ঘুরে এসে ত্বকের যত্ন

ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর শুষ্ক-রুক্ষ, নির্জীব ত্বকের যত্ন নেওয়াও জরুরি হয়ে পড়ে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর শুষ্ক-রুক্ষ, নির্জীব ত্বকের যত্ন নেওয়াও জরুরি হয়ে পড়ে। প্রথম আলো ফাইল ছবি

চলছে অগ্রহায়ণ মাস। ভোরের কুয়াশা আর সন্ধ্যার শীতল বাতাস বলে দিচ্ছে শীত এসে গেছে। শীত শুষ্ক, তবে উৎসবের আমেজে হয়ে ওঠে উষ্ণ। সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শীত পড়তে শুরু করে। এ সময় বেশির ভাগ স্কুলের পরীক্ষা শেষ হয়। ছুটি থাকে শিশুদের। বিয়ের অনুষ্ঠান, দাদা-নানার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া অথবা রীতিগত নানা উৎসবে মেতে ওঠে সবাই।

নগরজীবনে এসেছে শৌখিনতার ছোঁয়া। কেবল আত্মীয়–পরিজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎই এখন মুখ্য নয়, স্রেফ ভ্রমণের নেশায়ও ঢাকা ছাড়েন অনেক মানুষ। সত্যি কথা বলতে কি, এই আধুনিক সময়ে ভ্রমণ ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই শীতের পুরো সময় সুন্দরবন, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা, জাফলং, বিছনাকান্দি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ বিভিন্ন জায়গায় আনাগোনা বাড়ে পর্যটকদের।

ভ্রমণে যাওয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলে প্রস্তুতি। ফিরে এসেও কাজ শেষ হয় না। শীতে সমুদ্র এলাকা বা পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ঘুরে এসে ত্বকের পোড়াভাব কিছুটা ম্লান করে দেয় আনন্দ। প্রফুল্ল মন নিয়ে ফিরে এসে আয়নায় তাকাতেই গম্ভীর হয়ে যাক মুখ।

মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে সেন্টমার্টিন বেড়াতে গিয়েছিলেন কণা। ফিরে এসেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল তাঁর। তবে সাগরতীরে রোদে পুড়ে চেহারার যে হাল হয়েছিল, তা নিয়ে বেশ মন খারাপ হয়েছিল তাঁর। বললেন, শিক্ষাজীবনের এই বিশেষ দিনে চেহারার অবস্থা আসলেই মন খারাপ করে দিয়েছিল।

তাই শুধু ভ্রমণ নিয়ে ভাবলে হয় না, ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর শুষ্ক-রুক্ষ, নির্জীব ত্বকের যত্ন নেওয়াও জরুরি হয়ে পড়ে। আসলে বেড়াতে গেলে ঘরের বাইরে থাকা হয় বেশি। বাইরের রুক্ষ বাতাস, শুষ্ক আবহাওয়া ও লোনা পানি শুষে নেয় ত্বকের নমনীয়তা। শীতের আর্দ্রতা ছেলে বা মেয়ে মানে না; বরং ভ্রমণের পর ছেলেদের ত্বক হয় বেশি রুক্ষ। তাই ঘুরে এসে নিতে হবে সঠিক যত্ন। তা না হলে ত্বকের সমস্যা স্থায়ী হতে পারে।

রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েকটি ধাপে ত্বক পরিচর্যার কথা বললেন তিনি। প্রথমত, ছেলেমেয়ে উভয়কেই সকালে ও রাতে ফেসওয়াশ বা ভালো মানের ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। ক্লিনজার ত্বকে জমে থাকা ময়লাগুলো ভেতর থেকে পরিষ্কার করে, বাইরের স্তরকে কোমল রাখে। ফলে ত্বকে সক্রিয় ভাব ফিরে আসে। ক্ষারধর্মী সাবান দিয়ে মুখ ধোয়া ঠিক নয়, সাবান ত্বককে আরও বেশি শুষ্ক করে ফেলে। ফেসওয়াশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে শৌখিন হওয়ায় ভালো।

দ্বিতীয়ত, ত্বকে স্ক্রাব ৫ থেকে ১০ মিনিট রেখে আলতোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। এতে ত্বকে জমে থাকা ‘ব্ল্যাক হেডস বা হোয়াইট হেডস’ দূর হবে। এ ক্ষেত্রে চালের গুঁড়ো স্ক্রাব হিসেবে ভালো কাজ করবে। তা না হলে বাজারে অনেক ভালো ব্র্যান্ডের স্ক্রাব পাওয়া যায়। ত্বকের ধাঁচ বুঝে তা বেছে নিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তৃতীয়ত, শুষ্ক ও মিশ্র ত্বকের ক্ষেত্রে রোদে পোড়াভাব কমাতে কাঠবাদামের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। তা ত্বকে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শসার রস, টক দই, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে ত্বকে লাগানো যেতে পারে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিতে হবে।

চতুর্থত, ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে, সব ধরনের ত্বকেই চন্দন কাঠের গুঁড়োর সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে ব্যবহার করা যায়। মিশ্রণটি ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিতে হবে। আর প্রতিবার মুখ পরিষ্কারের পর ময়েশ্চারাইজার বা অ্যালোভেরা জেল অবশ্যই লাগাতে হবে। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার ত্বককে কোমল ও মসৃণ রাখে।

আসলে বাইরে বের হলে সব সময়ই ভালো ব্র্যান্ডের ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত বলে জানান রাহিমা সুলতানা।