেয় পাতুরির রান্নাগুলো। রেস্তোরাঁতে খেতে আসার কেতাদুরস্ত ভাবটাকে সরিয়ে সেই বাঙালি মধ্যবিত্ত সহজ–সরল জীবনে কিছুক্ষণের জন্য ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তা এই

ছবি: খালেদ সরকার
ছবি: খালেদ সরকার

দুর্মূল্যের বাজারে তাই বা কম–কী! তবে অন্দরসজ্জায় আরেকটু মনোযোগী হওয়া যেত। এই যুগে খাবারের পাশাপাশি দেখাশোনায় ভালো হওয়াটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন, ঢেকুর তুলতে তুলতে একটু ফিরনি কিংবা কুলফির অর্ডারটা দিয়ে ফেলুন। বাঙালি যদি এমন একটা জম্পেশ খাওয়ার পর একটু মিষ্টিমুখ না করে, তাহলে চলে। ফিরনিটার জবাব নেই।
লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক
গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং বাংলাদেশ