কাবাবের কারখানায়

এমন ভিন্ন স্বাদের দেখা মিলবে এখােন । ছবি: খালেদ সরকার
এমন ভিন্ন স্বাদের দেখা মিলবে এখােন । ছবি: খালেদ সরকার

রেস্তোরাঁই, তবে নামের সঙ্গে রয়েছে ‘ফ্যাক্টরি’। একটা কৌতূহল কাজ করছিল দ্য গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরির প্রতি। ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে ১৫ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে এই রেস্তোরাঁর তৃতীয় শাখা। সাততলায় উঠে ঢোকার মুখেই ‘গ্রেট’ ভাবটা ধরা পড়ল। নীল আবহে অন্দর আর বাসনকোসন রাজসিক পরিবেশ তৈরি করেছে। এক পাশে উন্মুক্ত রসুইঘর—আধুনিক, বড় পরিসর আর কর্মব্যস্ত। কারখানা বলে কথা।

কাবাবের কারখানাই যখন, তখন কাবাবের ‘সেইরকম’ স্বাদই আশা করছি টেবিলে বসে। এখানেও নীল। টেবিলটা নীল কারুকাজ করা কাচের, গ্লাসও নীল। ইস্পাতের ঘূর্ণমান স্ট্যান্ডে ছোট ছোট ইস্পাতের পাত্রে সস। আগেই জানা, ৪৫০ পদের কাবাব তৈরি হয় এই ফ্যাক্টরিতে। একটু পরেই এল ‘মেন্যু অব দ্য ডে’। এই মেন্যু পূর্ণাঙ্গ ভোজের জন্য।

আমিষভোজীদের জন্য যেমন আছে, তেমনি নিরামিষভোজীদের জন্যও আছে আলাদা ব্যবস্থা। দুই ঘরানাই পূর্ণাঙ্গ। ছয় রকমের কাবার, মূল খাবার, বেশ কয়েক পদের ডাল আর মিষ্টান্ন। আমিষ ঘরানায় মুরগি, খাসি আর মাছের কাবাব—নিরামিষে নানা রকম সবজি। খাবার পরিবেশনের ধরন এখানে টেবিল ব্যুফে। আমিষ কিংবা নিরামিষ, ‘আনলিমিটেড’ খাবার দেওয়া হবে, আর তা টেবিলে এসে পাতে বেড়ে দেবেন রেস্তোরাঁর কর্মীরা। মজার বিষয় হলো, প্রতিদিন মেন্যু বদলে যায়। একেক দিন একেক কাবাব—ফ্যাক্টরি বলে কথা! টেবিল ব্যুফে ছাড়াও আছে ফিক্সড মেন্যু—ছয় পদের কাবাব আর নান।

সেদিন আমিষের দিকেই যাওয়া হলো। প্রথমেই রেস্তোরাঁর সিগনেচার পদ—মাটন গালৌতি কাবাব। ছোট্ট একটা পরোটার ওপরে টিকিয়ার মতো। পরোটা পেঁচিয়ে মুখে দিতেই যেন গলে গেল। এরপর একে একে আসতে থাকে কাবাব। যেটা বেশি ভালো লাগছে, সেটা আরও নেওয়া যাচ্ছে—আনলিমিটেড। তন্দুরি পাখুরি, সামুন্দিরি জলপরি, মাসালা গোলা কাবাব, নারাঙ্গনি মুর্গ টিক্কা, জয়তুনি মাছি টিক্কা।

দ্য গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরির অন্দর
দ্য গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরির অন্দর

আনলিমিটড যেমন মজার, তেমনি এর ঠ্যালাও কম না। কাবাবের পদ চাখতে চাখতেই তো পেট ভরে যাচ্ছে। মূল পদ তখনো বাকি। মাঝে মাঝে হালকা বিরতি। আবার খাওয়া। হায়দরাবাদি গোশত বিরিয়ানি এল মূল খাবার হিসেবে। সঙ্গে ডাল মাখানি, তড়কা। কাবাব ফ্যাক্টরিতে এসে কাবাবই খেতে চাচ্ছি বেশি। তাই বিরিয়ানিটা শুধু চাখাই হলো। আফসোস, একটু বেশি করে যদি বিরিয়ানিটা খাওয়া যেত!

কাবাব মে হাড্ডি কথাটা কেন যেন মনে পড়ছিল। এখানকার কাবাবে হাড্ডি নেই। হাড্ডি কেন, মাংসের আঁশও নেই। তবে হাড্ডি পাওয়া গেল মুরগির ডানা ভাজায়। সেই হাড্ডি, তা বরং বাড়তি যোগ।

দ্য গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরি ভারতভিত্তিক আন্তর্জাতিক চেইন রেস্তোরাঁ। ধানমন্ডির আগে যমুনা ফিউচার পার্ক ও গুলশানে চালু হয়েছে এই রেস্তোরাঁ। ভারতীয় শেফ আছেন কয়েকজন। ফলে ভারতের নানা অঞ্চলের খাবারের অথেনটিক স্বাদটা পাওয়া যায়।

কাবাবের সব মসলা আসে ভারত থেকে। কয়লা, ইলেকট্রিক ওভেন, মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা হয় কাবাব। সে রাতের খাওয়া শেষ হলো কুলফি আইসক্রিম দিয়ে। তারপরও মুখে লেগে রইল সেই সিগনেচার পদ—মাটন গালৌতি কাবাব।