শহরের বাইরে শীত

চাদরে দেখা যাচ্ছে নানা নকশা। মডেল: প্রেরণা, চাদর: টুয়েলভ, ছবি: নকশা
চাদরে দেখা যাচ্ছে নানা নকশা। মডেল: প্রেরণা, চাদর: টুয়েলভ, ছবি: নকশা

‘ঢাকায় তেমন বোঝা যায় না। কিন্তু আমি বেশির ভাগ সময়ই গ্রামে থাকি। গ্রামে কিন্তু শীত এসে গেছে। শীতে নানা রকম পিঠা বানানো হয় গ্রামে। সেই পিঠা তৈরি, শীতকালের একটা গান করি এবার।’

গত ১৬ নভেম্বর ঢাকার বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে গান গাওয়ার ফাঁকে এভাবেই শীতের জানান দিলেন সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম।

শীত চলে এসেছে ঢাকার বাইরে। রাতে তো বটেই, দিনের বেলাতেও হিম হিম হাওয়া। ট্রাংক থেকে লেপ-কম্বল জায়গা পেয়েছে বিছানার এক পাশে। বদলে গেছে পোশাক-আশাকও। মোটা শাল, সোয়েটার বা উলের জ্যাকেট গায়ে চেপে বাইরে যাচ্ছে লোকজন। দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত প্রথম আলোর প্রতিনিধিরাও জানালেন শীতের আগমনী নানা তথ্য।

সিলেট অঞ্চলে এবার শীত আগে এসেছে। সেখানে পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়েই বাইরে যেতে হচ্ছে লোকজনকে। সিলেট থেকে সুমনকুমার দাশ বললেন, ‘রাতে রীতিমতো লেপ বা কম্বল গায়ে জড়িয়েই ঘুমাতে হচ্ছে। দিনের বেলা শীতপোশাক পরে বাইরে যাচ্ছে লোকজন। সিলেটে এবার মেয়েদের গায়ে বেশি দেখা যাচ্ছে শাল ও কার্ডিগান। ছেলেরা পরছে সোয়েটার, ব্লেজার, জ্যাকেট ইত্যাদি।’

এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা ও বরিশালে রাতে ও ভোরের দিকে শীত পড়ছে। দিনের বেলা খুব একটা ভারী কাপড় লাগছে না। তবে সরগরম সব এলাকার শীতপোশাকের বাজার। ঢাকাতেও একই চিত্র। দিনে শীত না পড়লেও রাতে হিমেল হাওয়া অনুভূত হয়। বিপণিবিতানে ঝুলছে নতুন নকশার শীতপোশাক। দ্রুতই সেসব পৌঁছে যাবে ঢাকার বাইরে।

শীত এখনো জেঁকে বসেনি, তাই হালকা পোশাক পরার পরামর্শ দিচ্ছেন ডিজাইনাররা। ডিজাইনার লিপি খন্দকার বললেন, ‘এখন মোটা কাপড়ের শাল কেউ পরতে চায় না। তাই পাতলা শালে নানা রকম নকশা করা হচ্ছে।’

বাজারে কিছু শাল দেখা গেল উলের তৈরি। শালের ধারণায় নতুনত্ব এনেছে সেগুলো। এ ছাড়া রেশম কাপড়ের শাল, কাশ্মীরি শাল দেখা গেল। দোকানিরা জানালেন, কাশ্মীরি শালের সাধারণত কিছুটা দাম বেশি। তাই এটা সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠানে বা দাওয়াতে গেলে পরতে দেখা যায়। শাড়ি, কামিজ বা টপ—সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই এই শাল পরা যায়।

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ জানালেন, শীত এখনো জেঁকে বসেনি। তবে গরম নেই। দিনের তুলনায় রাতে শীত বেশি। মোটরসাইকেল বা খোলা যানবাহনে চড়লে গরম কাপড় পরেই বেরুতে হচ্ছে লোকজনকে। আর রাতে বিছানায় মোটা কাঁথা বা কম্বল গায়ে জড়াতে হচ্ছে।

রাজশাহী থেকে রংপুরে শীত বেশি বলেই মনে হলো প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুল হকের সঙ্গে কথা বলে। তিনি জানালেন, রংপুরে শীত পড়েছে। ছেলেমেয়েরা বাইরে চলাচল করছে পাতলা চাদর, সোয়েটার পরে। উল ও পশমি কাপড়ের পাতলা স্টাইলিশ শীত পোশাক পরছে মেয়েরা।

কোথায় কিনবেন

ঢাকায় নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, বঙ্গবাজার এলাকায় শীতের পোশাক মিলবে সহজে। চট্টগ্রামে শীতের পোশাক কিনতে চাইলে যেতে পারেন জহুর হকার্স মার্কেট, আগ্রাবাদ এলাকা, সানমার ওশান সিটি, আফমি প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেটে। সিলেটের নয়া সড়ক, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, কুমারপাড়া এলাকায় গেলে চলতি ধারার শীতপোশাক পাবেন। বগুড়ার নিউমার্কেট, আলতাব আলী সুপার মার্কেট, রানার প্লাজা ও জলেশ্বরীতলার বিভিন্ন দোকানে শীতের পোশাক কিনতে যেতে পারেন। খুলনার নিউমার্কেট ও ডাকবাংলার আশপাশের দোকানগুলোতে মিলবে বিচিত্র্ শীতপোশাক।

দাম যেমন

শালের দাম ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। কার্ডিগান পাওয়া যাবে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকায়। কিছুটা লম্বা জ্যাকেট কিনতে চাইলে দাম পড়বে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। ছেলেদের শীতপোশাকের মধ্যে সোয়েটার কেনা যাবে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। জ্যাকেট কেনা যাবে ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় এবং ছেলেদের শাল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায় কিনতে পারবেন।