ফিট থাকতে ফাইট লাগে

‘অনেকে অনেক সময় জিজ্ঞাসা করেন, ফিট থাকতে কী লাগে? আমি বলি—ফাইট।’ বললেন উপস্থাপক ও আবৃত্তিকার শারমিন লাকি। নিজেকে ঠিক রাখতে অনেক দিন ধরে সেই ‘ফাইট’, অর্থাৎ যুদ্ধ নিজেও করেছেন তিনি। এই যুদ্ধ মনের সঙ্গে পেটের। ইচ্ছার সঙ্গে চাহিদার। চোখের সামনে এত এত খাবার কিন্তু অনেক দিন ধরেই কিছু ছুঁয়ে দেখতেন না তিনি। সেই কষ্ট সামলানোর চেয়ে বড় যুদ্ধ আর নেই। এখন অবশ্য জিভে জল এলেও সমস্যা হয় না। কারণ, নিজের শরীরকে এমন বসে এনেছেন যে খেলেও তা আর গায়ে লাগে না।

ফিট থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম করেন জনপ্রিয় উপস্থাপক শারমিন লাকি
ফিট থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম করেন জনপ্রিয় উপস্থাপক শারমিন লাকি

তার মানে শারমিন লাকি কি মোটা ছিলেন? জোরালো উত্তর ‘অবশ্যই।’ সন্তান জন্মের পর তাকে সুস্থ রাখতে মাকে বেশি খেতে হয়। শারমিন লাকির বেলাতেও তাই ঘটেছে। ছেলে ইশরাক শায়েরের জন্মর পর বেশ মুটিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ছেলের বয়স চার বছর হওয়ার পর সেটা প্রথম নজরে আসে। তারপর থেকে শুরু হয় লাকির শরীর ফিট করার অভিযান। তাই বলে পরদিন থেকেই খাবার বন্ধ করে দেননি তিনি। বরং খাওয়ার মাত্রা বাড়িয়েছেন! দিনে তিনবারের বদলে খেতে শুরু করেন ৬ থেকে ৭ বার। তবে বদলে যেতে থাকে প্লেটের পদগুলো।

মজার কোরমা, বিরিয়ানি বা থালাভর্তি ভাতের বদলে আসতে থাকে নানা পদের সবজি। শেষ পাতে মিষ্টির বদলে খেতে শুরু করেন নানা রকম ফলমূল। ধৈর্যহারা হননি। শারমিন লাকি বলেন, ‘আমি যখন ওজন কমানোর কথা ভাবি, তখন আমার ওজন ছিল ৭০ কেজির বেশি। খুব দ্রুত না, সময় নিয়ে ওজন কমিয়েছি। ওজন বাড়ার প্রধান দুই কারণ হচ্ছে চিনি ও শর্করা। এই দুই ধরনের খাবারের রাশ টেনে ধরতে পারলেই প্রধান কাজটা হয়ে যাবে। এরপর মনোযোগ দিতে হবে শরীরচর্চায়।’

খেলাধুলা করতে ভালোবাসেন। প্রতিবছর শীত এলে ব্যাডমিন্টন কোর্টে নেমে পড়তেন আগে। এখন অবশ্য খেলাটা কমিয়ে দিয়েছেন শারীরিক অসুবিধার কারণে। তার বদলে হাঁটেন। সকালে ও সন্ধ্যায় বাইরে যাওয়ার সময় না পেলে বাসার মধ্যে অথবা ছাদে হাঁটেন। শারমিন লাকি মনে করেন, সবকিছুর মধ্যে শরীরের জন্য নিজেকে হাসিখুসি রাখাটাও জরুরি। কারণ, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবও মানুষের শরীরে পড়ে।

শুধু ওজন কমালেই তো হবে না, ত্বকে এর প্রভাব যাতে না পড়ে সেই ব্যবস্থাও তো করতে হবে। শারমিন লাকি যেমন গ্রিন টি খান হালকা গরম পানিতে মধু দিয়ে। যার অন্যতম বড় গুণ হলো এটি বয়স প্রতিরোধক। দুপুর বা রাতের খাবারের সঙ্গে নিয়মিত খোসাসহ লেবু খান শারমিন লাকি, যা ডিটক্সের কাজ করে। টেলিভিশনের এই জনপ্রিয় মুখ জানালেন, ‘আমার এখন যে বয়স সেই বয়সের একটি অন্যতম সমস্যা হলো মিডলাইফ ক্রাইসিস। তাই এই সময়ে হাসিখুসি থাকা বেশি জরুরি। নিজেকে সময় দেওয়া, নিজের ইচ্ছেগুলোকে প্রাধান্য দেওয়াটা জরুরি। সেগুলোই চেষ্টা করি খেয়াল রেখে চলতে।’

খুব সকালে উঠেই শারমিন লাকি তাঁর বিশেষভাবে তৈরি গ্রিন টি খেয়ে হাঁটতে বেরিয়ে যান। ঘাম ঝরিয়ে ফিরে এসে টানা ৪০ মিনিট পর সকালের নাশতা করেন। দুপুরের খাবার তালিকায় রাখেন নানা পদের ডাল। দিনের মধ্যে নানা সময়ে তেঁতুলের শরবত অথবা ডাবের পানি খান। মাংস খান না অনেক বছর। তবে নানা রকম মাছ থাকে খাবারের তালিকায়। শরীর ভালো রাখতে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নেন। বছরের ছয় মাস খেলাধুলা আর হাঁটার পরিমাণ ঠিক থাকলেও গরমের ছয় মাস সেটা কমে যায়। তখন খাবারটা বেশি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে অনিয়ম করে নানা কিছুই খান। শারমিন লাকির মায়ের বাসার কাছে একটা হোটেলে ভালো পুরি বানায়। পুরি খেতে মন চাইলে চলে যান সেখানে। এখন শারমিন লাকির ওজন কত? কোনো দ্বিধা ছাড়াই বলে দিলেন, ‘৬০ কেজি। ৬১ কেজি হলেই আমি উঠেপড়ে লাগি। তাই গত ১০ বছরে এর ওপরে ওজন ওঠেনি।’

শারমিন লাকির খাবারের তালিকা

ভোরে ঘুম থেকে উঠেই এক কাপ গ্রিন টি। হালকা গরম পানিতে টি-ব্যাগের সঙ্গে লেবুর রস আর মধু মিশিয়ে তৈরি হয় এই চা।

সকাল

ফলমূল আর লাল চা। দেশি কলা খুব প্রিয়। এ ছাড়া আপেল বা অন্য ফলও খান।

দুপুর

এক কাপ ভাত, শাক, সবজি, ডাল, মাছ। এ ছাড়া ভাতের সঙ্গে টমেটো বা অন্য কোনো চাটনি। সবশেষে এক কাপ খারাপ চা (দুধ চা)।

বিকেল

লাল চা, মেরি বিস্কুট, খেজুর বা নিজের বানানো এক স্লাইস কেক।

রাত

রুটি, সবজি, ডাল, মাংসের ঝোল বা সুজির হালুয়া। মাঝেমধ্যে কম তেলে ভাজা দুটি পরোটা।

দাওয়াতে

কোথাও দাওয়াত থাকলে তখন খুব বেছে খেতে পারেন না। তাই সেখানে টুকটাক যা থাকে তা–ই খান। তবে মাংস এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন বেশি।